শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > লবনদহ নদীর পারে ধান চাষ যেন এক যুদ্ধের নাম: আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষীরা

লবনদহ নদীর পারে ধান চাষ যেন এক যুদ্ধের নাম: আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষীরা

শেয়ার করুন


সাদিকুর রহমান
স্টাফ রিপোর্টার
গাজীপুর: প্রায় তের’শ বছর আগে চীনের পার্ল রিভার ভ্যালি অঞ্চলে ‘পার্ল নদী’র পাড় কে কেন্দ্র করে ধান চাষের স‚চনা হয়। ধানে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়, তাই নদীর কাছে বা জলাধারের পাশে ধান ক্ষেতের মালিক মানে সৌভাগ্যের বিষয়। অথচ এই দেশে এমন নদীও আছে যে নদীর পাশে ক্ষেত থাকাকে চাষীরা দুর্ভাগ্য মনে করেন।
প্রাচীন ধান ‘অরাইজা গ্লাবেরিমা’ বা ‘অরাইজা রুফিপোগন’ থেকে শুরু করে ‘অরাইজা বার্থি’ কিংবা ‘অরাইজা নিভারা’ অর্থাৎ ‘অরাইজা’ গোত্রের প্রায় সকল প্রজাতিই পানি নির্ভর। ধানের বৈজ্ঞানিক নাম ‘অরাইজা সাটিভা’, ধান চাষে প্রচুর বৃষ্টি বা সেচের প্রয়োজন হয়, তাই নদীর পাশে ধান ক্ষেত থাকাকে সৌভাগ্যের বিষয় মনে করা হয়। অথচ সে নদীতে যদি পানির বদলে থাকে, রাসায়নিক বর্জ্য আর পলিথিন। তাহলে সেটা সৌভাগ্য না দূর্ভাগ্য! এমনই এক নদী ‘লবনদহ’, ভাওয়াল সভ্যতায় ‘লবনলং সাগর’, যা সচেতনতার অভাবে আজ নর্দমার চেয়ে বিষাক্ত। অথচ নদীটি পুনঃখনন বা দূষণ ঠেকাতে প্রশাসনের জোড়ালো কোন কার্যক্রমও দেখা যায় না।

বর্ষায় ভাসমান পলিথিন, নাগরিক বর্জ্য ও শিল্পের রাসায়নিক বর্জ্যরে কুপ্রভাবে চাষের মৌসুমে চাষীদের মাঝে নিরব কাঁন্না শোনা যায়। প্রথমেই পলিথিন, প্লাস্টিকের মত অপচনশীল দ্রব্য অপসারণ করতে হয়, ক্ষেতের ম‚ল মাটির উপরে শিল্প-কারখানার রাসায়নিক দ্রব্যের একটি পুরু প্রলেপ পড়ে থাকে সেটি অপসারণ করতে হয়। তারপর হাল চাষ উপযোগী হয়, হাল চাষের পরেও মাটির নিচ থেকে উঠে আসে আরো অপচনশীল পলিথিন-প্লাস্টিক। একাধিকবার হাল চাষ করে এই অপচনশীল দ্রব্যকে মাটি থেকে আলাদা করতে হয়। এরপরও দুই-তিন ফুটের বেশি গভীরের মাটি পরিষ্কার করা যায়না। সরকারি সেচ ব্যবস্থা না থাকার কারণে, নদীকে একমাত্র সম্বল হিসেবে ব্যবহার করতে হয় অথচ এই নদীতে পানির চেয়ে রাসায়নিক বর্জ্যই বেশি। বীজ বপন ও চারা রোপন এরপর স্বাভাবিক পরিচর্যা করলেও, বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই লেগেই থাকে। শত বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে ধান উৎপাদন করে, পাওয়া যায় না ন্যায্য দাম।

লবনদহ নদীর পারে ৪০ শতক জমিতে ধান বপন করেছেন পিরুজালী গ্রামের শওকত হোসাইন, পরিবারের খাবারের চাহিদা মেটাতে বংশগত ভাবে ধানের চাষ করেন। তিনি বলেন, “পরপর তিন দিন শ্রমিক নিয়ে শুধু পলিথিন অপসারণই করেছি, লবনদহ নদী দূষণ হওয়ার পর থেকে ধান চাষ হয়ে দাড়িয়েছে এক যুদ্ধের মত।”
গাজীপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসিবুল হাসান বলেন, ‘কলকারখান অপরিশোধিত রাসায়নিক বর্জ্য ও অপচনশীল বর্জ্যরে অপব্যবস্থাপনা এধরনের সমস্যার জন্ম দিয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান তাদের ইটিপি প্লান্ট সঠিকভাবে পরিচালনা করেনা। কোনভাবে যদি তাদের ইটিপি প্লান্ট সঠিকভাবে পরিচালনা করতে বাধ্য করা যেতো, তাহলে হয়তো এই নদীর পানির দূষণ অনেকাংশে রোধ করা যেতো।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (BRRI) এর সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা (Irrigation and Water management) বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান তার দীর্ঘ দিনের গবেষণা থেকে জানান, যেহেতু ধান চাষে প্রচুর পানি প্রয়োজন হয়, তাই পানির উৎস হিসেবে নদীর বিষাক্ত পানি ব্যবহার করলে এর কুপ্রভাব ঠেকানো দুষ্কর। তাছাড়া নদীর পানি দূষণ রক্ষার কোন বিকল্প নেই। কারণ এর সাথে শুধু ধান চাষ নয় বরং জলজ প্রাণীদের জীববৈচিত্রের অস্তিত্বের সম্পর্ক।
তিনি কারখানার ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ETP) নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে ইটিপি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার বদলে জোন ভিত্তিক করা যেতে পারে। সম্মিলিত ব্যবস্থাপনায় ব্যয় কমে আসবে।