ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যে সাংসদ পাপুলের বিপুল অর্থ পাচার: আরব টাইমস

অনলাইন ডেস্ক ॥
কুয়েতে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক বাংলাদেশের সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুল ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিপুল অর্থ পাচার করেছেন। কুয়েতের গোয়েন্দারা এসব লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছেন বলে সে দেশের ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমস-এ খবর বেরিয়েছে।

আরব টাইমস-এর গত রোববারের এক খবরে বলা হয়, মানব পাচার, ভিসা নবায়ন আর অবৈধ মুদ্রা পাচারের মামলায় আটক বাংলাদেশের সাংসদের নতুন নতুন রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে। তাঁর এসব কর্মকাণ্ডে কুয়েতের অন্তত সাতজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মদদ জুগিয়েছেন বলে তদন্ত কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন কুয়েত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিভাগের প্রধান আর কেউ কেউ অবসরে গেছেন। তাঁরা কাজী শহিদ ইসলামের সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ঘুষ ও উপহার নিয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন কুয়েতের তদন্ত কর্মকর্তারা।

কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন তদন্ত পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মুর্তজা মামুনকে রিমান্ডে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে ১১ বাংলাদেশি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র ওই সাংসদের বিরুদ্ধে ভিসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি কুয়েতে ভিসা নবায়নের জন্য বিপুল অঙ্কের টাকা দেওয়ার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য শোনার পর আদালত ওই নির্দেশ দিয়েছেন।

আরব টাইমস-এর খবরে বলা হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, বাংলাদেশি সাংসদ সম্প্রতি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে লাখ লাখ দিনার (১ দিনার ২৭৭ টাকার সমতুল্য) পাঠিয়েছেন কুয়েতের ব্যাংক হিসাব থেকে। কুয়েত থেকে বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে ওই লেনদেন বেশ সন্দেহজনক বলে তাঁরা ধারণা করছেন।

কুয়েতে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংসদের জড়িত থাকার বিষয়টি গত ফেব্রুয়ারিতে প্রচার করে সেখানকার গণমাধ্যম। তদন্ত কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, কুয়েতের গোয়েন্দাদের তালিকায় তাঁর নাম এসেছে, এটি নিশ্চিত হওয়ার পর কাজী শহিদ ইসলাম কয়েক মাস আগে কুয়েতে গিয়ে সেখান থেকে নিজের ব্যবসা গোটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে ৭ জুন তাঁকে আটক করে কুয়েতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

কুয়েতের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আটক বাংলাদেশের এই সাংসদ কুয়েতের তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বিপুল অঙ্কের ঘুষ দিয়েছেন। কুয়েতের ওই সরকারি কর্মকর্তা বাংলাদেশের সাংসদের কাজ পাইয়ে দিতেন এবং সাংসদের হয়ে মধ্যস্থতা করতেন। কুয়েতের তদন্তকারী সংস্থা এরই মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার এক নাগরিক এবং মিসরের অন্য এক নাগরিককে আটক করেছে। এই দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা আটক কাজী শহিদের হয়ে কুয়েতের সরকারি দপ্তরগুলোতে লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

এদিকে কুয়েতের সাংসদ ইউসুফ আল ফাদহালা, আবদেল ওয়াহাব আল বাবতেইন ও আবদুল করিম আল কান্ডারি তাঁদের টুইটে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারে জড়িত কুয়েতের সাংসদ ও কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাঁদের বিরুদ্ধে কুয়েত দুর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

অবশ্য কুয়েতের উপপ্রধানমন্ত্রী আনাস আল সালেহ গত শনিবার বলেছেন, দেশে সবচেয়ে বড় মানব পাচার চক্রের হোতা এশিয়ার একটি দেশের নাগরিককে আটক করা হয়েছে। মানব পাচারের অভিযোগের তদন্তে সরকারি কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী ব্যক্তি যে-ই হোন না কেন, তাঁদের বিচারের আওতায় আনা হবে। কাউকে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না। উপপ্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি কুয়েতের মন্ত্রিপরিষদবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন আনাস আল সালেহ।

শেয়ার করুন

Related News

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫