শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ক্রিকেট বোর্ডে অদ্ভুত সব কাণ্ড

ক্রিকেট বোর্ডে অদ্ভুত সব কাণ্ড

শেয়ার করুন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥ সংবাদ সম্মেলনের সময় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের পেছনে গলা উঁচিয়ে দাঁড়ানো ওই ভদ্রলোক কে? সর্বজনীন এ কৌতূহলের উত্তরটা জানা গেল গতকাল বোর্ড সভা শেষে সভাপতির বক্তব্যের পর, ‘ভদ্রলোক’ বিসিবির পরিচালক কিংবা কর্মকর্তা-কর্মচারী নন, ঢাকার একটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত এবং রাজনৈতিকভাবে বলশালী! ঠিক এ যোগ্যতাবলেই তিনি গা ঘেঁষাঘেঁষি করেন সভাপতির, প্রটোকল ভেঙে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড টোয়েন্টি টোয়েন্টি ম্যাচের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে হুমড়ি খেয়ে পড়তে পারেন প্রধানমন্ত্রীর সামনে।

শুধু অনাহূত তিনিই নন, বর্তমান সভাপতির আগমনে বিসিবির করপোরেট অফিস কার্যত দখলেই চলে যায় দেশের আলোচিত একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের। এ নিয়ে বিসিবির কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যায়েই শুধু নয়, খোদ পরিচালকদের আড্ডাতেও উঠে আসে অনাহূতদের আনাগোনার বিষয়টি। সেই সব আড্ডায় বিসিবির নতুন নামকরণও করে ফেলেছেন কেউ কেউ, ‘বেক্সিমকো ক্রিকেট বোর্ড’! এ কারণে ওই প্রতিষ্ঠানের কেউ বিসিবিতে এলেই পান দারুণ সমাদর। সভাপতির প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে যত বেশি আপ্যায়ন, ততই ‘এসিআর’ উজ্জ্বল হওয়ার সম্ভাবনার কথা ভেবে প্রতিনিয়তই অতিথি সৎকার হচ্ছে বিসিবিতে।

মোটকথা, সভাপতির মনোরঞ্জনের জন্য যে নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা চলে তা আগে কখনো দেখা যায়নি বিসিবিতে। সে প্রতিযোগিতার তোড়ে ভেসে যায় ক্রিকেটের ন্যূনতম শিষ্টাচারও। এই যেমন সেদিন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত করপোরেট টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট উদ্বোধনী ম্যাচে একটি ইনিংসের মাঝপথেই থামিয়ে দেওয়া হয় খেলা! না, বৃষ্টি হয়নি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নাজমুল হাসানকে নিতে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে নেমে পড়েছে হেলিকপ্টার। তাই ১৭তম ওভারে কিছুক্ষণ খেলা থামিয়ে রাখতে হয়। বিসিবি সভাপতি উড়াল দেওয়ার পর যথারীতি শুরু হয় ম্যাচটি। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন দৃশ্য আর কোথাও মঞ্চায়িত হয়নি।

নির্বাচনের পর কমিটি বণ্টন নিয়েও এমন কালবিলম্ব হয়নি বিসিবিতে। স্ট্যান্ডিং কমিটির নীতিমালা মেনেই চলে ক্রিকেট। কিন্তু নির্বাচনের মাসাধিককাল পেরিয়ে যাওয়ার পর গতকালই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। পূর্ববর্তী অ্যাডহক কমিটির সদস্যরা পুরনো পদে এত দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু ওই কমিটির সবাই তো আর নির্বাচিত কমিটিতে নেই। তাই গাজী আশরাফ হোসেনের ছেড়ে যাওয়া ডেভেলপমেন্ট কমিটি এখন কর্তৃত্বহীন! নির্বাচনের পরদিন বর্তমান কমিটির দুটি সভার পরও দুই সহসভাপতির পদ রয়েছে শূন্য।

অবশ্য যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বর্তমান কমিটি ক্ষমতায়, সেটি নিয়েও কম আলোচনা-সমালোচনা হয়নি। গঠনতন্ত্র সংশোধন নিয়ে বিবাদ গড়ায় আদালত পর্যন্ত। আদালতের রায় নিয়ে নির্বাচিত এ বোর্ডের আয়ু নিয়ে রয়েছে প্রবল শঙ্কা। কারণ, নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে রায় দেন আদালত, তবে সেটিই পূর্ণাঙ্গ রায় নয়। আর নির্বাচনের আগে মাসজুড়ে চলেছে পছন্দের কাউন্সিলর মনোনয়নের অদৃশ্য ‘জোর জবরদস্তি’।

পছন্দের কাউন্সিলরশিপ নিশ্চিত করা এবং পরবর্তী সময়ে নির্বাচনে নিজের এবং পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করে আনার পেছনে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে, ঝুলে পড়েছিল বিসিবির দৈনন্দিন কার্যক্রমও। বোর্ড সভাপতি যেখানেই কাউন্সিলরদের সঙ্গে সভা করুন না কেন, সেখানে ছুটে যেতেন বিসিবির বেতনভুক্ত কর্মচারীরাও। বাংলাদেশের ক্রিকেট রাজনীতিতেও বেতনভুক্তদের এমন উপস্থিতি আর কোনো নির্বাচনী মঞ্চে দেখা যায়নি।

আশা করা গিয়েছিল বুঝি নির্বাচনী ঝুটঝামেলা মিটে যাওয়ার পর গা ঝাড়া দিয়ে উঠবে বিসিবি। কিন্তু বর্তমান কমিটির দ্বিতীয় সভায় নেওয়া স্থির সিদ্ধান্ত মাত্র একটি- ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। প্রধান নির্বাচক নিয়োগ কিংবা জাতীয় দলের সহ-অধিনায়ক মনোনয়নের সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে যথারীতি। অবশ্য বিসিবিতে ‘পেন্ডিং ইস্যু’র অন্ত নেই! পুরনো বকেয়া পরিশোধের পরই তৃতীয় বিপিএল আয়োজনের ইচ্ছা বর্তমান কমিটির। কিন্তু বিপিএলের দ্বিতীয় আসরের দেনাপাওনা কবে মিটবে, সেটি বলতে পারছেন না কেউই। আবার বিপিএলে বেশি উপার্জন হয় বলেই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও পরিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘স্যালারি ক্যাপ’। এটা নির্ধারণের সময় বোর্ড সভাপতি বলেছিলেন যে বিপিএলে এন্তার উপার্জন করেন ক্রিকেটাররা। সঙ্গে বিসিএল এবং প্রিমিয়ার লিগ মিলে আকাশচুম্বী আয় হবে একেকজন ক্রিকেটারের।

কিন্তু বিসিবি সভাপতি কি জানেন যে বিপিএলের অনাদায়ী অর্থ আর প্রিমিয়ার লিগের বকেয়ার কারণে অন্য যেকোনো মৌসুমের চেয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটারের এবারের আয় অনেক কম? তাঁর জানার কথা নয়। কারণ তিনি টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করতে যান হেলিকপ্টারে চড়ে, অনুসারী পরিবৃত্ত হয়ে। ম্যাচ থামিয়ে উঠে পড়েন আকাশ-ফড়িংয়ে। সাধারণ ক্রিকেটারদের সুখ-দুঃখের কথা তাই শুনতে পান না তিনি। সাফল্যের ভ্রান্ত ধারণা নিয়েই কেটে যায় তাঁর দিন!