শামসুল হুদা লিটন
জেষ্ঠ প্রতিবেদক:
কাপাসিয়ায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাউৎকোনা গ্রামের এক হিন্দু ছেলে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ও বিয়ের নাটক করে মুসলিম মেয়ের সাথে দীর্ঘ এক মাস ঘর সংসারের পর আবার হিন্দু ধর্মে ফিরে যাওয়ার মতো চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে বর্তমানে একটি মহলের সহযোগিতায় মুসলিম মহিলাকে ফেলে পরিকল্পিতভাবে উধাও হয়েছেন ওই হিন্দু যুবক।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী মুসলিম মেয়ে কাপাসিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগও করেছেন।
হিন্দু ছেলের পরিবারের সাথে যোগসাজশ করে এলাকার প্রভাবশালী এক শ্রমিক নেতা এ জঘন্য ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করছেন বলে মারাত্মক অভিযোগও উঠেছে। ওই শ্রমিক নেতার বাড়ি শান্তের বাড়ির পাশে। শান্তের পরিবারের সাথে তার রয়েছে গভীর সম্পর্ক। ওই শ্রমিক নেতা মেয়ের পরিবারকে চুপ থাকতে এবং মেয়েকে কাপাসিয়া এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। মুসলিম নারীর অভিযোগের পর শ্রমিক নেতা কাপাসিয়া থানায় দৌড়ঝাপ করেছেন বলে একটি সূত্র জানায়। তবে তিনি থানায় পাত্তা পায়নি।
জানাযায়, কাপাসিয়া উপজেলার রাউৎকোনা গ্রামের প্রফুল্ল চন্দ্র সরকার ওরফে পপুলার সরকার ও স্মৃতি রানী সরকারের পুত্র শান্ত সরকার এ প্রতারণার সাথে জড়িত।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, কাপাসিয়ার শান্ত সরকারের সাথে নুপুর খাতুন (১৯) নামের এক মুসলিম মেয়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় এবং পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
নুপুরের বাড়ি রাজশাহীর নাটোর জেলার গুরু দাসপুর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামে। ডাকঘর চাপিলা। পিতার নাম আব্দুল আজিজ।
কাপাসিয়া থানায় নুপুরের একটি অভিযোগ থেকে জানাযায়, গত ১০ মার্চ শান্ত সরকার রাজশাহীর নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নোটারীর মাধ্যমে নিজ ইচ্ছায় হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে শান্ত ইসলাম নাম ধারণ করে। ইসলামের রীতি নীতি অনুযায়ী তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়।
বিবাহের পর তারা কাপাসিয়ায় চলে আসে এবং খোদাদিয়া গ্রামের (মিজান স্কুলের পাশে) মাসুদা নামক এক মহিলার বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে একত্রে বসবাস করতে থাকে। জীবনের তাগিদে তারা বলধা মসজিদে পাশে একটি মুদি দোকানে স্বল্প বেতনে চাকরি নেয়। শান্তের বাবা মা তাদের বিবাহকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি।
গত ৩১ মার্চ রাতে কৌশলে হঠাৎ তাদের ভাড়া বাসায় শান্তের মা আসে। পরিবারের আহবানে সে বাসা থেকে বের হয়। ওই রাতে তার বাড়ি পাশে জোবায়দা মেমোরিয়াল হসপিটালে এলাকা থেকে পরিবারের লোকজন মিলে অজ্ঞাত লোক এসে তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। যাবার সময় নুপুরের মোবাইল ফোন ও ওরা নিয়ে যায়।
পরে এ ঘটনায় নুপুর খাতুন তার ভাড়া বাসার অপর ভাড়াটিয়া মহিলা রিমার সহযোগিতায় কাপাসিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে রিমার মোবাইল নম্বর( ০১৯৮৯৭৪১৫৬০) ব্যবহার করে। এ ব্যাপারে রিমা বেগম প্রতিবেদকের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবী করেন।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া থানার ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক পিপিএম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন নুপুর খাতুন তার অপর ভাড়াটিয়া মহিলা রিমাকে নিয়ে কাপাসিয়া থানায় আসে এবং একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মৌখিক ভাবেও তিনি বিস্তারিত ঘটনা অবহিত করেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য সেকেন্ড অফিসার আমিনুল ইসলামকে ঘটনা তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। পরবর্তীতে অভিযোগকারী নুপুর খাতুনকে কাপাসিয়ার নিজ ঠিকানায় পাওয়া যায়নি। তাকে না পাওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করাও সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ঘটনাটি জঘন্য ও সেনসেটিভ। এটা প্রতারণা ও ধর্ষণ মামলা নেয়ার মতো ঘটনা। নুপুর খাতুন যোগাযোগ করলে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা সহজ হবে।
এদিকে একটি প্রভাবশালী মহল শান্তকে অন্যত্র সরিয়ে এবং নুপুরকে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করছেন বলে স্থানীয়রা জানান।
এলাকাবাসীর দাবী শান্ত এবং নুপুরকে খঁুজে বের করা দরকার। কারা এই জঘন্য ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করছেন তাদেরও চিহ্নিত করা প্রয়োজন। অবিলম্বে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনার জোড়ালো দাবী করেছেন সমাজ সচেতন মহল।