টাংগাইলে আশ্রয়ণ প্রকল্পে নেই শিশুর নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ

মোঃ রেজাউল করিম
টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
পূর্ব আকাশে সূর্য উদিত হয়। সূর্যের ড়নায় দিনকার আহার জোগাতে কাজে নেমে পড়েন আশ্রয়ণের নারী পুরুষ। কিন্তু সূর্য তাড়না দিয়ে এখানকার শিশুদের স্কুলে পাঠাতে পারেনা। শিক্ষার প্রতি তাঁদের আগ্রহ থাকলেও আশেপাশে নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ যেন আলোর নিচে অন্ধকার। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার গৌরিশ্বর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪৮ পরিবারের বাস। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করবে এমন উপযোগী শিশুর সংখ্যা ২২ জন। কিন্তু চলতি বছর এদের কেউ ভর্তি হয়নি স্কুলে।
প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পেয়ে বেজায় খুশি গৌরিশ্বর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা। দূর-দূরান্ত থেকে এসে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোর মাঝে গড়ে উঠেছে সুন্দর এক ভাতৃত্ববন্ধন। এখানকার পরিবারের পুরুষ সদস্যরা জীবীকার উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছেন অটোরিকশা, দিনমজুর ও কৃষি কাজ। সংসারে আয় বাড়াতে পিছিয়ে নেই নারীরাও। আশ্রয়ণের পাশেই তাঁরা খুলে বসেছেন চা এবং মনোহারির দোকান। তাঁদের কথায় প্রকাশ পায়, স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখেই কাটছে দিন। তবুও কপালে দুঃচিন্তার ভাঁজ। এ চিন্তা নতুন প্রজন্মকে নিয়ে। শিশুর নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে। শিশুরা স্বপ্ন দেখবে। আলোকিত হবে শিক্ষার আলোয়। কিন্তু গৌরিশ্বর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্যমতে তাঁদের অনেক শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় না। অথচ শিক্ষার এ স্তরে উপযোগী শিশুর সংখ্যা রয়েছে ২২ জন। তাঁরা ঘরের কোণে খেলাধূলা করে পার করছে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এ সময় বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার আলো থেকে। কারণ হিসেবে আশ্রয়ণবাসি জানালেন আশেপাশে নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সরেজমিনেও মিলে এর সত্যতা। আশ্রয়ণের উত্তর পাশে কুশারিয়া সরকারি প্রাথামকি বিদ্যালয়, দক্ষিণে নয়নচালা ও পশ্চিমে শুকনি স্কুল। তিনটি স্কুলের দূরত্ব আশ্রয়ণ হতে আড়াই থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার। যাতায়াতের রাস্তাও ভালো নয়। পাহাড়ী রাস্তা একটু বৃষ্টি হলেই অনপোযোগী হয়ে পড়ে চলাচলের।
আসাদুল ইসলাম পেশায় মাহিন্দ্রা চালক। নিজে অশিক্ষিত হলেও মেয়ে ফাতেমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন তাঁর। ফাতেমার যে বয়স তাতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার কথা। অথচ স্কুলের গন্ডিতে পা রাখার সৌভাগ্য তাঁর হয়নি। আসাদুলের ভাষ্য, আশ্রয়ণের শিশুদের লেখাপড়া করার সুযোগ যদি কেউ করে দিতেন তাহলে বড় উপকার হত। একই কথা শাহাদাৎ হোসেনের। তাঁর ছেলে হাবিবুর রহমান পড়ত তৃতীয় শ্রেণিতে। স্কুল দূরে হওয়ায় চলতি বছর থেকে সে আর স্কুলে যায়না।
এদিকে শিল্পী বেগম নানা প্রতিকূল অবস্থায় মেয়ে তানিয়াকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করেছেন নয়নচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এক বছর বয়সি মেয়ে সোয়াসহ তানিয়াকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় ঘণ্টাখানেক। দূরের পথ মারিয়ে মেয়ে তাঁর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। শিল্পীর দিনের অর্ধেকই নাকি চলে যায় স্কুলে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কল্পনা রানী ঘোষ বলেন, ওইস্থান থেকে আশেপাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর দূরত্ব অনেক বেশি। সে কারণে হয়তো স্কুলে যায় না। তবে উর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শিশুদের বিদ্যালয়ে ফেরানো হবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, এই বিষয়ে আমি একেবারেই অবগত নই। আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম। শিক্ষা অফিসার এবং অভিভাবকরা কেউ অবগত করাননি। এ ব্যাপারে শিক্ষা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করা হবে, যেন ওই শিশুগুলো ঝরে না পড়ে। তাঁরা যেন স্কুলে যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিয়া চৌধুরী বলেন, আশ্রয়ণের শিশুদের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে প্রায় মাস দেড়েক আগে। আশ্রয়ণের শিশুদের স্কুলে ভর্তি করার জন্য কি কি করা প্রয়োজন সে রকম কর্মপরিকল্পানা দেওয়ার কথা। কর্মপরিকল্পনা পেলে সে অনুযায়ি কাজ করা হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫