নিজস্ব প্রতিবেদক:
কমিউনিটি ক্লিনিকের একজন কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মোঃ মাজহারুল ইসলাম (প্রতীক) তিনি একজন সাংবাদিক নেতা। গাজীপুরের কাশিমপুর প্রেসক্লাবের তিনি তিন বারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। সাংবাদিকতার সাইনবোর্ডে বেজায় দাপট তৈরি করেছেন তিনি, অপরাধ অপকর্মকারী নানা গ্রুপের সঙ্গেও গড়ে তুলেছেন সখ্যতা।
প্রেসক্লাবের বাইরেও তাঁর আলাদা সাংবাদিক সিন্ডিকেট রয়েছে, আছে আলাদা আখড়া। কাশিমপুর থানা সংলগ্নই সাংবাদিক অফিস নামের সিন্ডিকেট আখড়া নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই।
তিনি কাশিমপুর ইউনিয়নের পশ্চিম এনায়েতপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের একজন সিএইচসিপি। বলতে গেলে তিনি অফিসে যানই না। সারাক্ষণ সাংবাদিকতার নামেই ছুটে বেড়ান অফিস, মিল কারখানা, চাঁদাবাজির পয়েন্টে পয়েন্টে। ফলে ক্লিনিক থাকে তালাবদ্ধ, দুর্ভোগে পড়েন সে প্রার্থীরা।
সরকারী কর্মচারী আচরণ বিধি এবং চাকুরির নিয়ম—কানুন একদম তোয়াক্কাই করেন না মাজহারুল। এলাকাবাসীর অভিযোগ অধিকাংশ দিন ক্লিনিক বন্ধ রাখেন। এলাকার রোগীরা স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার করিকল্পনা অফিস জানতে পায়। এমন অবস্থায় গত ৯ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাছিমা আক্তার পরিদর্শনে গিয়ে ক্লিনিকটি বন্ধ পান। পরিদর্শক মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ক্লিনিক বন্ধের কারণ জানতে চাইলে ওই সিএইচসিপি চাকুরীর শৃংখলা পরিপস্থি অসদাচারণ করেন।
এমতাবস্থায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তাঁকে কৈফিয়ত তলব করে তিন কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। মাজহারুল ইসলাম কোন জবাব দেন নাই। এভাবে তাকে পরপর পাঁচটি নোটিশে তলব করা হয়। কোন উত্তর নেই। পরবর্তীতে গাজীপুর সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মামুনুর রহমান তাকে কারণ দর্শনোর নোটিশ প্রদান করেও কোন জবাব পাননি।
সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ ঢাকা মহাখালী কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) লাইন ডাইরেক্টর ডাঃ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তাঁর বেতন স্থগিত করেন এবং কারণ দর্শানো নোটিশে উল্লেখ করেন, আপনার উল্লেখিত কার্যকলাপ সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ মোতাবেক ‘অসদাচরণ এবং বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত’ হিসেবে গণ্য উল্লেখ্য করে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে সশরীরে উক্ত অফিসে হাজির হয়ে জবাব দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
কথায় আছে, ‘নিজের চরকায় তেল দাও!’ তিনি তা না করে আক্রোশের বশবর্তী হয়ে লেগে যান পরিদর্শক ও ইনচার্জ জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে। তিনি সাংবাদিকতার দাপট ও ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে নিজ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসে টিভি ক্যামেরাসহ সাংবাদিকদের টিম পাঠিয়ে হেনস্থা করেন পরিদর্শক ও ইনচার্জ জিয়াউল হককে। উল্টা—পাল্টা কথা—বার্তায় সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন। বাদ যাননি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জনও।
নাটের গুরু মাজহারুল অফিসে প্রবেশ না করলেও আশপাশের চা দোকানে অপেক্ষা করেন ওই সময়। ওই মিশনে সরেজমিনে টিমের নেতৃত্ব দেন তারই আপন ছোট ভাই সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম জুয়েল। প্রশাসনকে নানাবিধ হুমকী—ধমকী, ভয়—ভীতি প্রদর্শন করেন। এ ক্ষেত্রে ভাইয়ের পরিচয়টি গোপন রেখে নিজ ভাইয়ের অডিও সাক্ষাৎকার ধারণ করে ভুক্তভোগীর অডিও অভিযোগ বলে প্রোপাগান্ডাও ছড়াতে থাকে ভাই ভাই সিন্ডিকেট। প্রশাসন তাদের নানারকম অপতৎপরতায় রীতিমত ত্যাক্ত—বিরক্ত।
সরকারি সেবামূলক চাকুরী করেও হয়ে যান ‘সাংবাদিক’ আবার টাকা পয়সা ছিটিয়ে সাংবাদিক নেতাও বনে যান। সরকারী চাকুরীর কোন বিধি বিধানের তোয়াক্কা করছেন না তিনি। কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মাজহারুল ইসলামের নামের সাথে ‘সাংবাদিক’ পদবি যুক্ত করে তিনি দিনদিনই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। যেন থামানোর কেউ নেই!