কালো যুবক আলম তুই সত্যি হিরো, তোর বইটা আমি কিনবোই

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
জনবহুল গিজগিজ করা মানুষের দেশে বিতর্কিত যে কেউ আমার দৃষ্টি কাড়ে। বাংলাদেশে নাম কুড়ানো সহজ মনে হলেও আসলে কঠিন। পজিটিভ নেগেটিভ যে কোন ভাবে সতের কোটি মানুষের দেশে লাইম লাইটে আসা সহজ কিছু না। যেমন ধরুন এরশাদ সাহেব। তার মতো মিডিয়া ফোকাস কোন নেতা পেয়েছেন বলে মনে হয় না। মৃত্যুর পরও লোকজন বলাবলি করছে, করোনার চরিত্র নাকি এরশাদের মতো। এতো ঘনঘন বদলায় যে কেউ ধরতেই পারে না।

এই যুবকটিকে আমি চিনি কিন্তু আমি নিশ্চিত ও আমাকে চেনে না। এটাই তার বাহাদুরি। তাকে চিনতে হয়। কেন চিনি তাকে?
এই যে আমরা জর্জ ফ্রয়েডের জন্য কালো মানুষের জন্য কান্না কাটি, কবিতা, গল্প, আলোচনা, গান করে সব ভাসিয়ে দিলাম, বুকে হাত দিয়ে বলেন তো আপনি কালো মেয়ে বিয়ে করতে রাজী ছিলেন, না আছেন? এখন যদি বিলাত ইউরোপের একজন লোক আর নাইজেরিয়ার একজন লোক আপনার সামনে দাঁড়ায় দেখবেন সাদার জন্য অটোমেটিক শ্রদ্ধায় একটা লেজ গজিয়ে গেছে আপনার। কলোনিয়াল স্বভাব। কালোটা গীর্জার পুরোহিত হলেও আপনি ভাবছেন, গুন্ডা হবে মনে হয় লোকটা।
কতো ধরণের বৈষম্য। তারুণ্যে কলকাতা গিয়ে শুনি তারকা ক্রিকেটার কপিল দেব ও গাভাস্কারেও তফাৎ আছে। অভিজাত বড়লোকদের তারকা গাভাস্কার কারণ তার শিক্ষা ও উঁচু নাক। মধ্যবিত্ত গরীবের তারকা পুলিশ থেকে আসা সাধারণ মানুষ কপিল দেব।

হিরো আলম কে আমার এ-সব মিলিয়েই মনে ধরেছিল। এই করোনাকালে নিজেরা তো বটেই পারলে অন্য দের ধরে বেঁধে গান গাইয়ে কবিতা পড়িয়ে হিট হবার কি চেষ্টা কি চেষ্টা। এই ছেলেটিকে কিছুই করতে হয় না। কালো লিকলিকে ভালো করে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারে না, কিন্তু যা করে তাই হিট। বলবেন, ওসব করে বা দেখে অকুলীন অজ্ঞাত কুলশীলেরা?
জনাব নিজের টা দেখেন। তিনশ লাইক পেলে আড়াই শ জন ঐ অজ্ঞাত অজ্ঞান লোকজনই দিয়েছে।

হিরো আলম একটা বই লিখেছে দেখলাম। বইটার কয়েকটা কোটেশান এমনঃ আমি আমার সমালোচকদের কে ডাবল স্যালুট দি। হেরা উঠতে বসতে ঘুমাতে ঘুম থেকে উঠে আমারে দেখে, দেখতে থাকে।

লিখেছে, আমি কালো, কুৎসিত কিন্তু এই চেহারা নিয়ে সেলিব্রিটি। আপনার চেহারা ভালো, লেখাপড়া জানেন তো আপনি পারলেন না ক্যান?

জানতে চেয়েছে, আমি পথশিশু পরিত্যক্ত ছেলে হয়ে চানাচুর বিক্রি করে, ডিশের ব্যবসা করে ভিক্ষা করে বড় হয়েছি। আত্মহত্যা করি নাই। আপনারা আত্মহত্যা করেন ক্যান?

সাংঘাতিক সত্যি ও বলে সে। তার ভাষায় সব কাজ টাকা দিয়া করলেও ইলেকশন করছি টাকা ছাড়া। কি নিদারুণ চপেটাঘাত।

এও বলেছে, যে যাই বলুক, সে তার টাকায় পথশিশু পরিত্যক্তা মা বিধবাও অসহায়দের জন্য কাজ করেই যাবে।

শরৎচন্দ্রের মেজ দা ছোটদের ওপর খবরদারি ফলাতেন। বীর বাহাদুর সাজা মেজ দা নকল বাঘ দেখে ভয়ে মূর্চ্ছা গেলে এক বাচ্চা ছেলেই সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছিল ওটা একটা নকল বাঘ।
হিরো আলম ও যেন তাই করে দেখালো। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো, কারা আসলে নকল।

কালো যুবক আলম তুই সত্যি হিরো। তোর বইটা আমি কিনবোই।

অজয় দাসগুপ্ত
লেখক: সিডনি প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক ও ছড়াকার।

শেয়ার করুন

Related News

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫