শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > শীর্ষ খবর > জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নাসিম, যে অবস্থায় তাঁর পরিবার

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নাসিম, যে অবস্থায় তাঁর পরিবার

শেয়ার করুন

অনলাইন ডেস্ক ॥
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, প্রবীণ নেতা, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম যখন হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন, পুরো জাতি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এই বর্ষীয়ান নেতার জন্য উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়, কঠিন এই বাস্তবতায় তাঁর পুরো পরিবার পার করছে ততোধিক সর্বগ্রাসী এক বিপন্ন সময়।

বাঁচার জন্য নাসিমের স্ত্রী লায়লা নাসিম ও পুত্রবধূ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরীও হাসপাতালের বিছানায় লড়ছেন। বাড়ির বিশ্বস্ত কাজের লোক মোহাম্মদ মিল্টনও করোনা আক্রান্ত হয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে। পরিবারের এমন বিপন্ন সময়ে মোহাম্মদ নাসিমের তিন ছেলের মধ্যে দুই ছেলে লকডাউনে আটকা যুক্তরাষ্ট্রে। বড় ছেলে একবার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা বাবার কাছে, আরেকবার অসুস্থ মা কিংবা স্ত্রীর কাছে ছুটতে ছুটতে কঠিন এক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবারও মোহাম্মদ নাসিমের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ‘ডিপ কোমায়’ রয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘উনি (সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম) ডিপ কোমায় আছেন। নিজে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছেন না। মেশিনের সাহায্যে তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।’

মোহাম্মদ নাসিম অসুস্থ হয়ে গত ১ জুন রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন। এর ঠিক আগের দিন গুরুতর অসুস্থ স্ত্রী লায়লা নাসিম ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন। ঈদের পরদিন সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তাঁকে আবার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেওয়া হয়। ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে অসুস্থ হলেও পরে করোনাভাইরাস টেস্ট করে দেখা যায় তিনি এতেও আক্রান্ত। রিপোর্ট পজিটিভ আসায় লায়লা নাসিমের চিকিৎসা নিজ বাসায় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর তাঁকে ওই হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে বাসায় নেওয়া হয়। বর্তমানে ধানমণ্ডির নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

মোহাম্মদ নাসিমের বড় ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য তানভির শাকিল জয় জানান, তাঁর বাবার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। উন্নতি বা অবনতি এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নাসিমের শারীরিক অবস্থা নিয়ে তাঁর কথা হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন। প্রথম দফায় মোহাম্মদ নাসিমের চিকিৎসায় ১১ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করার পর আবার তা পুনর্গঠন করা হয়েছে। চিকিৎসকরা দ্বিতীয় দফায় তাঁকে গত সোমবার থেকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। বিদেশে পাঠানোর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চেষ্টা করছে বলেও জানান তানভির শাকিল জয়।

জয় আরো জানান, তাঁর স্ত্রী সাবরিনা সুলতানা চৌধুরীও গুরুতর অসুস্থ। হার্টে পানি জমে যাওয়ায় গত ২৭ মে এই হাসপাতালে (বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল) জটিল অপারেশন হয় তাঁর। স্ত্রী সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী যখন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন, ওই সময় তাঁর মা লায়লা নাসিমও ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এবং একই সময়ে বাবা মোহাম্মদ নাসিম গুরুতর অসুস্থ হন। তাঁকেও একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ার পরও করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা এবং বাবার জন্য ব্যস্ত থাকায় গত ৬ জুন স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছেন বলে জানান তিনি। এর আগে গত ১৭ মে আরো এক দফা এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী। ওই সময় তিনি সিসিইউতে ছিলেন।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পারিবারিক অন্য একটি সূত্র জানায়, মোহাম্মদ নাসিমের বাড়ির বিশ্বস্ত কাজের লোক মোহাম্মদ মিল্টনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। অসুস্থ অবস্থায় তিনি বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। মিল্টনের শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। তিনিও বাঁচার জন্য প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছেন।

করোনাভাইরাসের এই মহাদুর্যোগেও গত মে মাসে মোহাম্মদ নাসিম দুই দফায় এলাকায় গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেন। প্রথমে ১ মে তিনি সিরাজগঞ্জ যান। এরপর ১৯ মে দ্বিতীয় দফায় নিজ এলাকায় গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম তিন সন্তানের জনক। বড় ছেলে তানভির শাকিল জয় ২০০৮ সালে নির্বাচনে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই সময় নাসিম অসুস্থ ছিলেন। এ জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। তাঁর মেজো ছেলে তমাল মনসুর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে এবং ছোট ছেলে তন্ময় মনসুর ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করেন। মা-বাবার গুরুতর এই অসুস্থতার সময় তাঁরা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশে ফিরতে পারছেন না। সূত্র: কালের কন্ঠ।