শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > বিএনপি দেশের ইতিহাস বিকৃত করছে : শেখ হাসিনা

বিএনপি দেশের ইতিহাস বিকৃত করছে : শেখ হাসিনা

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি২৪ ডেস্ক ॥ বিএনপি স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, কিছু অর্বাচীন উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইতিহাস বিকৃত করছে। স্বাধীনতার পর থেকেই এ ধারা শুরু করে তারা। তারা ইতিহাসকে বিকৃত করেছে, কখনো ঘোষণা (স্বাধীনতার) নিয়ে, কখনো অন্যভাবে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক তুলে এখন আবার বিএনপি দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নিয়ে বিতর্ক তুলছে। তারা (বিএনপি) এখন ফর্মুলা পাল্টিয়েছে। এতদিন বলেছেন, জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক, এখন বলছেন প্রথম রাষ্ট্রপতি। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানই বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল সরকার গঠন ও ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার শপথ নেয়। আর জিয়াউর রহমান তখন মুজিবনগর সরকারের অধীনে ৪০০ টাকা বেতনে চাকরি করতেন। এসব ইতিহাস সবার জানা উচিত।

শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, কেউ স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে ইয়াহিয়া খান তাকে গ্রেফতার করল না কেন? ইয়াহিয়া তো বঙ্গবন্ধুকেই গ্রেফতার করল। ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের শত্রু হিসেবে ঘোষণা করে। আর তো কারও নাম নেয়নি। জিয়া আসলে নামেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু জিয়াকে প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল করেছেন। অথচ সে-ই গাদ্দারি করল, মুনাফেকি করল। পঁচাত্তরের পর অবৈধ উপায়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানালো, আবদুল আলিমকে মন্ত্রী বানালো, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন করলো। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক হলে কীভাবে তিনি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে ক্ষমতায় বসান।

শেখ হাসিনা বলেন, এতদিন ঘোষক নিয়ে ছিল, এখন তো ঘোষক থেকে রাষ্ট্রপতি বানিয়ে ফেলল। সিআইএসহ বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা, দেশি-বিদেশি পত্রপত্রিকা সব জায়গাতেই আছে ২৬ মার্চ কে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, যে ৪০০ টাকা বেতনে মুজিবনগর সরকারের অধীনে চাকরি করত, সে নাকি প্রথম রাষ্ট্রপতি। এ সময় তারেক জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, লন্ডনে বসে একটু পড়ালেখা করতে পারতো। বিদেশে থাকলে তো একটু পড়াশোনা করার কথা। তিনি বলেন, বিএনপির জন্মই অবৈধ ও অসাংবিধানিক উপায়ে। যাদের জন্মটাতেই সমস্যা, তারা তো বেসামাল বলবেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগণতান্ত্রিক সরকার আনার ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো সক্রিয়। অনির্বাচিত কাউকে ক্ষমতায় আনতেই একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী উপজেলা নির্বাচন নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সহিংসতার সংবাদ প্রচার করছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দেশি-বিদেশি চাপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক প্রেসার ছিল। আমিও তো বঙ্গবন্ধু মুজিবের সন্তান। আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথা নিচু করব না। কেউ এত চাপ সহ্য করতে পারতো কিনা জানি না। লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অগ্নিশিখা নিয়ে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে যাবে। এই যে শিখা প্রজ্বলিত হলো, কেউ তা নেভাতে পারবে না। উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কারচুপি করেনি জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যদি কারচুপি করতো জামায়াতকে একটা চেয়ারম্যান পদেও জিততে দিত না। অথচ তারা বিভিন্ন জায়গায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছে। এ সময় উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলগতভাবে করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, কারা কেন্দ্র দখল করেছে, টাকা ছিটিয়েছে, জাল ভোট করেছে একদিন তা প্রকাশ পাবে। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। ক্ষমতায় থাকায় অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন প্রথম ধাপে। বসতে বলা হলেও তারা তা না শুনে বরং বলেছে বিজয়ী হয়ে আপার গলায় বিজয়ের মালা দেব। আমার এলাকায়ও প্রার্থী ছিল ৬ জন। এগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখি, আমাদের ভোট বেশি কিন্তু সিট কম। পরের ধাপগুলোতে আমরা একক প্রার্থী দেওয়ার ব্যবস্থা করি। তাতে বেশি সিটে আমাদের জয় আসে। তখন পত্র-পত্রিকায় লেখা শুরু হলো অন্য কথা। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, উপজেলা নির্বাচনে আমাদের পরাজয়ের মূল কারণ হচ্ছে নিজেদের মধ্যে অনৈক্য। বিদ্রোহী প্রার্থী বসাতে না পারায় প্রথম দুই পর্বের ফলাফল খারাপ করেছি। পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেওয়ায় এখন বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগ ভোট কারচুপি করছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘৭১ এর পরাজিত শক্তিরা এখনো ষড়যন্ত্র করছে। তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে আমাদের বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে একত্রিত হতে হবে। সুশীল সমাজের সমালোচনা করে তিনি বলেন, একটি চক্র আছেন, তারা যা বলেন তা বিশ্বাস করেন না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাচনে প্রথম, দ্বিতীয় ধাপে ফলাফল খারাপ করায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। প্রার্থী মনোনয়নে একক প্রার্থী নিশ্চিত করায় যখন ফলাফল ভালো করছে তখন কারচুপির অভিযোগ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আগামীতেও হবে। তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ। দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল সভা পরিচালনা করেন। বেঙ্গলিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম