শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > জাতীয় > ঘোড়াশালে শ্রমিকের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করেই বাংলাদেশ জুট মিলে উৎপাদন শুরু: শ্রমিক উত্তেজনা

ঘোড়াশালে শ্রমিকের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করেই বাংলাদেশ জুট মিলে উৎপাদন শুরু: শ্রমিক উত্তেজনা

শেয়ার করুন

বিল্লাল হোসেন
নরসিংদী প্রতিনিধিঃ প্রায় ২৩০০ স্থায়ী ও ১৪০০ অস্থায়ী শ্রমিকের বকেয়া বেতন ও ২০ কোটি ৭ লাখ পাটের টাকা না দিয়েই, পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালস্থ বিজেএমসি নিয়ন্ত্রানাধীন বাংলাদেশ জুট মিলের আংশিক উৎপাদন ২৬ ফ্রেবুয়ারী থেকে বেসরকারী ভাবে চালু করেছে বিজেএমসি থেকে লিজ নেওয়া জুট এলায়েন্স লিমিটেড নামে এক কোম্পানী।
স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রায় ৩৭০০ শ্রমিকের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ না করে মিল চালুর খবরে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃস্টি হচ্ছে। মিল এলাকায় শ্রমিকরা প্রতিদিন জড়ো হয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতিও নিতে যাচ্ছেন বলে জানান শ্রমিকরা।
সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২ জুলাই রাত ১০ টায় মিল কর্তৃপক্ষ মিলের উৎপাদন বন্ধের বিজেএমসির নোটিশ বাংলাদেশ জুট মিলের প্রধান গেটে টানিয়ে দিয়ে মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
মজুরি কমিশন-২০১৫ অনুযায়ী,শ্রমিকদের সব পাওনাদী তাদের ব্যাংক হিসেবে পি এফ গ্র্যাচুইটি ও গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধাসহ সব পাওনা ৫০ শতাংশ নিজ নিজ ব্যাংক হিসেবে এবং বাকি ৫০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধের কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত মিলের ১৩৮০ জন বদলী শ্রমিক, ৯ জন স্থায়ী শ্রমিক তাদের কোন বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ করা হয়নি। এছাড়াও স্থায়ী ও অস্থায়ী সকল শ্রমিকের ৪ সপ্তাহ সহ বিভিন্ন মুজুরি বকেয়া রয়েছে বলে জানা যায়, ফলে টাকা না পেয়ে বদলী শ্রমিকরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অতিকস্টে দিন যাপন করছেন। নোয়াখালী বাড়ি মিলের ফিনিশিং বিভাগের নান্টু কুমার পাল নামে এক শ্রমিক জানান, আমার পাওনা টাকার আশায় গত দেড় বছর যাবৎ ভাড়া বাসা নিয়ে পরিবার পরিজয় নিয়ে কস্টে দিন কাটাচ্ছি। কিন্তু কবে টাকা পাবো তাও জানিনা।
মিলের অপর কাঞ্চন, কাদির, লাল মিয়া, মস্তফা নামে শ্রমিকরা জানান, ভাড়া বাসায় রিক্সা, ভ্যান চালিয়ে ও দিন মজুরের কাজ করে ছেলে মেয়েদের নিয়ে অতি কস্টে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি। এদিকে আজ (রবিবার) দুপুরে বদলী শ্রমিকরা তাদের বকেয়া টাকার দাবীতে মিল এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করার প্রস্তুতি নিলে পলাশ উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ জাবেদ হোসেন তাদের সাথে কথা বলে আন্দোলন না করার পরামর্শ দেন এবং তিনি তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এর সমাধান করার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা তা মেনে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
পলাশ উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ জাবেদ হোসেন জানান, আমি বিজেএমসির প্রতিনিধি মিলের প্রকল্প প্রধানের সাথে কথা বলেছি তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন অতি দ্রæত শ্রমিকদের সকল পাওনাদি পরিশোধের ব্যবস্থা করবেন।
এ ব্যাপারে বিজেএমসির কাছ থেকে লিজ নেয়া জুট এলায়েন্স লিমিটেডের সমন্বয়ক হাসান মোহাম্মদ আরিফ জানান, বিজেএমসি নিয়ন্ত্রানাধীন ২৫টি পাটকল ২০২০ সালে ২ জুলাই বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে ঘোড়াশালস্থ বাংলাদেশ জুট মিলটি গত ১০ জানুয়ারী বিজেএমসির সঙ্গে ২০ বছরের চুক্তি করে জুট এলায়েন্স লিমিটেড তা বুঝে নেয়। পরে গত ২৬ ফেব্রæয়ারি থেকে আমরা মিলে আংশিক উৎপাদন শুরু করি। কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা পুরোদমে উৎপাদন শুরু করতে পারবো। আমরা জানি শ্রমিকদের কিছু বকেয়া রয়ে গেছে। সব সময়ই বিজেএমসিকে আমরা বলে আসছি শ্রমিকদের যেন বকেয়া পরিশোধ করার ব্যবস্থা নেয়। বিজেএমসি কর্তৃপক্ষও আমাদের আশ^স্ত করেছে অতিদ্রæত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে দিবে।
অপরদিকে বিজেএমসির প্রতিনিধি মিলের প্রকল্প প্রধান আবুল কাশেম মোহাম্মদ হান্নান জানান, কিছু স্থায়ী শ্রমিকদের ভোটার কার্ডে সমস্যা হওয়ায় টাকা দিতে দেরী হয়েছে। ইতি মধ্যে আমরা তাদের টাকা পেয়ে গেছি, বিজেএমসি অনুমোদন দিলেই আমরা তা পরিশোধ করবো। আর বদলীকৃত ১৩শ শ্রমিকের পাওনা প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। তাও আমরা দ্রæত পরিশোধের ব্যবস্থা নিচ্ছি।