রবিবার , ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ভুল শুধরে ফেরার চেষ্টায় আফতাব

ভুল শুধরে ফেরার চেষ্টায় আফতাব

শেয়ার করুন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥ এসেছিলেন প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়ে। কিন্তু ক্রিকেটের ধ্রুবতারা আর হয়ে ওঠা হয়েনি তাঁদের। নিজেরা পিছিয়ে গেছেন আবার এ দেশের অপরিণত ক্রিকেট-চিন্তাও দূরে ঠেলে দিয়েছিল তাঁদের। তাই বয়স ত্রিশ না ছুঁতেই তাঁরা বুড়ো ক্রিকেটার! তাঁদের অনেকেই আবার আশায় বুক বাঁধছেন নতুন করে।

তত দিনে পুরো দল এবং জাতির ফোকাসটা মোহাম্মদ আশরাফুলের ওপর। বড় একটা ইনিংস প্রশংসায় ভাসিয়ে দেয় তাঁকে, আর তেমন দুটির মাঝে গোটা দশেক ব্যর্থতায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সমালোচনার তীব্র স্রোতও! এ তীব্রতার সামান্য ছিটেফোঁটাও লাগেনি আরেকজনের গায়ে, ১৬ টেস্টে যাঁর ফিফটি মাত্র একটি। পরম সৌভাগ্যবান সেই তিনি আফতাব আহমেদ, যিনি ব্যাটিংয়ে নামলে দারুণ কিছু দেখতে পাওয়ার উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে পড়তেন কোচ ডেভ হোয়াটমোর। প্রতিভার সঙ্গে এমন আপসের চর্চার যুগ ছিল ওটা।

ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জের হাত বদলে অনেক আগেই দেশের ক্রিকেট মানচিত্র তখন চট্টগ্রাম। মিনহাজুল আবেদিন, আকরাম খান, জাহিদ রাজ্জাক মাসুমদের পর কে- এ শতাব্দীর শুরুর দিকে তিনটি নাম দেশের ক্রিকেট সেন্টার ঢাকায় ছড়িয়ে পড়ে দ্রুতই, নাফিস ইকবাল, আফতাব ও নাজিম উদ্দিন। সমবয়সীদের এ রেসে তিনজনই ঢুকেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সীমানায়, আবার বেরিয়েও গেছেন। তবে ম্যাচসংখ্যায় বাকি দুজনের চেয়ে এগিয়ে আফতাব। যতটা না নৈপুণ্য, তার চেয়ে বেশি প্রতিভার প্রতি মোহই আসলে এগিয়ে রেখেছে তাঁকে।

প্রতিভার প্রতি মোহ ছিল আফতাব আহমেদেরও। কমপ্লিট ব্যাটসম্যানশিপের ধারণাটা তিনি খুব চিন্তা করে ধারণ করেছিলেন, তা নয়। যেমন, আফতাব আহমেদের গুণমুগ্ধ ডেভ হোয়াটমোরের মূল্যায়ন ছিল এক শব্দের, ‘ন্যারাচাল’। প্রকৃতি প্রদত্ত এই গুণ এবং নিজের খোলামেলা মনের কারণে দলে, জনে এবং গণমাধ্যমের প্রশ্রয় বরাবরই পেয়েছেন আফতাব। কিন্তু উন্নতির সিঁড়ি বেয়ে ওঠার জন্য অত্যাবশ্যকীয় অন্য একটি বিষয়ে বড্ড উদাসীন ছিলেন তিনি- কঠোর পরিশ্রম। শুধু প্রতিভা দিয়ে যে লম্বা পথ পাড়ি দেওয়া যায় না, পোড় খাওয়া আফতাব তা বোঝেন, ‘কষ্টটা তো লাগবেই। যদি শুধু ট্যালেন্ট দিয়েই খেলা যেত, তাহলে তো আমি এখন জাতীয় দলেই খেলতাম। কষ্টটা কম করেছি বলেই এখন আমি জাতীয় দলের বাইরে। ১৬-১৭ বছর বয়সে জাতীয় দলে ঢুকে অনেক কষ্ট করেছিলাম। সে কারণেই সম্ভবত একটা সময় যখন ফ্রি হয়ে গিয়েছিলাম, প্র্যাকটিস বলে কিছু নাই, বাহ মজা তো! ওই মজায় খুব বেশি মজে গিয়েছিলাম। তবে এখন বুঝতে পারছি যে এটা কোনো লাইফ না। একেকটা সময় থাকে নতুন করে বোঝার। কখনো কখনো তা বুঝতে একটু দেরি হয়ে যায়। আবার অন্যভাবে বললে দেরি হয়ে গেছে বলে থেমে গেলে আরো দেরি হয়ে যায়।’

আবার দৃশ্যপটে ফারুক আহমেদ, হোয়াটমোরের মতো তিনিও আফতাব ফ্যান ক্লাবের সদস্য! সবশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের নৈপুণ্যের ওপর ভিত্তি করে যে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট সিলেটে হচ্ছে, সেই দলে আফতাবকে সুযোগ দিয়েছে ফারুক আহমেদের নির্বাচক কমিটি। ডাক পাওয়ায় নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছেন আফতাব, ‘পত্রিকায় দেখলাম মোটামুটি যারা পারফরম্যান্স করছে, তাদেরই দলে জায়গা দিয়েছেন ফারুক ভাই। তার মানে ইঙ্গিতটা স্পষ্ট, পারফরম্যান্স করলে ডাক পাওয়া যাবে। এটা আশার ব্যাপার।’ ঢাকা লিগে আফতাবের নৈপুণ্য ‘মোটামুটি’ ক্যাটাগরির বেশি কিছু নয়, ১২ ম্যাচে ২৩.৮২ গড়ে দুই ফিফটিতে ২৬২ রান। এর চেয়ে ঢের ভালো নৈপুণ্য আছে প্রিমিয়ার লিগে। অবশ্য পরিসংখ্যান বরাবরই সবটা বলে না। যেমন, বহুদিন পর এ মৌসুমেই অনেকটা ফিট দেখা গেছে আফতাবকে। প্রতিভার সঙ্গে শারীরিক সক্ষমতার যোগফলই সাফল্যের অন্যতম শর্ত।

অত্যাবশ্যকীয় এ শর্ত পূরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য কোচ সরওয়ার ইমরানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আফতাব আহমেদ, ‘প্রিমিয়ার লিগ কবে শুরু হবে না হবে, এ নিয়ে টানাপড়েনে অন্য দলগুলো প্র্যাকটিস না করলেও গাজী ট্যাংক ক্রিকেটার্স প্র্যাকটিসে ছিল। ইমরান স্যার সে সময় ফিটনেস এবং স্কিল নিয়ে অনেক কাজ করিয়েছেন। এটার সুফল পেয়েছি ঢাকা লিগে।’ এতে ক্রিকেট জীবনটাকে নতুন করে গোছানোর অনুপ্রেরণাও পেয়েছেন বলে দাবি তাঁর, ‘মাঝের অনেকটা সময় মিস হয়ে গেছে। কিছু কিছু সময়ে কিছু কিছু সিদ্ধান্ত ভুল হয়ে যায়। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তবে এখন ভাবছি দেখি না আরেকবার চেষ্টা করে। আমার এখন যা বয়স, এ বয়সেই একজন ক্রিকেটার সবচেয়ে পরিণত হয়। ২৮-২৯ বছর বয়সের পরের তিন-চার বছরই সেরা ফর্মে থাকে একজন ব্যাটসম্যান।’

২৮ বছরের আফতাব কি পারবেন ক্রিকেটের এ চিরায়ত রীতির জয়গান গাইতে? উত্তর সময়ই দেবে। তবে নাফিস-আফতাবরা যদি নতুন আশায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটা আবহ তৈরি করেন, তাহলে দেশের ক্রিকেটেরই লাভ। সমমানের ক্রিকেটারের সংখ্যা ২০ থেকে বেড়ে অন্তত ৩০ তো হবে! কালের কন্ঠ