স্টাফ রিপোর্টার
গাজীপুর: কালীগঞ্জ উপজেলার চুপাইর জামিউল উলুম আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক স্বীয় স্ত্রীকে অবৈধ ভাবে নিয়োগদান এবং মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে বাণিজ্য, সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চাকুরি হারাতে যাচ্ছেন অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুস সাত্তার।
মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, অতিসম্প্রতি বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহকারী গ্রন্থগারিক পদে নিয়োগের জন্য মোঃ জাকারিয়া হাবিব (চাকুরি প্রার্থী) ও অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুস সাত্তারের মধ্যে আট লাখ টাকা ঘুষের লেনদেন ও নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ফোনালাপ ভাইরাল হয়। স্থানীয় সরকার দলীয় প্রভাবশালী কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার নাম উল্লেখ্য রয়েছে ওই ফোনালাপে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ভাবে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
সহকারী গ্রন্থগারিকের জাল সনদপত্র তৈরি, নিয়োগ কার্যক্রম ও এমপিওভুক্তি লক্ষ্যে ৮ লাখ টাকার চুক্তি হয় মোঃ জাকারিয়া হাবিবের সাথে অধ্যক্ষের। কিন্তু নিয়োগত্তোর এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে ধরা পরে জাল সনদের বিষয়টি। আটকে যায় জাকারিয়া হাবিবের এমপিওভুক্তি। এক পর্যায়ে জাকারিয়া ঘুষের প্রদেয় ৮ লাখ টাকা ফেরত চায় অধ্যক্ষের নিকট। অধ্যক্ষ ঘুষের টাকা ফেরত দিতে তালবাহানা করলে জাকারিয়া হাবিব পূর্ব থেকে রেকর্ডকৃত দু’জনের একাধিক ফোনালাপ ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগে ভাইরাল করে।
পরে মাদ্রাসার গর্ভানিং বডির নিকট অধ্যক্ষের বিচার দাবি করে একটি অভিযোগ দাখিল করেন জাকারিয়া হাবিব।
এহেন পরিস্থিতিতে গত ২৭ মার্চ মাদ্রাসার গর্ভানিং বডির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় অধ্যক্ষ লিখিত ভাবে অভিযোগের দায় স্বীকার করেন এবং একই সভায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ সভায় অধ্যক্ষকে ঘুষের টাকা ফেরৎ দেয়াসহ প্যাটার্ণ বর্হিভুত নিয়োগে কানিজ ফাতেমাকেও কারণদর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয় এবং প্রচলিত বিধি মোতাবেক পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের নিমিত্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
ইতোমধ্যে জাকারিয়া হাবিবকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে তার অভিযোগটি প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন অধ্যক্ষসহ তাঁর কিছু সহযোগী।
গতকাল রবিবার (২৪ এপ্রিল) ওই তদন্তের শুনানী হয়। শুনানীতে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে শুনানী গ্রহণ করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূরই জান্নাত।
এদিকে অধ্যক্ষের স্ত্রী কানিজ ফাতেমার নিয়োগটি অবৈধ ও প্যাটান বর্হিভ‚ত বলে মাদ্রাসার অভ্যন্তরিন তন্তত কমিটি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা কর্মকর্তাগণ তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, কানিজ ফাতেমা ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগটি অধিকতর তদন্তে গঠিত কমিটির চুড়ান্ত রিপোর্ট গর্ভানিং বডির নিকট কয়েক দিনের মধ্যে জমা দানের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ রিপোর্টে অধ্যক্ষ ও তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ সমূহ প্রমাণিত হলে চুড়ান্ত বরখাস্তের আবেদন আপীল অ্যান্ড আরপিটেশন বোর্ডে প্রেরণ করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুস সাত্তারকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।
আজ সোমবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূরই জান্নাত এর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, যেহেতু এসব বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে সেহেতু আপাদত আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না।