শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > আন্তর্জাতিক > নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে যেভাবে মার্কিন ঘনিষ্ঠ হলেন মোদি

নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে যেভাবে মার্কিন ঘনিষ্ঠ হলেন মোদি

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক:

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একসময় এড়িয়ে চলা শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার। গুজরাট দাঙ্গার জেরে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগে তাঁর ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে ওয়াশিংটন। প্রায় এক দশক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশেই মোদির ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর গত ৯ বছরে পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে নরেন্দ্র মোদির।

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। সফরকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎ নির্ধারিত রয়েছে মোদির। এই সফরে দুই দেশের প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত সম্পর্ক জোরদার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রযুক্তিগত সম্পর্ক জোরদারের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ি টেসলার মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মোদি।

সফরসূচি অনুযায়ী, গতকাল বুধবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে যোগব্যায়াম কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল মোদির। প্রসঙ্গত, মোদি প্রাচীন ভারতীয় এই শরীরচর্চার একজন একনিষ্ঠ অনুসারী। মার্কিন আইনসভার উচ্চকক্ষ কংগ্রেসে ভাষণ দেওয়ার কথাও রয়েছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর। এ ছাড়া তাঁর সম্মানে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে নৈশ ভোজের আয়োজন করেছেন। কৌশলগত অংশীদার হিসেবে মোদি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, নৈশ ভোজের আয়োজন তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদির সফর বাইডেন প্রশাসনের জন্য একটি পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। কারণ ক্রমবর্ধমান জনতুষ্টি ও মেরুকরণের যুগে নিজেদের বিশ্বের গণতন্ত্রের রক্ষক হিসেবে উপস্থাপন করেছে বাইডেন প্রশাসন। অন্যদিকে আবার নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থেকে আপাতদৃষ্টিতে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।

হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ক্রমবর্ধমান কট্টর রূপ দেখানো এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন-নিপীড়নের অভিযোগে মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে তদন্তের আহবান জানিয়েছেন দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন ও বিরোধীদলীয় আইন প্রণেতারা। ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক অংশীদার মনে করলেও মোদির সফরকালে এসব উদ্বেগের বিষয় উত্থাপন করতে বাইডেনের ওপর ক্রমেই চাপ বাড়ছে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে ওয়াশিংটনে এ বিষয়ে খুব একটা সমালোচনা হবে না। যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের ক্রমবর্ধমান ভোট ব্যাংক এ ব্যাপারে একটি বড় বিবেচনা। ৫০ লাখ ভারতীয় অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম অভিবাসী গোষ্ঠী।

ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিসের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ড্যানিয়েল এস মার্কি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতায় ভারতকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের কৌশলগত ‘সুইং স্টেট’ (দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য) বিবেচনা করে ওয়াশিংটন। ভূ-রাজনীতিতে মানবাধিকার ইস্যু পেছনের সারিতেই স্থান পায়। এস মার্কি আরো বলেন, এই সফর বাইডেনের জন্য একটি পরীক্ষা হবে। কারণ মোদির কর্তৃত্ববাদী নীতিকে সমর্থন করা তাঁর উচিত হবে না।

চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত দুই দেশেরই উদ্বেগের বড় কারণ। ২০২০ সালে হিমালয় অঞ্চলে বিস্তৃত সীমান্তে চীনের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর পর ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের উদ্যোগ নেয়। বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি ও অপেক্ষাকৃত ছোট প্রতিবেশীগুলোর ওপর অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে বেশ অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লি।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়লেও সামরিক সরঞ্জামের জন্য অবশ্য এখনো দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়ার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে ভারতকে। এটি পশ্চিমাদের জন্য হতাশার অন্যতম কারণ। ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালানোর প্রশ্নে ভারত এখনো রাশিয়ার সমালোচনা করেনি। মস্কোর ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নয়াদিল্লি-মস্কো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও তেল বাণিজ্য আগের মতোই রয়েছে।

গবেষক তানভি ট্যান্ডন বলেন, ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে নয়াদিল্লিকে চাপ দেবে না পশ্চিমারা। ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি, গণতন্ত্র, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার মতো সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ভারতের থাকায় যুক্তরাষ্ট্র তাকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার মনে করে।

মানবাধিকার নিয়ে উপদেশ দেবেন না বাইডেন : হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান গত মঙ্গলবার বলেছেন, গণতন্ত্রের কথিত পিছিয়ে যাওয়া এবং মুসলিমসহ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ নিয়ে মোদির সঙ্গে কথা বলতে পারেন জো বাইডেন। কিন্তু তিনি মানবাধিকারের বিষয়ে মোদিকে কোনো সবক দেবেন না।