স্টাফ রিপোর্টার
সকল প্রকার অনিয়ম যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা গাজীপুর অফিস (বিআরটিএ) আর দুর্নীতি— এ দুটি যেন অভিন্ন সূত্রে গাঁথা। বিআরটিএ’র চেয়ার—টেবিলও দুর্নীতির ভাগিদার! গাজীপুর জেলা অফিসের সহকারী পরিচালক আবু নাঈম এবং মোটরযান পরিদর্শক অহিদুর রহমান দুর্নীতির মাধ্যমে কেবল অর্থ লুটপাট করেছেন, তা নয়। দালালদের বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। সম্প্রতি গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে ড্রাইভিং লাইসেন্স লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখেন দালাল লিমন এবং শান্ত এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। কারণ এই দুই চিহ্নিত দালালকে ব্যবহার করে সহকারী পরিচালক আবু নাঈম এবং মোটরযান পরিদর্শক অহিদুর রহমান।
গ্রাহকদের হয়রানি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। তাই লিমন এবং শান্তকে বাঁচাতে রুহুল নামে আরেক দালালকে বলি দেয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দালাল লিমন এবং শান্তর পাশাপাশি অফিসের সকল কাজে সহযোগিতা করতেন রুহুল। অনার্স পড়ুয়া রুহুল শিক্ষিত হওয়ায় দাপ্তরিক অনেক কাজও করানো হতো তাকে দিয়ে। তবে অন্য দুই দালালকে বাঁচাতে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে আবু নাঈম এবং অহিদুর রহমান রুহুলকে তুলে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের হাতে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২মে) বিকালে রুহুলকে তিন মাসের কারাদন্ড এবং ২০০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হাসিবুর রহমান।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে দালাল রুহুলকে বিআরটিএর পোশাক পরিয়ে বিশেষ অভিযানে পাঠালেন গাজীপুরের সহকারী পরিচালক এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
তবে প্রচার রয়েছে গাজীপুর জেলা বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক আবু নাঈম এবং মোটরযান পরিদর্শক অহিদুর রহমান নিজে বাঁচতে রুহুলকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডেকে প্রশাসনের কাছে ধরিয়ে দিয়েছে। রুহুলের পরিবার এবং একটি নিদিষ্ট সূত্র জানায়, রুহুল দীর্ঘদিন গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে কাজ করে আসছেন। অফিস প্রধান আবু নাঈম এবং মোটরযান পরিদর্শক অহিদুর রহমানের বিভিন্ন কাজ করে থাকে সে। পাশাপাশি অফিসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজও করত সে। সেই সুযোগে রুহুল ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কাজ করে নিজের সংসার চালাতো। তবে অফিস কর্তাদের সাথে সখ্যতা থাকলেও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাশের জন্য নির্ধারিত ২০০০ টাকা ইন্সপেক্টর অহিদুর রহমানকে দিয়েই কাজ করতো। গাজীপুর বিআরটিএ অফিসের সকল রুমেই নিয়মিত যাতায়াত ছিলো রুহুলের। একাধিকবার দেখা গেছে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিয়ে সহকারী পরিচালক আবু নাঈমের রুম থেকে ইন্সপেক্টর অহিদুর রহমানের রুম পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াতো। কিন্তু এবার অন্য দুই দালাল লিমন এবং শান্তকে বাঁচাত রুহুলকে বিআরটিএর পোশাক পরিয়ে সালনা হাইওয়ে থানার সাথে বিশেষ অভিযানে পাঠানো হয়।
এরপর রুহুলের বিআরটিএ পোশাক পরিহিত ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে রুহুলকে ফোন দেন সহকারী পরিচালক আবু নাঈম। ফোন দিয়ে রুহুলকে বলে এক ম্যাজিস্ট্রেটের ফিঙ্গারপ্রিন্ট করাতে হবে। সেজন্য তাকে দ্রুত অফিসে আসতে হবে। নিউজ প্রকাশিত হওয়ার পরে রুহুল অফিসে যাওয়া বন্ধ করলেও আবু নাঈমের ফোন পেয়ে সে বিআরটিএ অফিসের দোতলায় উঠতেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট তাকে আটক করে। রুহুলের মোবাইল ফোন এবং বিআরটিএ অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করলেই এর সত্যতা পাওয়া যাবে।
এমন কর্মকান্ড নিয়ে জনমনে গাজীপুর বিআরটিএ অফিস নিয়ে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠেছে। রুহুলের পরিবারের দাবি রুহুলকে যদি ধরিয়ে দিতে হয় তাহলে সে যখন অফিসের কাজ করে দিতো তখন কেন তাকে ধরিয়ে দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে গাজীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক আবু নাঈমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে এর আগে রুহুলকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের অফিসে জনবল কম তাই তাকে পাঠানো হয়েছে। তবে সে ভুল করে অফিসের পোশাক পরে ফেলেছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিষয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হাসিবুর রহমান বলেন, বিআরটিএ অফিস থেকে অভিযোগ পেয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সরকারি কাজে বাধা এবং বিআরটিএ অফিসের নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগে তাকে জেল এবং জরিমানা করা হয়েছে।