শনিবার , ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ , ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হোম > Uncategorized > ইউরোপে ট্রায়াল দিতে যাচ্ছেন প্রথম বাংলাদেশী ফুটবলার

ইউরোপে ট্রায়াল দিতে যাচ্ছেন প্রথম বাংলাদেশী ফুটবলার

শেয়ার করুন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥ ‘আমি স্বপ্নেও ভাবিনি হল্যান্ডের মতো ফুটবল দেশে আমার প্রতিভা মেলে ধরার সুযোগ পাবো। দিনাজপুর থেকে যখন আসি তখন ঢাকায় থাকতে পারব কিনা সেটা নিয়েই আমি শংকিত ছিলাম। আর এখন ভাগ্য আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে’-কথাগুলো বলছিলেন ইউরোপে প্রথম কোন ‘ট্রায়ালে’ সুযোগ পাওয়া জাতীয় যুব (অনুর্ধ্ব-১৯) ফুটবল দলের অধিনায়ক হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস।

এই তরুণ নেদারল্যান্ডের একটি ফুটবল একাডেমিতে ট্রায়াল দেয়ার সুযোগ পেয়েছেন। জাতীয় দলের ডাচ কোচ লুডভিক ডি ক্রুইফ ভিনসেন্টকে সুযোগ করে দিয়েছেন। এক মাসের ট্রায়াল হবে হল্যান্ডের এফ সি টোয়েন্টি ক্লাবে। যদি টিকে যায় তাহলে তার সাথে চুক্তি হতে পারে। হল্যান্ডের এই ফুটবল ক্লাবটিতে তিনটি বয়সসীমার একাডেমি রয়েছে। তিনটির মধ্যে উচ্চতর ‘এ’ লেভেল পর্যায়ের অনুর্ধ্ব-১৯ ফুটবলারদের প্রশিক্ষন দেয়া হয়। হেমন্ত ভিনসেন্টকে ভাগ্যবানই বলতে হবে। এমন সুযোগ ক’জনার ভাগ্যে জোটে। হেমন্ত বলেছেন, ‘আমি যে সুযোগ পেয়েছি। তা কাজে লাগাতে চেষ্টা করব।’

গতকাল দুপুর বেলা ফেডারেশন কাপ ফুটবলের স্পন্সর চুক্তির পর শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র খেলোয়াড় রেজিষ্ট্রেশন করাতে আসবে বলে সংবাদ মাধ্যম বাফুফে ভবনেই অপেক্ষা করছিল। সেখানে হঠাত্ সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয় ক্রুইফ এবং তার সহকারি রেনে কেস্তার। তারা এসে ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে হেমন্ত হল্যান্ডের এফ সি টোয়েন্টে ক্লাবে ট্রায়াল দিতে যাবেন।’

ক্রুইফ, রেনে কেস্তার ঢাকায় এসে অনেকবারই বলেছিলেন এদেশের তরুণ ফুটবলারদের মধ্যে প্রতিভা রয়েছে। যারা ভালো সুযোগ পেলে মাঠ মাতাতে পারবেন। ক্রুইফ বলেন, ‘আমরা তরুণ ফুটবলারদের এক্সপোজার দিতে চাই। তরুনদের উন্নয়নের জন্য তাদের ভালো প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। পরিবেশ প্রয়োজন। আমরা সুযোগ দিতে চাই ইউরোপে। হেমন্ত তরুণ ফুটবলারদের মধ্যে উদাহরণ হয়ে থাকবেন।’ কোচ জানিয়েছেন হেমন্তের যাওয়া আসা সেখানে থাকা খাওয়ার সব ব্যবস্থাই করছে এফ সি টোয়েন্টি ক্লাব।

পেশাদার ফুটবল লিগে এবারই প্রথম মোহামেডানের হয়ে খেলতে যাওয়া হেমন্ত দিনাজপুরের বাগান বাড়ি গ্রামের কসবা মিশন এলাকার মাইকেল বিশ্বাসের তিন ছেলে এক মেয়ের মধ্যে ছোট। পঞ্চাশোর্ধ বাবা মাইকেল বিশ্বাস এক সময় জেলা পর্যায়ে ফুটবল খেললেও এখন মেয়েদের ফুটবল নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। বড় ভাই অ্যালেক্স বিশ্বাস ঢাকা ওয়ান্ডারার্সে খেলেছেন। সেই সুত্র ধরেই ফুটবলে হেমন্তের পা। পুত্র ঢাকার ফুটবলে বড় হবে, মাঠ মাতাবে, সেই স্বপ্ন নিয়ে মা প্রিসিলা বিশ্বাস হেমন্তকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন।

নেদারল্যান্ডের আবহাওয়া এখন শুন্য ডিগ্রীতে নেমে গেছে। হেমন্তের জন্য কঠিন হবে সেখানে মানিয়ে নেয়াটা। ক্রুইফ বলছেন, এই মুহুর্তে বাংলাদেশ এবং হল্যান্ডের আবহাওয়া এক না। কিন্তু তাকে মানিয়ে নিতে হবে। পরিবেশের সঙ্গে না মানাতে পারলে সেটা হবে তার জন্য দুর্ভাগ্যজনক। আমি বিশ্বাস করি সব প্রতিকুলতা কাটিয়ে টিকে যাবে।’

বাংলাদেশের ক্রীড়ানুরাগীরাও প্রত্যাশা করে তরুণ ফুটবলার হেমন্ত হল্যান্ডের মতো শক্তিশালি ফুটবল দেশে নিজের অবস্থান করে নিক। কারণ এমন সুযোগ তো বারবার আসে না।

ডাচ ক্লাবটিতে বাংলাদেশের হেমন্তের সাথে ট্রায়াল দেবেন গত সাফে নেপাল জাতীয় দলে খেলা বিমল গুরং। নেপাল একাডেমির ১৬ বছরের ফুটবলার বিমলকে পছন্দ করেছেন রেনে কেস্তার। কিন্তু বাংলাদেশের কোচ হয়ে নেপালের ফুটবলারকে কেন এমন সুযোগ দেয়া হলো? ক্রুইফ বললেন, ‘বাফুফের সভাপতি উপমহাদেশের ফুটবলারদের উন্নয়নের কথা বলেছিলেন।’

বাংলাদেশে অনেক বিদেশি কোচ আসা যাওয়া করেছেন। তারাও বলেছেন এদেশের ফুটবলে প্রতিভার অভাব নেই। প্রয়োজন পরিচর্যা। কিন্তু এর আগে কোনো কোচই তাদের দেশের সেরকম সুযোগ করে দেননি। এখন ক্রুইফের মাধ্যমে সেটা শুরু হতে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য জাতীয় দলের ষ্ট্রাইকার শেখ মোঃ আসলাম নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় জার্মানির দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবলে খেলার আমন্ত্রন পেলেও সেখানে যেতে পারেননি।