শ্রীপুরে উৎপাদন হচ্ছে বারোমাসি কাঁঠাল


সোলায়মান মোহাম্মদ
অতিথি প্রতিবেদক
শ্রীপুর (গাজীপুর): বাণিজ্যিকভাবে ভিয়েতনামি বারোমাসি আঠাবিহীন কাঁঠাল চাষ করেছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ উত্তর পাড়া গ্রামের সফল উদ্যোক্তা মাহমুদুল হাসান সবুজ। সবুজ মুলাইদ গ্রামের আবুল বাশারের পুত্র। বাণিজ্যিকভাবে বারোমাসি কাঁঠাল চাষে সফল হয়েছেন। তিনি প্রায় ৩০ শতাংশ জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ভিয়েতনামের বারোমাসি জাতের কাঁঠাল বাগান করেন ২০২৩ সালে। ভারতের বিপুল মজুমদার নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি এ জাতের চারা সংগ্রহ করেন। চারাগুলো বাগানে লাগানোর ছয় মাস থেকে অল্প পরিমাণে ফল আসা শুরু করে। আর ৪ বছর বয়স হলেই প্রতিটি গাছে পরিপূর্ণ মাত্রায় ফল ধরে। বর্তমানে বাগানের প্রত্যেকটি গাছে কাঁচা—পাকা প্রচুর কাঁঠাল রয়েছে। বাগানের নার্সারিতে প্রতিদিন বারোমাসি কাঠালের চারা কিনতে দর্শনার্থীরা ভীড় করছে।
কৃষি উদ্যোক্তা মো. মাহমুদুল হাসান সবুজ জানান, বছরের প্রথম থেকে গাছে ফল আসলেও ফল বাজারে বিক্রির উপযুক্ত হয় মার্চ মাস থেকে। এই জাতের কাঁঠালের গায়ের রঙ কাঁচায় গাঢ় সবুজ। আর পাকলে ভিতরের রঙ গাঢ় হলুদ। কাঁঠাল খেতে মিষ্টি, সুস্বাদু এবং সুগন্ধি যুক্ত হয়। অন্যান্য কাঁঠালের তুলনায় এ জাতের কাঁঠালে আঠা কম হয়। উৎপাদন খরচও তুলনামূলক কম। নিয়মিত পরিচর্যা, আর জৈব সার ব্যবহার করলেই হয়। সবুজ আরোও বলেন, এ ধরণের বাগান বাংলাদেশেই খুবই কম। এ জাতের কাঁঠালে তেমন কোনো খরচ নেই। চারাও বেশ চাহিদা রয়েছে। নার্সারিতে প্রতিদিন লোকজন আসছে কেনার জন্য। তিনি ৩৫ শতাংশ জমি থেকে চাষ শুরু করলেও বর্তমান দেড় বিঘা জমিতে তার কমলা, ড্রাগন, মাল্টা, পেয়ারসহ মিশ্র বিভিন্ন ধরণের ফলের চাষ রয়েছে। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, এতো জমিতে চাষ করা সত্ত্বেও সরকারিভাবে কোনো সুযোগ—সুবিধা পাননি তিনি। অথচ যারা নাম মাত্র চাষ করেন, তারা সরকারি বিভিন্ন ধরণের সুযোগ—সুবিধা পেয়ে থাকেন। যদি সরকারিভাবে প্রণোদনা সহায়তা দেওয়া হয় তাহলে বেকার সমস্যা দূর করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে ফল রপ্তানি করা সম্ভব।
সরেজমিনে বাগান ঘুরে দেখা গেছে, ১০ থেকে ১২ ফুট দীর্ঘ গাছগুলোর গোড়ার মাটি থেকে থোকায় থোকায় কাঁঠাল ধরে আছে। কাঁঠালের ওজনে গাছ যেন ভেঙে না যায়, সেজন্যে বাঁশের খুঁটি গেড়ে গাছগুলো বেঁধে দেওয়া হয়েছে। পানি ও সার দেওয়া হয় নিয়মিত। প্রতিটি গাছ প্রায় ৫০—৬০টি কাঁঠাল ধরেছে। গড় ওজন প্রায় ৫—৬ কেজি। প্রতিটি কাঁঠাল পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪০০—৫০০ টাকা ধরে। অসময়ে পাকায় এই কাঁঠালের দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দর্শনার্থী পার্শ্ববর্তী গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকার রুবেল মিয়া কাঁঠাল বাগান দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেন, এই সময় পাকা কাঁঠাল পাওয়া যায় এটা আমি প্রথম দেখলাম। কাঁঠাল খেতেও অনেক স্বাদ এবং গন্ধ অনেক সুন্দর। তবে দেশী কাঁঠালের যে পরিমাণ আঠা থাকে এতে তেমন আঠা নেই। কৃষি বিভাগ থেকে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণসহ প্রণোদনা দেওয়া হলে একদিকে যেমন বেকার সমস্যা দূর হবে। অন্যদিকে দেশের ফলের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে বলে মনে করেন বেকার যুবকরা।
তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুল বাতেন সরকার বলেন, আমি মনে করি কৃষি বিভাগের এসব তরুণ উদ্যোক্তাদের পাশে এসে দাঁড়ানো দরকার। সরকার অনেককেই ভর্তুকি দিচ্ছে। বেকার যুবকরা আর্থিক লাভবানের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখবে ।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, কৃষি উদ্যোক্তা সবুজের বাগানে সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হয়। সবুজ একজন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। বাজারে বারোমাসি কাঁঠালের চাহিদা রয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সাহায্য—সহযোগিতা করা হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫