শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > শীর্ষ খবর > গাজীপুরে উদ্ধার গ্রেনেডের সঙ্গে ২১ আগস্ট হামলার গ্রেনেডের মিল রয়েছে: পুলিশ

গাজীপুরে উদ্ধার গ্রেনেডের সঙ্গে ২১ আগস্ট হামলার গ্রেনেডের মিল রয়েছে: পুলিশ

শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার:
গাজীপুরে মাটির নিচে পুঁতে রাখা একটি কলসিতে পাওয়া গেছে বেশ কয়েকটি গ্রেনেড। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড আর এই গ্রেনেড একই বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গাজীপুর মহানগরীর সদর মহানগর থানাধীন অভিজাত আবাসিক এলাকা দক্ষিণ ছায়াবীথি। এই এলাকার একটি পরিত্যক্ত জমিতে গত সোমবার (৮ আগস্ট) সকালে মাটি খননের সময় কলসিতে ভরে রাখা ১৬টি আর জে এস গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। পরে বিকেলে পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট গ্রেনেডগুলো নিষ্ক্রিয় করে।
গ্রেনেড নিষ্ক্রিয় করার পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের টিম লিডার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামান।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, আর জে এস গ্রেনেড, এটা আমাদের দেশে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় ব্যবহার করা হয়েছিল। এটা আসলে পরীক্ষা নিরীক্ষা দরকার আছে।
স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ ছায়াবীথি আবাসিক এলাকার যে জায়গা থেকে গ্রেনেডগুলো উদ্ধার করা হয়েছে, সেখান থেকে মাত্র ২০০ মিটার দক্ষিণে দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকা। সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের একটি তিনতলা বাড়ি রয়েছে। বাড়ির নাম ‘খোয়াব ভবন’। এখানে তারেক রহমান যাতায়াত করতেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন আদালত।
ব্রিফিংকালে সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদুজ্জামান বলেন, সকাল বেলা আমরা একটা ফোন পাই—গাজীপুর মহানগরের দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকায় মাটি খননের সময় বিস্ফোরক জাতীয় কিছু একটা পাওয়া গেছে। এমন খবর পাওয়া সঙ্গে সঙ্গে আমরা টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসি।
তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে এসে আমরা দেখতে পেলাম, একটি মটকার (মাটির কলসি) ভেতরে প্রচুর শক্তিশালী গ্রেনেড, যাকে আর জে এস গ্রেনেড বলা হয়। এ কারণে এ জায়গাটা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আমরা আমাদের আরওভি রোবটের (রিমোটলি অপারেটর ভেহিক্যাল) মাধ্যমে প্রত্যেকটি গ্রেনেড দেখার চেষ্টা করি। আমরা দেখার চেষ্টা করি গ্রেনেডের পিনগুলো অক্ষত আছে কিনা। কারণ গ্রেনেডের পিন খুলে গেলে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে।
এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, পরে আমরা সবগুলো গ্রেনেড আলাদা করতে সক্ষম হই। আমাদের টিমের দুইজন সদস্য বোম্বস্যুট পড়ে প্রত্যেকটি গ্রেনেড আলাদাভাবে ডিসপোজ করতে সক্ষম হই।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ১৬টি গ্রেনেড ডিসপোজ করেছি। এগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টি পারসোনাল প্রেগমেন্টেশন টাইপ। এটি খুবই শক্তিশালী।
গ্রেনেডগুলো কোন দেশের, কত দিন আগের—এসব জানতে চাইলে মাহমুদুজ্জামান বলেন, এটি কোন দেশের এটি বলা যাচ্ছে না। কারণ গ্রেনেডের গায়ে আমরা কোনো ম্যানুফ্যাকচারিং মার্ক বা এ রকম কোনো কিছু পাইনি। গ্রেনেডগুলো অনেক আগের, তাই বলতে পারছি না এটি কোন দেশের তৈরি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, আর জে এস গ্রেনেড, এটা আমাদের দেশে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় ব্যবহার করা হয়েছিল। এটা আসলে পরীক্ষা নিরীক্ষা দরকার আছে। এগুলো আমরা নিয়ে যাব, এটা আমরা ফরেনসিক চেক করব, এটা আমরা বিস্ফোরক অধিদপ্তরে পাঠাব। তাঁরা পরীক্ষা—নিরীক্ষা করে জানাতে পারবেন এটি কবেকার গ্রেনেড।
কত দিন আগে এখানে মাটির নিচে এগুলো রেখে দেওয়া হয়েছিল জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এগুলো আমরা দেখে যেটা বুঝেছি, এগুলো অনেক আগের কিন্তু স্পেসিফিক কত দিন আগের সেটি আসলে বলা সম্ভব নয়। এটা অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার আছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি গ্রেনেড লাইভ অবস্থায় ছিল। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। গ্রেনেডগুলো একটি মটকার ভেতরে পলিথিনে মোড়ানো ছিল। আমরা বলতে চাই, এগুলো সেপারেট করা আমাদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। অনেক আগের হওয়ায় একটা আরেকটার সঙ্গে লেগে ছিল, তবু আমরা সফলতার সঙ্গে সবগুলো গ্রেনেড ডিসপোজ করতে সক্ষম হয়েছি।
কারা এখানে এভাবে গ্রেনেড রাখতে পারে বলে ধারণা করছেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটি আসলে তদন্তের বিষয়। গাজীপুর মহানগর পুলিশ এবং অন্যান্য সংস্থা এটি তদন্ত করবে।
গ্রেনেড কত দিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো বিস্ফোরণ অথবা ডিসপোজ করার আগে পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। যে কোনো সময় এগুলোর বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, কাপাসিয়া উপজেলার বাসিন্দা আবুল কাশেম মহানগরের দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকায় সাড়ে তিন কাঠা জমি কিনেছেন। সম্প্রতি ওই জমিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রস্তুতি নেন। সোমবার সকালে শ্রমিকেরা মাটি খনন শুরু করেন। সকাল ৯টার দিকে একটি মাটির কলস বেরিয়ে আসে। কোদালের আঘাত কলসটি ভেঙে গেলে ভেতরে গ্রেনেড দেখা যায়। পরে পুলিশকে জানানো হয়। বিকেলে উদ্ধারের পর প্রত্যেকটির বিস্ফোরণ ঘটানো হলে আশপাশের এলাকা শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
জমির মালিক আবুল কাশেম বলেন, শ্রমিকেরা সকাল ৯টার দিকে বিষয়টি আমাকে জানান। প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯—এ ফোন করি। পরে সদর থানায় গিয়ে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। বিকেলে গ্রেনেডগুলো উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করেছে পুলিশ।