ছাইদুর রহমান নাঈম, কিশোরগঞ্জ :
রাত ২.৩০ মিনিট প্রায়৷ অপরপ্রান্ত থেকে হাবিবুর রহমান নামে অচেনা ব্যাক্তির ফোন আসলো মৃদু কান্নার আওয়াজে। ভাই ডেলিভারির রোগীর জন্য বি পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন জরুরি৷ সবখানে খোঁজ নিয়ে না পেয়ে আপনার ভারসা করছি। এ প্রান্ত থেকে উত্তর, আচ্ছা ঠিক আছে, আমার সদস্যদের থেকে খোঁজ করে জানাচ্ছি। তড়িৎ ব্লাড ডোনার সদস্য তালিকা থেকে একজনকে খুঁজে বের করে জরুরি ফোন করে রক্তের ব্যাবস্থা করেন।
এভাবেই দিন এবং রাত সবসময়ই মানুষের সংকটের মুহূর্তে জীবনরক্ষকারী প্রয়োজনীয় রক্তের যোগান দিয়ে মানুষের উপকারে কাজ করেন বদরুল আলম নাঈম নামে এক স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠক ৷ তিনি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা গ্রামের জসিমউদ্দীনের বড় ছেলে। এছাড়াও তিনি কটিয়াদী রক্তদান সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়ক ৷ শৈশব থেকে কিশোর পেরিয়ে এখন মধ্য বয়সে এসেও মানুষের কল্যানে বিলিয়ে দিয়েছে অধিকাংশ সময়গুলো। যেখানেই মানবিক বিপর্যয় সেখানেই স্বেচ্ছাসেবী দলবল নিয়ে হাজির বদরুল আলম নাঈম উপস্থিত ৷ এ কারণে উপজেলা জুড়ে তার সুনাম রয়েছে।
বর্তমানে বিষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর হামলায় জেলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সন্দেহজনক আসামি হিসাবে গ্রেপ্তার হয়ে তিনি জেলে রয়েছেন। এর পর থেকে রক্তের প্রয়োজনে খোঁজ করা রোগীরা রয়েছে বিপাকে৷ এখানে ওখানে ঘুরেও সহযোগিতা পেতে হিমসিম খাচ্ছে। থেমে গেছে সামাজিক সেবামূলক কাজগুলো বলে জানান তার সহকর্মী ও সমিতির দায়িত্বশীলরা৷
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বদরুল আলম রক্তদান সমিতি ছাড়াও সামাজিক, সাহিত্য, ক্রীড়া, পাঠাগার সহ অনেক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা৷ গ্রাম থেকে হারিয়ে যাওয়া খেলাধুলাকে চালু রাখতে এলাকায় দীপশীখা নামে একটি ক্রীড়া সংগঠন গড়ে তুলেন৷ এছাড়াও নিভৃত গ্রামে দীপশীখা গ্রন্থাগার চালু করে৷ অধ্যক্ষ মোজাফফর আহমদ স্মৃতি সংসদ, কবি নুরে মালেক স্মৃতি সংসদ, কটিয়াদী পাবলিক লাইব্রেরি, কটিয়াদী সাহিত্য সংসদ গতিশীল রাখার অন্যতম সক্রিয় সদস্য।
শুভাকাঙ্ক্ষী দানশীল মানুষের সহায়তায় পবিত্র রমজানে অসহায় মানুষের মধ্যে খাদ্য ও ইফতার বিতরণ৷ ঈদে দরিদ্র মানুষের জন্য জামাকাপড় ও খাদ্য বিতরণ কার উদ্যোগ৷ শীতে মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ৷ গতবছর ফেনীতে তীব্র বন্যায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিলে মানুষের থেকে সহায়তা সংগ্রহ করে স্বেচ্ছাসেবী দলবল নিয়ে সেখানে গিয়ে কাজ শুরু করেন। এছাড়াও রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, ডেঙ্গু জ্বরের সচেতনতা সৃষ্টি, করোনা মহামারীর মতো মানবিক বিপর্যয়ের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ উপকার করে গেছেন বদরুল আলম নাঈম।
বদরুল আলমের পিতা জসিম উদ্দীন জানান, সে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নয়৷ সামাজিক সেবামূলক যে কোন কাজের সাথে সবসময়ই অংশীদার থাকে ৷ সবসময়ই মানুষের কথা ভাবে। যে কারণে মানুষের সমর্থনে অল্প বয়সে গতবছর উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে ছিলো। আমরা পরিবার তার মুক্তি চাই৷
গত ১৮ এপ্রিল রাতে কটিয়াদী বাজার থেকে বিষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর হামলার কিশোরগঞ্জ জেলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বদরুল আলম নাঈমকে সন্দেহজনক হিসাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পুলিশ৷ বর্তমানে তিনি জেলে রয়েছে।
কটিয়াদী মডেল থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, কটিয়াদী থানায় তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নাই। জেলার একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বিষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর হামলা মামলার ঘটনায় সদর থানায় দায়ের করা মামলা নং ৪৫(৩)২০২৫) সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
দেখা করতে গেলে জেল থেকে বদরুল আলম তার সহকর্মীদের জানান, আমি জেলে থাকলেও রোগীদের যেনো রক্ত খুঁজে পেতে কোন সমস্যা না হয়৷ এর আগে গ্রেফতার হয়ে তিনি নিজের ফেইসবুক পোস্টে বলেন, কোন মামলা ছাড়াই গ্রেফতার হলাম, আল্লাহ ভরসা।
কটিয়াদী রক্তদান সমিতির কার্যকরী সমন্বয়ক
জিসান আজাদ বলেন, আমাদের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন তিনি৷ তার অনুপস্থিতি আমাদের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। রক্ত সংগ্রহের বিষয়টি তিনি দেখভাল করতেন৷ মানুষের উপকার ছাড়া অপকার কখনো তিনি করেন নি৷ আমরা মুক্তি দাবি জানাচ্ছি তার৷
কটিয়াদী সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি মেরাজ রাহীম বলেন, বদরুল আলম গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা দুঃখজনক৷ সমাজের একজন পরোপকারী মানুষ ছিলো সে৷ এমন মানুষের থেমে যাওয়া আমাদের ব্যাথিত করে৷ সে কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নয় বলেই জানি। ভালো কাজ ছাড়া মন্দ কাজের নজির দেখিনি কখনো৷ আমরা তার মুক্তি দাবি করছি৷