স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাঁচ সিটি করপোরেশনের পুনরাবৃত্তি হতে দেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাই যে কোনো মূল্যে উপজেলা নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী করার কৌশল নিয়ে মাঠে নামছেন নেতারা। তৃণমূলে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে কঠোর হচ্ছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়েছে। এসব নির্বাচনে জাতীয় ইস্যুগুলো বড় ভূমিকা রেখেছে। এর ফায়দা নিয়েছে বিএনপি। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও সেসব এবং বর্তমান ইস্যুগুলো ফলাফল নির্ধারণী ভূমিকায় থাকবে- এটা ধরে নিয়েই ভোটারদের আস্থা অর্জনের কৌশল নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি তৃণমূল আরো সংগঠিত করতে দ্বন্দ্ব মেটানোর চেষ্টা চলছে।
এছাড়া, ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল না থাকলেও এ নির্বাচন এক কথায় সুষ্ঠু হয়েছে এমন দাবি করছেন না আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। তাই বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে আসছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই একটি সুষ্ঠু প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেই নির্বাচন কমিশনের কাছে সেনা বাহিনী চাওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে দলীয় সূত্র জানায়, সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্রোহীদের ব্যাপারে চরম কঠোর অবস্থান নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো প্রার্থী উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে তাকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই সহিংসতায় দলীয় কোনো নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে আজীবন বহিষ্কার করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সব এলাকায় সুষ্ঠু হয়েছে তা বলা যাবে না। তাই উপজেলা নির্বাচনও সম্পূর্ণ সুষ্ঠু হবে তাও বলতে পারব না। তবে যে কোনো উপায়ে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ী করতে হবে। দলের হাইকমান্ড থেকে এমন নির্দেশনা স্থানীয় পর্যায়ে দেয়া হয়েছে।’
এদিকে সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও তৃণমূল সংগঠন বাঁচিয়ে রাখতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে এটা নিশ্চিত। মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা থাকলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ স্থানীয় নির্বাচনগুলো সেরে ফেলতে চায়। শুধু তা-ই নয়, সিটি করপোরেশন হাতছাড়া হয়ে গেছে তাই এখন বাকিগুলো আর বিরোধীদের ঘরে যেতে না দিতে বদ্ধপরিকর তারা। এ কারণে উপজেলা নির্বাচন ক্ষমতাসীনরা যেমন মরিয়া তেমনি বিএনপিও তৃণমূল শক্তিশালী করতে এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সর্বশক্তি নিয়োগ ও কৌশল অবলম্বন করবে বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়।
ঠিক এ কারণে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বেশ চিন্তিত আওয়ামী লীগ নেতারা। কৌশলের পাশাপাশি কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। জানা গেছে, নির্বাচনে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে জেলা-উপজেলার নেতাদের চিঠি দেয়া হচ্ছে। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠি ২২ জানুয়ারি থেকে পাঠানো শুরু হয়েছে।
চিঠিতে যা থাকছে তার মধ্যে রয়েছে- এক জনের বেশি প্রার্থী নয়। কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারবে না। ভোটারদের মন গলাতে করতে দ্বারে দ্বারে যেতে হবে। নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সব দ্বন্দ্ব-বিভেদ ভুলে এক হয়ে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে বিএনপিকে মোকাবিলার জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতেও বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘গত সিটি নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। বিরোধীরা যাতে দল ও প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে না পারে এ ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে।’ ইতিমধ্যে সরকারের সাফল্য ও বিরোধী পক্ষের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডকে জনগণের সামনে তুলে ধরতে তৃণমূলকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ জানান, প্রার্থীদের জয়ী করতে সব ধরনের নির্দেশনা হাইকমান্ড থেকে স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করলে অবশ্যই জাতীয় নির্বাচনের মতোই উপজেলা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীরাই জয়ী হবে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয় পর্যায়ে সফর শুরু করেছেন। আর এটি শুধু উপজেলা নির্বাচনেই শেষ হয়ে যাবে না এ সফর নির্বাচনের পরেও অব্যাহত থাকবে।
নির্বাচনে দলের একক প্রার্থী নিশ্চিত করা, তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সফরের বিষয়গুলো যে এবারের কৌশলের অন্তর্ভূক্ত সে কথা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফও জানালেন।
উল্লেখ্য, প্রথম দফায় ১০২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন রাখা হয়েছে ২৫ জানুয়ারি, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২৭ জানুয়ারি ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩ ফেব্রুয়ারি এবং ভোটগ্রহণ হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি।
দ্বিতীয় দফায় ১১৭ উপজেলায় ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সে মোতাবেক মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২ ফেব্রুয়ারি, যাচাইবাচাই ৪ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ১১ ফেব্রুয়ারি।
এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ১১৫টি, মার্চে ২২৩টি, এপ্রিলে ৩৫টি, মে মাসে ৮৫টি ও জুনে ১৮টি উপজেলার মেয়াদ শেষ হবে। বাকিগুলোও জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।
এবারের উপজেলা নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে কতো দিন থাকবে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।