বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥
ঢাকা: প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ২০ বছর অতিবাহিত হলো। এখনো লক্ষ্য-উদ্দেশের ধারে কাছে নেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। শুধু নিজস্ব কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষিত করতেই যেন উন্মুখ তারা। রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্টদের প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা এযাবত করেনি সংস্থাটি।
সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯৫ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) প্রকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। এর কয়েক বছর পর ১৯৯৯ সালে এটি ইসির রাজস্ব খাতে যুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্নে ইটিআই দু’ধরনের কাজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও একটি উদ্দেশ এখনো অন্ধকারেই থেকে গেছে। কখনো কখনো আলোর মুখ দেখানোর প্রক্রিয়া হাতে নিলেও বিভিন্ন কমিশনের অনীহা ও কর্মকর্তাদের দূরদৃষ্টির অভাবে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।
ইটিআই এর লক্ষ্য ও উদ্দেশের প্রথম অংশে বলা হয়েছে, ‘অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা সার্বিকভাবে নির্ভর করে দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপর। এজন্য নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ-ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।’
দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, ‘এছাড়াও সাধারণ ভোটার, রাজনৈতিক কর্মী, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট এবং নির্বাচন-সংশ্লিষ্টদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও নির্বাচনী কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করা হবে।’
কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজও পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মী, প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট বা সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে কোনো প্রশিক্ষণ বা কর্মশালা করতে পারেনি ইসি। শুধু নিজেদের কর্মকর্তাদের নিয়েই তা আয়োজন করা হয়। এ নিয়েও নানা অনিয়ম প্রতিনিয়তই হচ্ছে। বারবার একই কর্মকর্তাকে একই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে নষ্ট করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এমন ঘটনাও ঘটে যে, কোনো একটি আসনে বা পদে যদি কেউ নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পরেই মৃত্যুবরণ করেন, সেখানে আবার নির্বাচন করতে হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেজন্য আবারও প্রশিক্ষণেরও আয়োজন করা হয়। অর্থাৎ একই নির্বাচনের জন্য দুবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অবস্থা এমন যেন প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ টাকা শেষ করতেই হবে। তাই ঘুরে ফিরে একই কর্মকর্তাদের একই কাজে বারবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
ইসির এমনও কর্মকর্তা আছেন, যারা এই ২০ বছরের চাকরি জীবনে একই বিষয়ে অন্তত ১৫ বার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ট্রেনিং এ আবার ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের লাভ বেশি। একটি কর্মশালায় কোনো সেশন নিলেই ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা পান তারা। ইসির অতিরিক্তি সচিব মোখলেসুর রহমান প্রায় সব ট্রেনিং এ ট্রেইনার হিসেবে থাকেন। শুধু তাই নয়, ট্রেইনার হতে সদা আগ্রহীদের মধ্যে একজন নির্বাচন কমিশনারও রয়েছেন। এ নিয়ে অনেক ক্ষোভও রয়েছে ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের মধ্যে। ইসির সব কর্মকর্তাই এখন ট্রেইনার হিসেবে কর্মশালার সেশন নিতে চান।
তবে কোনো কর্মকর্তা বা নির্বাচন কমিশনারই চান না স্টেকহোল্ডার বা রাজনৈতিক কর্মী, এজেন্ট, প্রার্থীদের নিয়ে কোনো কর্মশালা করতে। অথচ এটি ইটিআই এর একটি অন্যতম বড় লক্ষ্য।
বিগত নির্বাচনগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে বিগত কমিশন প্রশিক্ষণের আয়োজন না করলেও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে সংলাপ করেছিলো। অন্য কোনো কমিশনই করেনি। আর বর্তমান কমিশন সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেছিলো। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে ইসির কোনো কর্মশালা লক্ষ্য করা যায়নি।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বারবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, দলগুলো আমাদের প্রতি আস্থা রাখলে আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু এরপর আর ইসির পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগও নেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো কারো কথা শুনে না। সীমানা নির্ধারণের সময় সংলাপ করেছিলাম। সেটাই ফলপ্রসূ হয়নি। এছাড়া একটা দলের অনেক কর্মী থাকে, তাদের নিয়ে কিভাবে কর্মশালা হবে?
এ বিষয়ে ইসির জনসংযোগ শাখার পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান বলেছেন, ইটিআই’র লক্ষ্য উদ্দেশের একটি অংশ বাস্তবায়িত করা যায়নি। তবে রাজনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। আস্তে আস্তে সবই হবে। আগে দলগুলো আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে চায়নি, নিবন্ধন নিতে চায়নি। এখন তারা আইন মেনেই সব করছে। ভবিষতে তাদের নিয়েও কর্মশালা হবে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম