শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > শীর্ষ খবর > জুয়ার টাকা কেড়ে নিয়ে হত্যা, দুই বছর পর ঘাতক গ্রেফতার

জুয়ার টাকা কেড়ে নিয়ে হত্যা, দুই বছর পর ঘাতক গ্রেফতার

শেয়ার করুন

মাহমুদুল হাসান:
গাজীপুর: কাপাসিয়ায় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে মারধর ও জুয়ার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে হত্যার প্রায় দুই বছর পর এক আসামিকে ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গতকাল সোমবার বিকালে গাজীপুর পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।
গ্রেফতার কামরুল ইসলাম (৩১) ময়মনসিংহের পাগলা থানাধীন বারইহাটি এলাকার মৃত আব্দুস সাহিদের ছেলে।
পিবিআই জানায়, শনিবার ময়মনসিংহের পাগলা থানাধীন বারইহাটি এলাকা থেকে কামরুলকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রোববার গাজীপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে কামরুল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার টোকনগর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে পড়ে রুবেল মিয়া (৩২) নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নিখোঁজ হন। তিনি কাপাসিয়ার শহরটোক এলাকার মফিজ উদ্দিনের ছেলে। রুবেল টোক নয়ন বাজারে পেঁয়াজু, নিমকি, মুড়ালী ইত্যাদি তৈরি ও বিক্রি করতেন। নিখোঁজের দুদিন পর টোকনগরের আব্দুল হাই মুন্সির চর এলাকায় নদীতে ভাসমান অবস্থায় রুবেলের অর্ধগলিত মরদেহ পাওয়া যায়। ওইদিনই রুবেলের বাবা কাপাসিয়া থানায় মামলা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজীপুর পিবিআইের পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান জানান, ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল বিকালে নিহত রুবেল ও স্থানীয় রিপন, বিমল বর্মন, নাছির উদ্দিন, আরিফ, আরিফ মিয়া এবং দিলিপ ঘোষ টোক নয়ন বাজারস্থিত শীতলক্ষ্যা নদীর ঘাট থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। কাপাসিয়া থানাধীন টোক নগর এলাকার আব্দুল হাই ও কামরুলসহ কয়েকজন আরেকটি ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে টোক নয়ন বাজারে যাচ্ছিলেন। মুন্সির চর সংলগ্ন নদীর কিনারে পৌঁছলে নৌকাকে সাইড দেওয়াকে কেন্দ্র করে উভয় নৌকার লোকজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে কামরুল তার লোকজন নিয়ে রুবেলকে মারপিট করে সঙ্গে থাকা টাকা ছিনিয়ে নৌকা থেকে রুবেলকে পানিতে ফেলে দেয়। এসময় রুবেলের সঙ্গে থাকা অন্যরা সাঁতরে নদীর তীরে উঠতে পারলেও রুবেল পানিতে তলিয়ে যায়।
তবে পিবিআই এ কথা বললেও গ্রেফতার কামরুল স্বীকারোক্তিতে বলেছে, ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল দুপুরে কামরুল বারইহাটি বাজারে থাকাকালীন অপর সহযোগীরা তাকে বারইহাটি বাজার সংলগ্ন নদীর ঘাটে নিয়ে বলে শীতলক্ষ্যা নদীতে বোটে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা চলছে। তারা জুয়ারিদের দাবড়ানি দিয়ে টাকা ছিনিয়ে আনার পরিকল্পনা করে। তখন বারইহাটি বাজারের খেয়া ঘাট থেকে কাশেম মেম্বারের নৌকা নিয়ে কামরুল ও তার সহযোগীরা ঘটনাস্থল কাপাসিয়া থানাধীন টোক নগর এলকার মৃত আব্দুল হাই মুন্সির চর জমি সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে যায়। নিহত রুবেল মিয়া ও তার সঙ্গীরা আসামীদের নৌকাটি দেখে দ্রুত গতিতে তাদের নৌকাটি চালিয়ে টোক বাজারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন আসামিরা রুবেলদের নৌকাকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে আসামীদের নৌকা থেকে ভিকটিমের নৌকায় অভিযুক্ত খোকন মিয়া, শফিকুল ইসলাম, সাইদুল ও মো. হেভেন লাফিয়ে উঠে পড়ে। তখন রুবেলের সঙ্গীরা পানিতে লাফ দিলেও রুবেলকে আসামীরা ধরে ফেলে। পরে রুবেলকে পিটিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং অচেতন অবস্থায় রুবেলকে মৃত ভেবে নৌকা থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। এরপর অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ছিনতাইয়ের টাকা ভাগাভাগি করে নেয়।
গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, গ্রেফতার কামরুল ও তার সহযোগীরা জুয়ার বোর্ডের টাকা ছিনিয়ে নিতে রুবেল মিয়াকে তাদের হাতে থাকা লাঠি সোটা দিয়ে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ গুমের উদ্দেশে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় রুবেলের বাবা মফিজ উদ্দিন বাদী হয়ে ওই বছরের ৯ এপ্রিল কাপাসিয়া থানায় মামলা (নম্বর-৬) করেন। প্রায় ছয় মাস চেষ্টা করেও থানা পুলিশ মামলার কোনো কূলকিনারা করতে না পারায় পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় গাজীপুর পিবিআই। পরে দীর্ঘ তদন্ত ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার ময়মনসিংহের পাগলা থানার বারইহাটি এলাকা থেকে কামরুলকে গ্রেফতারের পর কামরুল অপরাধ স্বীকার ও জড়িত অপরদের বিরুদ্ধে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।