শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > গ্যালারীর খবর > আইন শিথিল হওয়ায় বেপরোয়া মনোভাবে চালকরা : ইলিয়াস কাঞ্চন

আইন শিথিল হওয়ায় বেপরোয়া মনোভাবে চালকরা : ইলিয়াস কাঞ্চন

শেয়ার করুন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
পরিবহন চালক বিশেষ করে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ চালকদের বেপরোয়া মনোভাব সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।

তিনি বলেন, পরিবহন চালকদের অন্যায্য দাবির মুখে নতুন সড়ক পরিবহন আইন শিথিল করায় চালকদের মধ্যে বেপরোয়া মনোভাব তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেসের ব্যাপারে তাদের ছাড় দেয়ায় আগে সড়কে যত মামলা হত, যত টাকা জরিমানা হত, নতুন আইন প্রয়োগ করার পরে মামলা ও জরিমানা কমে গেছে। এর ফলে সড়কে শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনাও বেড়ে গেছে।

শনিবার নিসচার প্রচার সম্পাদক এ কে এম ওবায়দুর রহমানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই বক্তব্যের কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার আরও কিছু কারণ তুলে ধরেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, এ বছরের শুরু থেকে সড়ক দুর্ঘটনা যেহারে বৃদ্ধি পেয়েছে এতে আমি ও আমার সংগঠন খুবই উদ্বিগ্ন। দেশের মানুষও উদ্বিগ্ন। দুর্ঘটনা কেন হঠাৎ করে এত বাড়লো? সেটা অনুসন্ধান করতে গিয়ে গত জানুয়ারি থেকে ঘটা দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, যেসব গাড়ি সড়কে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে সেগুলোর মধ্যে ট্রাক, কাভার্ভভ্যান, পিকআপ ও ভাড়ায়চালিত মাইক্রোবাস বেশি। ইদানীং মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। সড়ককে দুর্ঘটনামুক্ত করতে জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ এবং এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের প্রতি জোর দিয়ে কিছু সুপারিশও তুলে ধরেন তিনি।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়কে মোটরসাইকেলের সংখ্যা দিন দিন ব্যাপকহারে বাড়ছে। চালকদের যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে কি না, তারা ঠিকমতো ড্রাইভিং শিখছে কি না, এসব বিষয় উপেক্ষিত থাকছে। এর ফলে বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চলছে সড়কে। প্রত্যেক দিন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দেশে গড়ে ৬ থেকে ৭ জন মারা যাচ্ছে। পাশাপাশি ভাড়ায়চালিত মাইক্রোবাস দুর্ঘটনাও বেড়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চালকরা বিশ্রাম ছাড়াই দিন-রাত গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। অনেক সময় অতিরিক্ত টাকার আশায় নির্ঘুম অবস্থায় গাড়ি চালাতে হয় চালকদের। প্রায় দেখা যায়, একজন চালক সারা রাত গাড়ি চালানোর পর সকালে আরেকটি ভাড়া পেলে মালিক তাকে বকশিশের লোভে ফের গাড়ি চালাতে বাধ্য করে। সম্প্রতি সিলেটে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে যে মাইক্রোবাসটি দুর্ঘটনার শিকার হয়, সেই ঘটনাটি ঘটে রাত আড়াইটায়। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় চালক মাইক্রোবাসটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেনি।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ পথচারী। তারা সড়কে অত্যন্ত বেখেয়াল। নিজেদের জীবন বাঁচানোর কোনো সচেতনতা তাদের মধ্যে নেই। তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য যে ধরনের উদ্যোগ নেয়া দরকার সে বিষয়ে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া সড়কে নতুন এক উপদ্রব যুক্ত হয়েছে, সেটি হচ্ছে ট্রাক্টর ও ট্রলি। কৃষিকাজে ব্যবহৃত এসব উপকরণ ইদানীং সড়কে অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে চলছে এবং দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সড়কে গণপরিহন চলাচলে নজরদারি নেই সরকারের। বিআরটিএর লাইসেন্স ও ফিটনেস দেয়ার বিষয়টিতে নেই স্বচ্ছতা। এক মাসে আড়াই লাখ গাড়ির ফিটনেস দিয়েছে বিআরটিএ। কীভাবে এত অল্প সময়ে এত বেশি গাড়ির ফিটনেস সনদ দেয়া যায়, সে বিষয়ে সরকারের এ সংস্থাটির কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘জানতে চাই, কী পদ্ধতিতে ফিটনেস সনদ দেয়া হয়েছে। এটি কী সম্ভব?’

তিনি বলেন, ‘তার মানে আনফিট গাড়ি ফিট হিসেবে রাস্তায় চলছে। পাশাপাশি কিছু দুর্ঘটনা ঘটছে অবৈধ তিন চাকার গাড়ি যেমন- নসিমন, করিমন, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত যানবাহনের কারণে। মহাসড়কে এই গাড়িগুলো বন্ধের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আমরা বলে আসছি। আমরা দাবি জানিয়েছি- হয় এসব গাড়ি বন্ধ করতে হবে নতুবা এসব যানবাহনের জন্য আলাদা লেন করে দিতে হবে। দ্রুতগতির গাড়ির সঙ্গে কোনোভাবেই এসব যানবাহন চলতে দেয়া যাবে না। অথচ এসব যানবাহন নির্বিঘ্নে দ্রুতগামী গাড়ির সঙ্গে একই লেনে চলছে এবং সড়কে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে।’

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমি মনে করি, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে যারা কাজ করে যেমন বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশ তাদের মধ্যেও অজ্ঞতা আছে। তাদের দক্ষতা, জানা ও আন্তরিকতার ঘাটতি আছে। তাদের মধ্যে দুর্নীতি আছে। পরিবহন সেক্টরে নের্তৃত্ব দেয়া চালক ও মালিকরা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া জনগণ ও দেশের মানুষের কথা ভাবে না। তাদের এ জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কখনো কমানো সম্ভব হবে না। সড়ক দুর্ঘটনা যদি না কমে তাহলে এবারের সুইডেনে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের যে আলোচনা এবং জাতিসংঘের যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তা বাংলাদেশের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য যারা দেশকে নের্তৃত্ব দিচ্ছেন সড়ককে দুর্ঘটনামুক্ত করতে তাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার অবশ্যই থাকতে হবে। এ বিষয়ে অঙ্গীকার আমরা বহু শুনেছি, শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। এবার সত্যিকারের অঙ্গীকার দেখতে চাই। এবার সত্যিকারের দরদি হতে হবে, শুধু মুখে দরদ দেখালে চলবে না। কার্যক্ষেত্রে প্রমাণ দিতে হবে। এভাবে সবাই মিলে যদি কাজ করি তাহলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে এবং নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হবে। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, মোটরসাইকেল, সাইকেল থেকে শুরু করে যত ধরনের যানবাহন সড়কে চলে সব চালককে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। এ সেক্টরে সরকারকে বরাদ্দ দিতে হবে। মানুষের জীবন বাঁচাতে, জাতিসংঘের এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে এ খাতে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে যে সংস্থাগুলো কাজ করে যেমন- বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।