স্টাফ রিপার্টার ॥ তাবলিগ জামাতের বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্ব মুসলিমের অন্যতম বৃহৎ এ ধর্মীয় জমায়েত।
আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৪৯তম বিশ্ব ইজতেমার শেষ পর্ব।
এর আগে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ২৪ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২৬ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। এতে অংশ নিয়েছিলেন দেশ-বিদেশের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।
প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও তুরাগ তীরে নেমেছে মুসল্লিদের ঢল। ইজতেমায় অংশ নিতে গত বুধবার থেকেই মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার তাদের এ আগমন আরো বাড়ে।
বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব প্রস্তুতিমূলক বয়ানের মধ্যে দিয়ে ময়দানের নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা, যোগাযোগ, নামাজ ও বয়ানের মিম্বার, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ তদারকিসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে মুসল্লিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়।
ইজতেমায় অংশ নিতে ট্রেন, বাস, নৌকা-লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে হাজারো মুসল্লি ময়দানে জড়ো হচ্ছেন। অনেকেই জামাতবদ্ধ হয়ে দলে দলে ময়দানের নির্ধারিত স্থানে প্রয়োজনীয় মালামাল ও ব্যাগ নিয়ে অবস্থান করছেন। আয়োজক কমিটি আশা প্রকাশ করেছেন প্রথম পর্বের মতো এ পর্বেও ব্যপকসংখ্যক মুসল্লির সমাগম হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় মালমাল নিয়ে জিকির করতে করতে ইজতেমা ময়দানে শৃঙ্খলভাবে সারি বেঁধে প্রবেশ করছেন মুসল্লিরা। প্রতিটি প্রবেশপথে ইজতেমার সাথিরা লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে মুসল্লিদের অবস্থানের ঠিকানা বলে দিচ্ছেন। নতুন মুসল্লিদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন অবস্থান মানচিত্র। টঙ্গী রেলস্টেশন থেকে ইজতেমা ময়দান পর্যন্ত মুসল্লিদের সারি। যানবাহন ছাড়াও অনেকে পায়ে হেঁটে ইজতেমায় শরিক হচ্ছেন।
ইজতেমা আয়োজক কমিটি ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে ইজতেমা মাঠকে ৩৮টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। দেশের ৩৩ জেলার মুসল্লি দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন। তা ছাড়া মাঠের উত্তর পশ্চিম কোণে বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্ধারিত জায়গা রয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো ইজতেমাস্থলকে পাঁচটি ভাগে (সেক্টর) ভাগ করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি ভাগে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে প্রায় পাঁচ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োজিত আছেন। পাশাপাশি ইজতেমার নিরাপত্তায় র্যাবের এক হাজার সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। পুলিশের এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিদেশি মেহমান:
বিদেশি মেহমানদের সাথি মো. মসিহ আলম জানান, ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক হাজার তাবলিগের সাথি এখানে যোগ দিয়েছেন। তবে প্রথম পর্বের তুলনায় দ্বিতীয় পর্বে বিদেশি মেহমানদের সংখ্যা কম থাকবে।
স্বাস্থ্যসেবা:
টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও মুসল্লিদের সুবিধার জন্য মুন্নু গেট, এটলাস গেট, বাটা গেট ও হোন্ডা গেটে তিনটি উপ-স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শতাধিক চিকিৎসক ছাড়াও ১২টি অ্যাম্বুলেন্স বিশেষ সেবা দেবে। এ ছাড়া র্যাবের চিকিৎসাকেন্দ্র, সিটি কর্পোরেশনের চিকিৎসাকেন্দ্র ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেবেন বলে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান।
পরিবহন ব্যবস্থা:
ইজতেমা উপলক্ষে ৩০০ বিশেষ বাস রাজধানীর সাতটি পয়েন্ট থেকে মুসল্লিদের আনা-নেয়া করবে। বাসগুলোতে ‘ইজতেমা সার্ভিস’ লেখা থাকবে। রাজধানীর আজিমপুর, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল ও নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ভৈরব থেকে এসব বাস চলাচল করবে বলে জানায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গাজীপুর।
ট্রেন ব্যবস্থা:
টঙ্গী রেল জংশনের স্টেশন মাস্টার হালিমুজ্জামান বলেন, প্রথম পর্বের মতো শেষ পর্বেও ইজতেমার মুসল্লিদের যাতায়াতে বিশেষ ট্রেন সেবা থাকছে। বিশেষ সেবার প্রতিটি ট্রেনে ইজতেমার বিশেষ স্টিকার লাগানো থাকবে। ইজতেমা উপলক্ষে ২১টি ট্রেন বিভিন্ন জেলা থেকে টঙ্গীতে যাতায়াত করবে।
এছাড়া আখেরি মোনাজাতের দিন পর্যন্ত সব আন্তঃনগর ট্রেন টঙ্গীতে যাত্রাবিরতি করবে বলে টঙ্গী রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।