শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > লাইফস্টাইল > যে প্রেমগুলোকে আমাদের সমাজ নিষিদ্ধ বলছে

যে প্রেমগুলোকে আমাদের সমাজ নিষিদ্ধ বলছে

শেয়ার করুন

লাইপস্টাইল ডেস্ক ॥ একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে মনের টানে গড়ে ওঠে যে সম্পর্ক, তা হলো প্রেম। কোনো সময় এ সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়ায়। মানবতা প্রেম আখ্যা দিয়েছে একটি মহান সম্পর্ক হিসেবে। কিন্তু সমাজ বলে ভিন্ন কথা। আমাদের সমাজে প্রেমকে দেখা হয় নেতিবাচক দৃষ্টিতে। প্রেমের গভীরতা যতই হোক না কেন, তা আজও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারেনি। বিশেষ করে, কিছু ভিন্নধর্মী প্রেমকে আমাদের সমাজ দিয়েছে নিষিদ্ধ রূপ। আসুন, জানি এমন কিছু প্রেমের সম্পর্কের কথা।

ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে প্রেম:

ভালোবাসা মানে না কোনো বাধা। তাই মাঝেমধ্যেই প্রেম ছাড়িয়ে যায় ধর্মের গণ্ডিকেও। দুজন ভিন্ন ধর্মের মানুষ জড়িয়ে পড়ে প্রেমের সম্পর্কে। মানুষ তো মানুষই, তা যেই ধর্মেরই হোক না কেন! এবং এ ব্যাপারটিই কাজ করে দু ধর্মের মানুষের প্রেমের ক্ষেত্রে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এটা কোনো ব্যাপার না হলেও এমন প্রেম আমাদের সমাজ অনুমোদন করে না। শুধু সমাজই নয়, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সকলেই বাধা দিয়ে থাকেন দুই ধর্মের দুটি মানুষের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে।

প্রেমিকা যখন বয়সে বড়:

হিসাব-নিকাষ করে আসলে প্রেম হয় না। তাই বয়সের হিসাবটাও মাঝে মাঝে বাদ পড়ে যায় প্রেমের সম্পর্কে। বয়সে ছোট কোনো ছেলেকে দেখা যায় বয়সে বড় কোনো মেয়ের প্রেমে পড়তে। এই অসম বয়সের প্রেমও আমাদের সমাজ নিষিদ্ধ বলে আখ্যায়িত করে। প্রেমিকযুগলকে যেতে হয় বিভিন্ন বিব্রতকর ও দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। সমবয়সী নারী-পুরুষের প্রেম তো হরহামেশাই দেখা যায়, বর্তমানে বেশি বয়সী নারী ও কম বয়সী পুরুষের মধ্য প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে প্রায়শই। যদিও তা উদাহরণ দেয়ার মতো সংখ্যায় বেশি নয়, তবুও তো দেখা যাচ্ছে!

মধ্য বয়সে প্রেম :

অনেক নারী ও পুরুষ রয়েছেন, যাঁরা অনেক বয়স হয়ে গেলেও বিভিন্ন কারণে বিয়ে না সমাজে বসবাস করছেন। পুরুষদের ব্যাপারে সমাজ অতটা মাথা না ঘামালেও নারীদের প্রতিনিয়ত হতে হয় অসংখ্য প্রশ্নের সম্মুখীন। নারী ও পুরুষ উভয়কেই মুখোমুখি হতে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতির। এহেন অবস্থায় যদি মধ্য বয়সী কোনো নারী বা পুরুষ প্রেমে পড়ে যায়, তাতেও রয়েছে সমাজের চোখ রাঙানি। এই বয়সে এসে প্রেমকে যেন নিষিদ্ধই ঘোষণা করা হয় নারী-পুরুষদের জন্য। অথচ এটা মোটেও খারাপ কিছু না। বরং মানুষটি নতুন করে তাঁর জীবন আবার শুরু করতে পারে। আমাদের সামাজিক অবস্থাটা এমন যে, মধ্য বয়সের প্রেমকে স্বীকৃতি তো দেয়াই হয় না, বরং দেখা হয় নেতিবাচক দৃষ্টিতে আরো শোনানো হয় কটু কথার ফুলঝুরি।

পরকীয়া :

কী পাশ্চাত্য কী প্রাচ্য, পরকীয়া প্রেম সব সমাজেই নিষিদ্ধ একটি সম্পর্ক। এটা এমন একটি সম্পর্ক যা কখনোই শুভ ফল বয়ে নিয়ে আসে না। পরকীয়ায় মানুষ বিভিন্ন কারণে জড়িয়ে থাকে। কখনো এর পেছনে কাজ করে বিবাহিত জীবনে অসুখী হওয়াটা, কখনো কাজ করে শুধুই ভালো লাগা, আবার কখনো কাজ করে শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা। সংসারে ভাঙ্গন, অশান্তি, নৈতিক অবনতি – এ সব কিছুর পেছনেই দায়ী থাকে পরকীয়া নামক সর্বনাশা প্রেমের সম্পর্ক। পরকীয়ায় জড়িয়ে গেলে সামাজিক ভাবেও হেনস্থা হতে হয় মানুষটিকে। মোট কথা, সামাজিক ভাবে নিষিদ্ধ প্রেম পরকীয়া জীবনে শুধু দুর্ভোগই নিয়ে আসে।

ডিভোর্সের পরে প্রেম :

একজন মানুষের বিয়েটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। এই বিয়েও ভেঙে যেতে পারে নানাবিধ কারণে।

বিয়ে যদিও ঠুনকো কোনো বন্ধন নয়, তবুও মতের অমিল, কলহ, মূল্যবোধের পার্থক্য অথবা যেকোনো কারণে বিয়ের মতো একটি সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর সেই মানুষটি আবার প্রেমে পড়তেই পারে, এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু আমাদের সমাজে ডিভোর্সড মানুষের প্রেমকে স্বাভাবিক ভাবে নেয়া হয় না। তাঁদের প্রেমে পড়াটা যেন নিষিদ্ধ একটা কাজ করা! বিয়ে ভেঙে যাবার পর আবার সম্পর্কে জড়ালে সইতে হয় হাজারো লাঞ্ছনা-গঞ্জনা। এমনকি চরিত্র নিয়েও শুনতে হয় নানান কটু কথা। সমাজ তাঁকে বিবেচনা করা অপরাধী হিসেবে।

আত্মীয়ের সাথে প্রেম :

আত্মীয় কারো সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠাটা আমাদের সমাজে খুবই প্রচলিত। খালত, মামাত, চাচাত, ফুফাত ভাই-বোনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠতে দেখা যায় প্রায়ই। কিন্তু আত্মীয়টি যদি হয় মামা, চাচা, ফুফু বা খালা, তাহলে? আপন নয়, দূর সম্পর্কের এমন আত্মীয়তা থাকলেও এমন প্রেমের সম্পর্কে আমাদের সমাজে রয়েছে বিশেষ নিষেধাজ্ঞা। সম্পর্ক যত দূরেরই হোক না কেন, সম্বোধনটাকে গুরুত্ব দেয়া হয় এখানে সবচেয়ে বেশি। মনে করুন, চাচাত বোনের খালা শ্বাশুড়ির ছোট ভাই বা বোনকে আপনি ডাকবেন মামা বা খালা। বহু দূরের সম্পর্ক, তবুও এমন কাউকে পছন্দ করে ফেললে আপনার কপালে রয়েছে খারাবি। কারণ শুধুমাত্রা মামা বা খালা ডাকের জন্য মানুষটির সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে সমাজ আপনাকে বাধা দেবে। সেই সাথে বাধা দেবে পরিবারও।