শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ‘ভেতরে বাইরে’ মিথ্যাচার, বোধদোয় বিএনপির!

‘ভেতরে বাইরে’ মিথ্যাচার, বোধদোয় বিএনপির!

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: এ কে খন্দকারের বহুল আলোচিত ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ বই নিয়ে প্রথম ক’দিন হইচই করলেও এখন আর এ বিষয়ে রা করছে না বিএনপি।

অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, দেরিতে হলেও বোধদোয় হয়েছে দলটির নেতাদের। তারা বুঝতে পেরেছেন, তুমুল বিতর্কের জন্ম দেওয়া এ কে খন্দকারের বই ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ কেবল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই খাটো করেনি, বরং জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষকের আসনে বসাতে বিএনপি নেতাদের যে দীর্ঘ দিনের যুদ্ধ তা আরো কঠিন করে দিয়েছে।

কারণ ওই বইয়ের ৬০ পৃষ্ঠায় এ কে খন্দকার স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘মেজর জিয়ার ঘোষণাটিকে কোনোভাবেই স্বাধীনতার ঘোষণা বলা চলে না। মেজর জিয়া রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না বা ঘোষণা দেওয়ার মতো উপযুক্ত ব্যক্তিও ছিলেন না। যে ঘোষণা চট্টগ্রাম বেতার থেকে তিনি দিয়েছিলেন ঠিক একই ধরনের একাধিক ঘোষণা ২৬ ও ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম বেতার থেকে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ও ছাত্রনেতাও দিয়েছিলেন, এমন কি বেতারকর্মীরাও একই ধরনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

গত ২ সেপ্টেম্বর এ কে খন্দকারের ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ প্রকাশের পর ৩ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা ৭ দিন এ বইয়ের সব চেয়ে বিতর্কিত অংশ ‘জয় পাকিস্তান’ নিয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন বিএনপি নেতারা। সভা-সমাবেশ, আলোচনা অনুষ্ঠান, সেমিনার এমনকি দোয়া ও মিলাদ মাহফিলেও এ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠাবোধ করেননি দলটির নেতারা। কারণ, তখন পর্যন্ত তারা হয়তো জানতেন না বইটির ৬০ নম্বর পৃষ্ঠায় তাদের নেতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ধুয়ে দেওয়া হয়েছে।

অথচ প্রকাশের ২৪ ঘণ্টার মাথায় বিএনপির সেকেন্ডম্যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বইটির ভূয়সী প্রসংশা করেন। বইটি সম্পূর্ণ না পড়েই এতে সন্নিবেশিত ঘটনা, বক্তব্য, তথ্য ও মতামতকে শতভাগ সত্য বলে আখ্যায়িত করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচবি হাবীব উন নবী খান সোহেলসহ দলটির শীর্ষ নেতারা।

কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ‘জয় পাকিস্তান’ এর পাশাপাশি ‘মেজর জিয়ার ঘোষণাটিকে কোনো অবস্থাতেই স্বাধীনতার ঘোষণা বলা চলে না। মেজর জিয়া রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না বা ঘোষণা দেওয়ার মতো উপযুক্ত লোক ছিলেন না’ সামনে চলে আছে। অধিকন্ত বঙ্গবন্ধু ‘জয় পাকিস্তান’ বলেননি বলে অসংখ্য কিংবদন্তিতুল্য রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও গবেষক বাজি ধরলেও ‘জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা নন’ এ কে খন্দকারের এ বক্তব্যের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কাউকে কথা বলতে শোনা যায়নি।

এর পরই মূলত টনক নড়ে বিএনপি নেতাদের। ফলে খালেদা জিয়ার সপ্তম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে বুধবার ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কে খন্দকারের বই নিয়ে একটি কথাও শোনা যায়নি তাদের মুখে।

বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরেয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ২০ দলীয় জোটের প্রতিবাদ সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবরা বক্তব্য দিলেও একে খন্দকারের বই নিয়ে এদের কেউ কোনো কথা বলেননি।

কেবল বিএনপির পঞ্চম সারির দুই নেতা আবদুস সালাম ও ফজলুল হক মিলন বলেছেন, সত্য কথা বলায় এ কে খন্দকারকে এখন রাজাকার বলা হচ্ছে।

হুট করে এ কে খন্দকারের বই নিয়ে বিএনপির উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়লো কেন সেটি জানার জন্য দলটির একাধিক নেতাকে ফোন দিলে কেউ এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৃহস্পতিবার বাংলানিউজকে বলেন, এ কে খন্দকারের বই ভালো করে না পড়েই দলের পক্ষ থেকে অনেকেই কথা বলেছেন। কিন্তু বইটি সম্পূর্ণ পড়ার পর যখন দেখা গেলো জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়েও বইয়ের লেখক ভিন্ন মত পোষণ করেছেন তখন সেটি এড়িয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম