শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > মা ছেলের দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত বিএনপি! আসাদ জামান ও সাজ্জাদ বাপ্পী

মা ছেলের দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত বিএনপি! আসাদ জামান ও সাজ্জাদ বাপ্পী

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥

রংপুর থেকে ফিরে: মা মমতাজ শিরিন ভরসা ও ছেলে এমদাদুল হক ভরসার দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি। মা ছেলের দ্বন্দ্বে প্রতিদিনই জেলা ও মহাগর বিএনপির কোনো না কোনো ইউনিটে ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। এতে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে লাঙ্গলের দূর্গে আস্তে আস্তে শেকড় গাঁড়তে থাকা বিএনপিতে।

সম্প্রতি সাত দিনের উত্তরবঙ্গ সফরের শেষ দুই দিন রংপুর শহরে অবস্থানকালে জানা যায়, লাঙ্গলের ঘাঁটি রংপুরে গত ৩৫ বছরে বিএনপির তেমন কোনো অস্তিত্ব ছিল না। তাই স্বভাবতই ছিল না পদ পদবী নিয়ে কোনো অভ্যন্তরীণ কোন্দল।

নব্বইয়ে এরশাদ পতনের পর ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা প্রায় দুই দশক স্থানীয় বিএনপির দায়িত্ব পালন করেন রহিম উদ্দীন ভরসা। কখনো আহ্বায়ক, কখনো সভাপতি হিসেবে দুই দশক দায়িত্ব পালনকালে তিনি রানিংমেট হিসেবে পান- বর্তমান ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবীব উন নবী খান সোহেল এবং রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মো. মোজাফ্ফর হোসেনকে।

স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপির কোনো প্রভাব ও কর্মকাণ্ড না থাকায় রহিম উদ্দীন ভরসা, হাবীব উন নবী খান সোহেল ও মোজাফফর হোসেনের আমলে তেমন কোনো অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা দ্বন্দ্ব দেখেনি রংপুরবাসী।

হালে এসে লাঙ্গনের কর্ণধার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বারংবার ডিগবাজীতে রংপুরে জায়গা করে নেয় বিএনপি। আর এতেই দলটির অভ্যন্তরে পদ পদবী নিয়ে সৃষ্টি হয় নানা রকম দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় সর্বশেষ শামিল হয়েছেন বিখ্যাত ভরসা পরিবারের দুই ব্যক্তি মা মমতাজ শিরিন ভরসা ও ছেলে এমদাদুল হক ভরসা।

তৃণমূল নেতারা জানান, গত ৬ জুন রহিম উদ্দীন ভরসার দ্বিতীয় পক্ষের বড় ছেলে এমদাদুল হক ভরসাকে সভাপতি করে জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণার পর তার (রহিম উদ্দীন ভরসা) তৃতীয় স্ত্রী মমতাজ শিরিন ভরসা কোমর বেঁধে রাস্তায় নামেন। তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্রদলের অনুগত নেতা-কর্মীদের দিয়ে রাজপথে ঝাড়– মিছিল করান শিরিন।

তিনি অভিযোগ করেন, রংপুর বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু তার অনুগতদের দিয়ে একটি পকেট কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটির সঙ্গে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান সভাপতি পদ প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মমতাজ শিরিন ভরসা।

মা হয়ে ছেলের বিরুদ্ধে এমন কঠোর অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই সময় তিনি বলেছিলেন, রাজনীতিতে মা ছেলে বলে কিছু নেই। তাছাড়া সে (এমদাদুল হক ভরসা) আমরা ছেলে নয়।

এদিকে নতুন কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া নেতাদের অভিযোগ, কেন্দ্রের এক প্রভাবশালী নেতার শ্যালক রংপুর বিভাগীয় ছাত্র দলের সহ-সভাপতি মাহফুজ উন নবী ডনের প্রত্যক্ষ মদদে মমতাজ শিরিন ভরসা স্থানীয় বিএনপিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবক দলের গুটিকয়েক বিপথগামীকর্মী ছাড়া শিরিনের সঙ্গে আর কেউ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রত্ব নেই এমন কিছু বেকার, ডিম ব্যবসায়ী, ফল বিক্রেতা, বিবাহিত ও বাবাদের নিয়ে গঠিত ছাত্রদলের কিছু নেতা-কর্মী সম্পদশালী মমতাজ শিরিন ভরসার হয়ে কাজ করছেন। দীর্ঘ দিন দল ক্ষমতায় না থাকায় অনেকদিন আগে ছাত্রত্ব শেষ হওয়া এসব ছাত্র নেতাদের আয়ের একমাত্র উৎস হচ্ছে শিরিনের ফরমায়েশ খাটা। সময় মতো টাকা না দিলে শিরিনকেও তারা কমেতে ছাড়েন না।

তৃণমূল নেতারা জানান, ৬ জুন কমিটি হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই এমদাদুল হক ভরসা ও মমতাজ শিরিন ভরসা গ্রুফের মধ্যে সমাবেশ পাল্টা সমাবেশ, মিছিল পাল্টা মিছিল চলছে। এসব কর্মকাণ্ডে শিরিনের হয়ে মাঠে থাকছেন মাহফুজ উন নবী ডনের অনুসারী ছাত্রনেতা এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কিছু নেতা-কর্মী। অন্যদিকে এমদাদুল হক ভরসার হয়ে মাঠে থাকছেন নতুন কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া নেতাদের অনুসারীরা।

চলতি রমজানে এ পর্যন্ত সদর, পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জসহ যে ক’টি উপজেলায় ইফতার পার্টি হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোতেই ঝামেলা পাকিয়েছেন ছাত্রদল ও যুবদল কর্মীরা। এমদাদুল হক ভরসাকে প্রধান অতিথি করে কোনো ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হলেই সেটি পণ্ড করার সব রকম আয়োজন সম্পন্ন করছেন তারা। এরই মধ্যে কয়েকটি ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে ককটেল ও হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আহত এবং গ্রেফতার হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান সামু বাংলানিউজকে বলেন, রংপুর বিএনপিতে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। যেটুকু সমস্য তা ওই ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের গুটিকয়েক বিপথগামী কর্মীদের নিয়ে। যাদেরকে পেট্রনাইজ করছেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মমতাজ শিরিন ভরসা। আশা করছি এ সমস্যাটাও অচিরে সমাধান হয়ে যাবে।