স্টাফ রিপোর্টার ॥ কঠিন সময় তার জীবনে নতুন কিছু নয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মর্মান্তিক তিরোধানের পর অনেকটা বাধ্য হয়েই রাজনীতিতে আসতে হয়েছিল তাকে। তিন দশকের রাজনীতির ক্যারিয়ারে ঝঞ্চা-বিুদ্ধ পথ পাড়ি দিয়েছেন বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অনমনীয় ভূমিকা তাকে দিয়েছিল আপসহীন নেত্রীর খেতাব। এরপর কখনও প্রধানমন্ত্রী অথবা কখনও বিরোধীদলীয় নেত্রীর আসনে বসেছেন তিনি। তবে ২০০৭ সালের এক-এগারো খালেদা জিয়ার জীবনে যে বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসে তার ধকল এখনও পোহাতে হচ্ছে তাকে। সেনা সমর্থিত সরকারের রোশানলে পড়তে হয়েছে তার পুরো পরিবারকেই। বড় ছেলে তারেক রহমানকে সইতে হয়েছে নির্মম নির্যাতন। যিনি প্রায় পাঁচ বছর ধরে অবস্থান করছেন বৃটেনে। ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকেও দেশের বাইরে। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে বিশেষ কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়ার সঙ্গেও সমঝোতার চেষ্টা করেছিল জরুরি সরকার। যেখানে জেনারেল এটিএম আমিনের ঔদ্ধৌত্বপূর্ণ আচরন ুদ্ধ করেছিল তাকে। নানামুখী চাপে নবম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও বিপর্যয় কাটাতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপারসন। ভূমিধস পরাজয়ের মুখোমুখী হতে হয়েছে তার দল এবং জোটকে। এরপরের ইতিহাস তার জন্য আরও দুঃখজনক। স্বামীর স্মৃতি বিজড়িত মইনুল রোডের বাড়ি হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন খালেদা জিয়া। যে দৃশ্য আসলেই বিরল। রাজপথের আন্দোলনে কখনও দাঁড়াতেই পারেনি বিএনপি। তবে সর্বশেষ পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্বস্তির হাসি ফুটিয়েছে খালেদা জিয়ার মুখে। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হয়েছেন পাঁচটি নির্বাচনেই। তবে ঘড়ির কাটা ঘুরছে দ্রুত। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৪শে অক্টোবর ভেঙ্গে যাবে নবম সংসদ। যদি প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্টকে সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পরামর্শ দেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারির মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে সে নির্বাচন। বিএনপির এক যুগ্ম-মহাসচিবের ভাষাতেই, যেটি হতে পারে খালেদা জিয়ার জীবনের শেষ নির্বাচন। কিন্তু বিলিয়ন ডলারের প্রশ্নটি রয়েই গেছে। কোন পদ্ধতিতে হবে সে নির্বাচন। মতায় থেকেই নির্বাচন করার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত অনড় অবস্থানে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে, খালেদা জিয়া বলছেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া বিএনপি কোন নির্বাচনে যাবে না। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে কোন সমঝোতা যদি না হয় তবে কি হবে? সিটি নির্বাচনের ফল এবং বিভিন্ন জনমত জরিপের আলোকে এটা হয়তো বলা যায়, বিএনপিই এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। কিন্তু সাংগঠনিক দিক থেকে দলটি অত্যন্ত ভঙ্গুর। রাজপথের আন্দোলনে জয় লাভের মত সাংগঠনিক শক্তি বিএনপির রয়েছে কি না তা নিয়ে খোদ দলটির অনেক নেতা-কর্মীই সন্দিহান। গত প্রায় এক যুগ ধরে বিএনপির সাংগঠনিক বিষয় দেখভাল করছিলেন তারেক রহমান। কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে কেউই সেভাবে হাল ধরতে পারছেন না। তারেক রহমানের অনুপস্থিতি জনিত কারণে সারা দেশে সংগঠন গোছানোর মত কাউকে খুঁজে হয়রান হচ্ছেন বেগম জিয়া। সার্বিক পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের রাজনীতিতে আসার খবরও শোনা গেছে কয়েকবার। কিন্তু তার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত পারিবারিকভাবে এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কারণে বিএনপির পরামর্শ দাতাতের একটি অংশ ডা. জোবায়দা রহমানকে রাজনীতিতে আনার পরামর্শ খালেদা জিয়াকে দিয়েছেন। বহুমতের মানুষের সমন্বয়ে গঠিত বিএনপিকে অতীতে অনেক আভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবেলা করতে হয়েছে। সর্বশেষ জরুরি অবস্থায় আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে আবির্ভাব ঘটেছিল সংস্কারপন্থীদের। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেও এ বিষয়টি চিন্তায় রাখতে হচ্ছে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে। এই যখন অবস্থা তখন খালেদা জিয়াকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নির্দলীয় সরকার না হলে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে তিনি যাবেন কি না? যে সিদ্ধান্তের ওপর আসলে নির্ভর করছে বহুকিছু।