শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > শাহজালাল দিয়ে স্বর্ণ পাচার ॥ তিন দেশের যাত্রীদের ওপর নজরদারি

শাহজালাল দিয়ে স্বর্ণ পাচার ॥ তিন দেশের যাত্রীদের ওপর নজরদারি

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ পাচারের ঘটনায় তিন দেশের যাত্রীদের ওপর বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। দেশগুলো হলো দুবাই, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর।

এ তিন দেশের দেশি এবং বিদেশি যাত্রীদের ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতিদিনই দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের কাছ থেকে স্বর্ণ উদ্ধার করা হচ্ছে।

গোয়েন্দারা মনে করছেন, এ তিন দেশ থেকে স্বর্ণ বাংলাদেশে এনে পাশ্ববর্তী দেশে পাচার করা হচ্ছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদফতরের উপ-পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও শুল্ক অধিদফতর যে স্বর্ণগুলো উদ্ধার করেছে তা মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর থেকে এসেছে। এ কারণে আমরা এ তিন দেশের যাত্রীদের ওপর গভীর পর্যবেক্ষণ করছি। বিশেষ করে তাদের দেহ, লাগেজ সবকিছুই তল্লাশি করা হচ্ছে।

মুস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, গত শুক্রবারও আমরা দেড় কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করেছি। আটক করা হয়েছে স্বর্ণের বাহক মুহিবুল খানকে। তিনি মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসছিলেন। গত ৬ মাসে তিনি ২৪ বার আসা যাওয়া করেছেন।

শুল্ক কর্তৃপক্ষের যুগ্ম কমিশনার কাজী মুহাম্মদ জিয়াউদ্দীন জানান, দুবাই, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর থেকে আসা যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় প্রতিদিনই স্বর্ণ উদ্ধার করা হচ্ছে। এর কারণ হলো, আমরা এ তিন দেশ থেকে আসা দেশি এবং বিদেশি যাত্রীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখি এবং তাদের লাগেজ স্ক্যানিংসহ তল্লাশি করা হয়।

তিনি বলেন, সৌদি আরব থেকে আসা যাত্রীদের কাছ থেকেও স্বর্ণ পাওয়া যায়, তবে তা অল্প পরিমাণে। সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ পাওয়া যায় এ তিন দেশ থেকে আসা যাত্রীদের কাছ থেকে।

যুগ্ম কমিশনার আরও বলেন, এ তিন দেশ থেকে ফ্লাইট বিমানবন্দরে অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে আমরা তৎপর হয়ে উঠি। বোডিং ব্রিজ পার হয়ে যখন তারা ইমিগ্রেশন কিংবা বেল্টে লাগেজের জন্য অপেক্ষা করেন, তখন থেকে শুরু করে একেবারে স্ক্যানিং করা পর্যন্ত তাদের পিছু নেওয়া হয়। এছাড়াও ওই তিন দেশেও কাস্টমস এবং কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগের সোর্স লাগানো রয়েছে।

বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, তিন দেশের মধ্যে দুবাই এবং মালয়েশিয়া থেকে আসা যাত্রীদের সবচেয়ে বেশি চোখে চোখে রাখা হয়। তবে সিঙ্গাপুর থেকে আসা যাত্রীদের ততোটা পর্যবেক্ষণ করা হয় না।

তিনি বলেন, বিমানবন্দরে এখন সবাই সজাগ। এদিক দিয়ে স্বর্ণ পাচার করা চোরাকারবারিদের জন্য এখন কঠিন বিষয়। এরপরও যে স্বর্ণ পাচার হয়ে যায় না, সেটির গ্যারান্টি দেওয়া যাচ্ছে না। তবে আগের চেয়ে বিমানবন্দর এখন নিরাপদ। যেন বিমানবন্দর স্বর্ণ পাচারের নিরাপদ রুট না হয়, সে ব্যাপারে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত জুলাই ও আগস্ট মাসে স্বর্ণের যে ছোট ছোট চালান এসেছে, তার অধিকাংশই এসেছে দুবাই থেকে। বাকিগুলো এসেছে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে।

শুল্ক গোয়েন্দাদের দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত জুলাই মাসে শাহজালাল বিমানবন্দরে ৮টি স্বর্ণের চালান আটক করা হয়েছে। সবগুলোই এসেছে এ তিন দেশের কোনো না কোনো দেশ থেকে।

গত ২ জুলাই ১ কেজি ২৮৩ গ্রাম স্বর্ণসহ আটক করা হয় একজনকে, ৬ জুলাই প্রায় দেড় কেজিসহ আটক করা হয় একজনকে, ৮ জুলাই দু’টি স্বর্ণের চালান আটক করা হয়। দুই চালানে সাড়ে ৯ কেজির ওপরে স্বর্ণ উদ্ধার করা হয় এবং আটক করা হয় দু’জনকে। ১০ জুলাই ১ কেজির কিছু বেশি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়, এ সময় আটক করা হয় একজনকে। ১২ জুলাই ৯শ’ গ্রাম স্বর্ণসহ আটক করা হয় একজনকে। ২০ জুলাই ৫ কেজি ৮৩১ গ্রাম স্বর্ণসহ আটক করা হয় একজনকে। ২৫ জুলাই ১ কেজির উপরে স্বর্ণ উদ্ধারসহ আটক করা হয় দুজনকে।

আগস্ট মোট ৪টি চালান আটক হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ আগস্ট দেড় কেজি স্বর্ণ, ১৭ আগস্ট দেড় কেজি স্বর্ণ, ২১ আগস্ট ৪ কেজি ২শ’ স্বর্ণ এবং ২২ আগস্ট ৭ কেজি ৩শ’ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় ১ জন করে আটকও হয়েছেন। আটককৃত স্বর্ণের চালানগুলো এসব দেশ থেকেই ঢাকায় আসছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, আগের চেয়ে সবাই বেশি তৎপর হওয়ার কারণে এ চালানগুলো আটক করা সম্ভব হচ্ছে। সবাই তৎপর রয়েছেন। বিশেষ করে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করার ফলে এ চালানগুলো আটক হচ্ছে।