শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > শীর্ষ খবর > মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন না পোশাকের বিদেশি ক্রেতারা

মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন না পোশাকের বিদেশি ক্রেতারা

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের রানা প্লাজার ভবন ধসে ভাগ্যের চাকা খুলে গেল -ভারতীয়রা এমনটিই মনে করেছিল। বাংলাদেশের এ ট্র্যাজিডি তাদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছিল।

কিন্তু না, ভারতীয়দের ভাগ্য যারা ঘোরাবেন তারা এখনও বাংলাদেশের ওপর আস্থাবান। বাংলাদেশ এখনও তাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে। শুধু ভারত নয়, শ্রীলঙ্গা, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়াও ভেবেছিলে তাদের দরজায় কড়া নাড়বে বিদেশি বিক্রেতা কোম্পানিগুলো।

ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের তিরুপুর পোশাক তৈরির কেন্দ্রবিন্দু। পোশাক রফতানি করে প্রতি বছর দুইশ কোটি টাকার ওপর আয় করে তিরুপুর। এজন্য তিরুপুরের অপর নাম হয়েছে ‘ডলার সিটি’।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও কারখানা কর্তৃপরে সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। রয়টার্স জানতে চেয়েছে, বিদেশি কোম্পানিগুলো থেকে তারা কাজের অর্ডার পেয়েছে কিনা।

উত্তরে কর্তৃপ জানায়, তাদের দরজায় এখনও কড়া নাড়েনি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো। আর নাড়বেই বা কেন-এশিয়ার দেশ হলেও তো আর বাংলাদেশের মতো সস্তায় পাওয়া যাবে না পোশাক।

এটিকেই বাংলাদেশের অবস্থান অটুট রাখার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ভারতভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টেকনোপ্যাক অ্যাডভাইজারসের চেয়ারম্যান অরবিন্দ সিংহাল। তিনি বলেন, “কারণ বাংলাদেশ পোশাক খাতে জিরো থেকে হিরো হয়েছে কেননা এতো সস্তা শ্রমিক ও কম ব্যয় কোনো দেশে নেই।”

তিনি আরও বলেন, “কোনো ক্রেতা বাংলাদেশে থেকে চলে যাওয়ার জন্য তড়িঘড়ি করছেন না কেননা দাম বাড়ার চাপ ক্রেতাদের ওপর বর্তাতে হবে পশ্চিমা খুচরা বিক্রেতাদের। এখনও বাংলাদেশের কোনো বিকল্প নেই।”
তিরুপুরভিত্তিক পোশাক কারখানা ইসটির মালিক এন থিরুক্কুমারান। গত বছর ৮৩ লাখ ডলার সমপরিমাণ পোশাক বিক্রি করেছিলেন থিরুক্কুমারান।

তিনি জানান, বাংলাদেশ ছেড়ে দিয়ে পোশাক তৈরির অর্ডারের বিষয়ে আলোচনা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের একটি খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি।

তিনি বলেন, “ক্রেতাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া হয়েছে তবে তারা এখনও দাম নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন।”
বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের গড়ে ন্যূনতম মাসিক বেতন মাত্র ৩৮ মার্কিন ডলার সেখানে ভারতে তা গড়ে ১০০ মার্কিন ডলার।

ইন্দোনেশিয়ার স্রি রাজেকি ইসমান পিটি (স্রিটেক্স) জারা ও এইচঅ্যান্ডএমসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক তৈরি করে। বাংলাদেশে উৎপাদন কমিয়ে ইন্দোনেশিয়া উৎপাদন করা নিয়ে এইচঅ্যান্ডএমের সঙ্গে আলোচনা স্রিটেক্স। তবে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি এইচঅ্যান্ডএম।

এশীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশের কারখানা মালিকেদের উপলব্ধি, বিদেশিরা বাংলাদেশে যত সহজে পোশাক তৈরির অর্ডার দেয় এশিয়ার অন্য দেশে তত সহজে তা করতে পারে না। বাংলাদেশের তুলনায় অন্যান্য দেশে অনুবাদকদেরও দিতে হয় প্রচুর অর্থ।

ভিয়েতনামের সাইগন ২ গার্মেন্ট জেএসসির ডেপুটি ডিরেক্টর এনগুয়েন হু তোন জানান, বাংলাদেশে পোশাক তৈরির ব্যয় খুবই প্রতিযোগিতামূলক, ভিয়েতনামের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ কম।

ওয়াল-মার্ট স্টোর ইনকরপোরেশন বাংলাদেশে তার উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। দণি এশিয়ার দেশটিকে গুরুত্বপূর্ণ উৎসের বাজার হিসেবে আখ্যায়িত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ওয়াল-মার্ট । বাংলাদেশের বিকল্প খুঁজে পায়নি সুইডিশ এইচঅ্যান্ডএম।

এইচঅ্যান্ডএমের মুখপাত্র এলিন হ্যালেরবাই বলেন, “বাংলাদেশ থেকে আমরা ক্রয় কমিয়ে দিচ্ছি না। আমাদের সরবরাহকারীদের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদি সম্পর্ক রাখতে চাই আমরা।”

বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনে যুক্তরাজ্যের প্রাইমার্ক, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার, মাদারকেয়ার, টেসকো, নেদারল্যান্ডেসের জি-স্টার, ইতালির বেনেটন, জার্মানির সিঅ্যান্ডএ, কিক, সুইডেনের এইচঅ্যান্ডএম, স্পেনের ইন্ডিটেক্স, ম্যাংগো, কানাডার লোব্ল, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল-মার্ট, গ্যাপ, কেলভিন কেইন, অস্ট্রেলিয়ার রিভারস, কোলস ও কেমার্টসহ বিভিন্ন নামদামী আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড।

সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের জুনে পোশাক রফতানি বেড়েছে ২২০ কোটি ডলার সমপরিমাণ।

বাংলাদেশের পোশাক খাতে চার লাখের বেশি শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে যাদের অধিকাংশই নারী। সস্তায় শ্রমিক সহজলভ্য হয়ে বাংলাদেশে এ শিল্পের দ্রুত বিকাশ হয়েছে। পোশাক রফতানিতে চীনের পরেই নিজের অবস্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ।

গত এপ্রিলে রাজধানী ঢাকার অদূরে রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১২৯ জন নিহত হয়। আটতলা ওই ভবনের তিনটি তলায় ৪টি পোশাক কারখানা ছিল।

নিয়মবহির্ভূতভাবে তৈরি করা ওই ভবন ধসের ঘটনায় পোশাক শ্রমিকদের কাজের নিরাপত্তা ইস্যুটি নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বারবার বলা হয়, পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কাজের নিরাপত্তা ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে। অবশেষে গত জুনের শেষে দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশের অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশ সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নও এ নিয়ে বাংলাদেশে শ্রম আইন সংশোধনের জন্য বলেছে।