শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর বক্তব্যে তোলপাড়, প্রতিবাদ ॥ মন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ

সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর বক্তব্যে তোলপাড়, প্রতিবাদ ॥ মন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ সাংবাদিকদের অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করে বক্তব্য দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। শুক্রবার সিলেটে একটি অনুষ্ঠানে অশ্রাব্য ভাষায় তিনি সাংবাদিকদের আক্রমণ করেন। প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে তার অনুষ্ঠান বর্জন করেন সাংবাদিকরা। ওই অনুষ্ঠানে দেয়া মন্ত্রীর বক্তব্য গতকাল রাত থেকে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠে চারদিকে। সাংবাদিক সমাজসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ প্রতিবাদ ও মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে গতকাল সিলেটের সাংবাদিকরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। মন্ত্রীর পদত্যাগ ও ক্ষমা প্রার্থনার আহবান জানিয়ে সাংবাদিকরা বলেছেন, প্রয়োজনে আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন।

মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি: সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর পদত্যাগ দাবি করেছেন সাংবাদিকরা। গতকাল এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ও মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ এবং কুদ্দুস আফ্রাদসহ চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বগুড়া, দিনাজপুর, যশোর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ এবং কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা বক্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমা প্রার্থনার জন্য মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সৈয়দ মহসিন আলী ধারাবাহিকভাবে সাংবাদিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতি উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেই চলেছেন। তার উচ্চারিত শব্দাবলী, বক্তব্য এবং তার দেহের ভাষায় যার প্রকাশ ঘটেছে তা তার নিজস্ব শিক্ষা, রুচি, রাজনীতি ও পারিবারিক সংস্কৃতিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। একজন মন্ত্রীর নিচু স্তরের এই ধরনের মানসিকতা এবং তার প্রকাশ গোটা সরকার ও মন্ত্রিসভার মর্যাদাকেই হেয় করে। এই মানের কোন মন্ত্রী যে কোনভাবেই সরকারের বা মন্ত্রিসভার মর্যাদা বৃদ্ধি করে না তা নিশ্চয়ই সরকারের শীর্ষ মহলও অনুধাবন করবেন। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সরকারের মর্যাদা রক্ষার স্বার্থেই তার ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে সৈয়দ মহসিন আলী তার বক্তব্যের সময় প্রধানমন্ত্রীই যে তাকে এবং অপর এক মন্ত্রীকে ‘চালিয়ে যেতে বলেছেন’ এ কথা বলার মধ্য দিয়ে তার সাংবাদিক ও গণমাধ্যমবিরোধী অরুচিকর ও অশালীন আচরণের সঙ্গে প্রধামন্ত্রীর নামটিও জড়িয়ে ফেলছেন। এটি আমাদের সবার জন্যই ব্রিবতকর। আমরা নিশ্চিত, প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার সাংবাদিকদের কল্যাণে যখন নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন এবং তার বাস্তবায়ন করছেন, তখন তার মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের অশালীন মন্তব্য ও অশোভন বক্তব্যের কারণে তিনি সেই সব শুভ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেবেন না।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, সামপ্রতিক সময়ে সরকারের কোন কোন মন্ত্রী, এমপি বা নেতার কথাবার্তা ও কাজে এমনটি ধারণা করার সুযোগ রয়েছে যে, তারা সরকারের সঙ্গে গণমাধ্যমের সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়ে কোন বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন করতে চান কিনা।
বিবৃতিতে বলা হয়, কোন সংবাদ মাধ্যমে কোন সংবাদ প্রকাশের কারণে কেউ ক্ষুব্ধ হলে তা নিরসনের বহু পথ খোলা আছে। সেই পথে না গিয়ে সৈয়দ মহসিন আলী যে ভাষায় সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়েছেন তা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। কুরুচিকর মানসিকতার মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী তার অশালীন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সিলেটবাসীকেও সম্পৃক্ত করার কথা বলেছেন। আমরা নিশ্চিত পুণ্যভূমি সিলেটের বিদগ্ধ নাগরিক সমাজ এবং সাধারণ মানুষ এই মন্ত্রীর উস্কানিমূলক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে সিলেটের এবং সারা দেশের সাংবাদিক সমাজের পক্ষেই দাঁড়াবেন। সৈয়দ মহসিন আলীকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সাংবাদিক নেতারা বলেন, প্রবল ক্ষমতাধরদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই এ দেশের সাংবাদিক সমাজ তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিক সমাজ এবং গণমাধ্যম যাতে তাদের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারেন তেমন পরিবেশ বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান সাংবাদিক নেতারা।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’: সাংবাদিকদের সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করায় সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহসিন আলীকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ আখ্যায়িত করে তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সাংবাদিকদের দু’টি সংগঠন। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের উদ্যোগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নেতারা এই দাবি জানান। সমাবেশে সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী বলেন, সমাজকল্যাণমন্ত্রী যেভাবে গালাগাল করেছেন, তাতে এই মন্ত্রিসভাকে সুস্থ মন্ত্রিসভা বলা যায় না। এই মন্ত্রীকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে ও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথা আন্দোলন চলতে থাকবে বলে হুমকি দেন তিনি। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে এই বিক্ষোভ সমাবেশটি হয়। সমাবেশ শেষে সাংবাদিক নেতারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি আশপাশের রাস্তা ঘুরে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
মন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ: এদিকে সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী। শনিবার সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে অশালীন ও আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ার পর রোববার এক বিবৃতিতে তিনি এ দুঃখ প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, শনিবার সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে দেয়া আমার বক্তৃতায় সাংবাদিকদের প্রতি বিরাগভাজনের যে কথাগুলো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে তা আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, আমি কথাগুলো সকল সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলিনি। আমি বিশ্বাস করি সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। এ পেশায় জড়িত মানুষজন সৎ ও নির্ভীক জীবনযাপন করেন।
এই পেশায় সংশ্লিষ্ট অনেক দেশবরণ্য সাংবাদিক আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি বলেন, আমার দেয়া বক্তব্যের শুরুতে মঞ্চে যাবার সময় সামনে উপবিষ্ট কতিপয় সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে ‘টিটকারি’ করছিলেন। আমি ওই সব কথা শুনে সইতে না পেরে হঠাৎ কিছুটা রেগে যাই এবং স্থানীয় কতিপয় সাংবাদিকদের উদ্দেশে কিছু কথা রাগত অবস্থায় বলি। আমার বলা কথাগুলো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়- যা দেখে আমি কষ্টবোধ করছি। মূলত আমার বলা কথাগুলো ছিল কেবল দু’-একজন স্থানীয় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে।
যারা গত কয়েকদিন ধরে আমার বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রকাশ করছিলেন। কিন্তু আমার বলা কথাগুলো থেকে দেশের সাংবাদিকগণ আহত হয়েছেন দেখে আমি ভীষণভাবে ব্যথিত ও কষ্ট পেয়েছি। অনিচ্ছাকৃতভাবে বলা আমার কথাগুলো থেকে যদি সাংবাদিকগণ দুঃখ পেয়ে থাকেন, তবে আমি তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। প্রকৃতপক্ষে সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। এ পেশার প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম, আছি এবং থাকবো। তিনি বলেন, আমার বলা এই বিবৃতিটি থেকে সকলের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম ডেস্ক