শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > উচ্চশিক্ষা বঞ্চিত হবে ২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী

উচ্চশিক্ষা বঞ্চিত হবে ২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ পেয়েও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী। আর উচ্চ শিক্ষার সুযোগই পাবে না ২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। বুধবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭০ হাজার ২০৬ জন। সে হিসেবে ভর্তির কোন সুযোগ পাবে না জিপিএ-৫ পাওয়া প্রায় ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। ভর্তি প্রতিযোগিতাকে আরও কঠিন করে তুলবে গত বছর ভাল ফল করেও ভর্তির সুযোগ না পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী।

বিভিন্ন শর্তের কারণে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম কিনতে পারবে না পাস করা ২ লাখ ১৮ হাজার ৩৪৯ জন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশের ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৮০টি। মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিংসহ সর্বমোট আসন সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী। এছাড়া ৫৪টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও শতাধিক বেসরকারি পলিটেকনিকে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর ভর্তিরও সুযোগ রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মিলে আসন রয়েছে ৬ লাখ ৪৮ হাজার ২৬৯টি। কিন্তু এবার উত্তীর্ণ হয়েছে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭০ জন শিক্ষার্থী। সে হিসেবে ভর্তির সুযোগ পাবেন না প্রায় আড়াই লাখ। ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবার জিপিএ-৫ থেকে ৪ পেয়েছেন ২ লাখ ৬১ হাজার ৪২৮, জিপিএ-৪ থেকে ৩.৫ পেয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৩১, জিপিএ-৩.৫ থেকে ৩ পেয়েছেন ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৬০। মোট ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৭২১ জন। জিপিএ-৩ এর কম পাওয়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির আবেদনপত্র গ্রহণ করতে পারবে না। অর্থাৎ জিপিএ-৩ এর কম ২ লাখ ১৮ হাজার ৩৪৯ জন।
অন্যদিকে উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন মেডিকেল, বুয়েট বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। ভাল ফল এমনকি জিপিএ-৫ পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সীমিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কলেজে পড়তে হবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় তার মধ্যে সবার পছন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাবিতে আসন রয়েছে ৬২৭০টি। দেশের অন্য খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭৮০টি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি অনুষদের অধীনে ২৫টি বিভাগে ২ হাজার ৪২০টি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ হাজার ৬১৯টি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ৭৫৫টি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৪০টি, ময়মনসিংহের ত্রিশালে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৯৯টি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি ডিসিপ্লিনে ৬০০, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালে ৫৫টি ও রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ২০০, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০০টি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৪৬৫টি আসন রয়েছে। প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে- বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০০২টি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৪৫৮টি, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৪২টি, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০০টি, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি বিভাগে ৫২৭টি, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০০টি, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬০টি, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৭০টি, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৬০টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০টি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭০টি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪১৩টি আসন রয়েছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯১৪টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫০টি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১২টি, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৫০টি ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২৫টি আসন রয়েছে। বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে রয়েছে দু’হাজারের কিছু বেশি আসন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রায় ১ হাজার ৭০০ অনার্স কলেজ রয়েছে। এছাড়া ১৬০০ ডিগ্রি কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সবমিলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ লাখ ২৪ হাজার ৪৬২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় ৪৪ হাজার ৪২৭ জন। এছাড়া দেশের ৭১টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৯০ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। দেশের ৫৪টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও শতাধিক বেসরকারি পলিটেকনিক প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মিলে আসন রয়েছে ৬ লাখ ৪৮ হাজার ২৬৯টি। এ হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১ লাখ শিক্ষার্থী কোথাও ভর্তি হতে পারবে না।
শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, পাসের সংখ্যা নিয়ে কোন বিব্রত বিষয় না। তবে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় অনেকেই ভালো ফল করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিকেল কলেজসহ পছন্দের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবে না। কারণ তাদের অধিকাংশই মুখস্থ বিদ্যা দিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভাল ফল করে। মানবজমিন