সোমবার , ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ , ২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ , ৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > নিজেকে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান দাবি তারেক সাঈদের

নিজেকে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান দাবি তারেক সাঈদের

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার র‌্যাব-১১-এর চাকুরিচ্যুত অধিনায়ক অবসরে পাঠানো লে. কর্নেল তারেক সাঈদ নিজেকে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হিসেবে দাবি করে বলেছেন, আমি টাকার জন্য এ চাকরি করিনি।

সম্মানের জন্যই চাকরি করেছি। কিন্তু আমাদের ললাটে কলঙ্ক এঁটে দেওয়া হচ্ছে।

শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলামের আদালতে রিমান্ড শুনানির সময়ে তারেক সাঈদ এ দাবি করেন।

সাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তৃতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ওসি মামুনুর রশিদ মন্ডল।

শুনানি শেষে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তারেক সাঈদের সঙ্গে র‌্যাবের চাকরিচ্যুত অবসরে পাঠানো মেজর আরিফ হোসেন উপস্থিত থাকলেও তিনি কোনো কথা বলেননি।

রিমান্ড শুনানিতে রিমান্ডের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ অনেক যুক্তি তুলে ধরলেও আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। শুনানিতে তারেক সাঈদ একাই বক্তব্য রাখেন।

শুনানি চলাকালে রিমান্ডে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো আপত্তি নেই জানিয়ে তারেক সাঈদ বলেন, আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেন। আমার বাবা একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। সেই সূত্র ধরেই আমি সেনাবাহিনীতে ছিলাম। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা ধনী। টাকা-পয়সার জন্য আমরা এ চাকরিতে আসিনি। শুধুমাত্র সম্মানের জন্য চাকরি করছি।

তিনি অভিযোগ করেন, আমাদের বিরুদ্ধে এখন নানা ধরনের কথা বলা হচ্ছে।

রিমান্ড শুনানিতে আরিফ হোসেন ছিলেন বেশ বিমর্ষ। তিনি কোনো কথা বলার আগ্রহ দেখাননি।

সাত হত্যাকাণ্ডের পর র‌্যাবের বিরুদ্ধে ৬ কোটি টাকায় খুনের অভিযোগ তোলেন নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলামসহ অন্যরা।

শুনানির সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফুজ্জামান বলেন, নূর হোসেনের টাকায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে র‌্যাব। এ দুই কর্মকর্তার সঙ্গে নূর হোসেনের ভালো সম্পর্ক ছিল। এজন্য আরো তথ্য জানতে সাতদিন করে রিমান্ড প্রয়োজন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র‌্যাবের সদস্যরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।

রিমান্ড শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষে পুলিশ ও আইনজীবীরা বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। এ সময় আইনজীবী ও এপিপি ফজলুর রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনসহ অন্তত ২৫ জন অংশ নেন।

তারা আদালতকে জানান, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত যেসব দড়ি ও বস্তা ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর র‌্যাবের কাজে ব্যবহৃত। এ ঘটনায় র‌্যাব সম্পৃক্ত। সুতরাং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাবকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। তাছাড়া র‌্যাবে চাকরি পাওয়ার পর থেকেই র‌্যাবের কর্মকর্তারা ভূমি দস্যুতাসহ টাকার বিনিময়ে মানুষ হত্যা ও গুম করে আসছে।

এর মধ্যে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন, যেখানে স্পষ্ট বলা হয়, র‌্যাবের লোকজন অপহরণ ও পরবর্তীতে খুনের ঘটনায় জড়িত।

এর আগে সাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্যানেল মেয়র নজরুলসহ পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনার মামলায় তারেক সাঈদ ও আরিফ হোসেনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আট দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

গত ২২ মে তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়। সাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত ১৬ মে দিনগত রাতে ঢাকার সেনানিবাস থেকে এ দুইজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ১৭ মে তাদের দুইজনকে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়। সেদিন শুনানি শেষে আদালত পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে একসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিম অপহৃত হন।

পরদিন ২৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নজরুল ইসলামের স্ত্রী। কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান করে মামলায় আসামি করা হয় মোট ১২ জনকে।

গত ৩০ এপ্রিল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জন এবং ১ মে সকালে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত সবারই হাত-পা বাঁধা ছিল। পেটে ছিল আঘাতের চিহ্ন। প্রতিটি লাশ ইটভর্তি দুটি করে বস্তা বেঁধে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র‌্যাব-১১ এর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করেন নিহত প্যানেল মেয়র নজরুলের পরিবারের সদস্যরা।

প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের শ্বশুর অভিযোগ করেন, ৬ কোটি টাকার বিনিময়ে র‌্যাবকে দিয়ে ওই সাতজনকে হত্যা করিয়েছেন নূর হোসেন। এর পর থেকেই তিনি পলাতক।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র‌্যাব-১১ এর কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করেন নিহত প্যানেল মেয়র নজরুলের পরিবারের সদস্যরা।

এ অভিযোগের পর গত ৬ মে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ, সাবেক অধিনায়ক মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম