বঙ্গবন্ধু আমার কাছে সবচেয়ে শ্রদ্ধার: বার্নার্ড হেনরি লেভি

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত ‘বাংলাদেশ: নিরাশা থেকে আশায়’ শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে ফরাসি লেখক বার্নার্ড হেনরি লেভি। আগারগাঁও, ঢাকা, ১৩ মার্চ। ছবি: দীপু মালাকার
সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছিলেন ফরাসি দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবী বার্নার্ড হেনরি লেভি। স্বাধীন বাংলাদেশে একজন বিদেশি প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কয়েক মাস কাজও করেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধপরবর্তী কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি লেখেন নিজের প্রথম বই।

বার্নার্ড বলছেন, জীবনে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতার সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর কাছে সবচেয়ে শ্রদ্ধার। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের ‘মডেল’।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে শুক্রবার বার্নার্ড হেনরি লেভির বিশেষ একক বক্তৃতার আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ: নিরাশা থেকে আশায়’ শীর্ষক এ বক্তৃতার আয়োজন করা হয়।

ঢাকায় ফিরতে পেরে আনন্দিত জানিয়ে বক্তৃতার শুরুতেই বার্নার্ড বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ আমার কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য একটি চিঠি দিয়েছেন। ঢাকার ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে চিঠিটি শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দেব। এটি কোনো সাধারণ চিঠি নয়। বন্ধুরাষ্ট্র ফ্রান্সের হৃদয় থেকে আসা বিশেষ চিঠি।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিজের জীবনের ‘মডেল’ উল্লেখ করে বার্নার্ড বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে রয়েছে।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধকে ঘৃণা করতেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, মানবজাতির জন্য যুদ্ধ কোনো ভালো ফল বয়ে আনে না।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশে দেখা পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার ছবি এখনো চোখে ভাসে বলে জানান বার্নার্ড। তিনি বলেন, শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় এবং বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয় হয়েছিল বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের কাছে। সংখ্যায় বেশি হওয়ার পরেও পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করেছিল কারণ, তারা যুদ্ধক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের শক্তি অনুভব করেছিল।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর দ্বারা সংগঠিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশকে এখনই কাজ শুরু করার আহ্বান জানান বার্নার্ড। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর দ্বারা সংগঠিত গণহত্যার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই, এটি মেনে নিতে পারি না। এই গণহত্যা নথিভুক্ত হতে হবে। কতজন মারা গিয়েছিল, সেটির সঠিক সংখ্যা, তাদের নাম-পরিচয় জানতে হবেই।’

গণহত্যার শিকার ব্যক্তিদের তালিকা করতে আন্তর্জাতিক ইতিহাসবিদ, গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন বার্নার্ড হেনরি লেভি। তিনি বলেন, এই কাজে অনেক শ্রম ও অর্থের প্রয়োজন হবে, দীর্ঘ সময় লাগবে কিন্তু বাংলাদেশকে এই গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা হলে বাংলাদেশের পক্ষে সাক্ষী দেবেন বলেও জানান এই ফরাসি লেখক।

পাকিস্তানি বাহিনীর দ্বারা সংগঠিত গণহত্যার স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশকে আরেকটি যুদ্ধ করতে হবে বলে বার্নার্ড মনে করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ গণহত্যার স্বীকৃতি দাবি করলে পাকিস্তান চুপ থাকবে না। পাকিস্তানের মিত্র রাষ্ট্রগুলো চুপ থাকবে না। তবে বাংলাদেশও বেশ কিছু বন্ধুরাষ্ট্রকে পাশে পাবে। এর জন্য জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন হবে।

মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের প্রসঙ্গে বার্নার্ড বলেন, পুরো বিশ্বের সামনে বাংলাদেশ এখন মানবতার উদাহরণ। বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশ এভাবে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে, এটি জীবনের পরম শিক্ষা।

বক্তৃতায় বার্নার্ড অরি লেভি তরুণ বয়সে কেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দেখতে এসেছিলেন, যুদ্ধে শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনীকে বাংলাদেশের পরাজিত করার কারণ, বঙ্গবন্ধু কীভাবে তাঁর সারা জীবনের প্রেরণায় পরিণত হলেন—সেসব গল্প শোনান। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ, মুক্তমনা লেখক-প্রকাশকদের ওপর উগ্রপন্থীদের হামলা, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ইত্যাদি নানা বিষয় উঠে আসে বার্নাডের বক্তৃতায়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তৃতা অধিবেশন সম্পর্কে ধারণা দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারা যাকের। সূচনা বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত জেঁ-মারিন স্কুহ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ফরাসি ভাষায় প্রথম বই লিখেছেন বার্নার্ড। বাংলাদেশ নিয়ে এবং শতবর্ষ আগে জন্ম নেওয়া শেখ মুজিবুর রহমানের বিষয়ে বার্নাডের অনুভূতি জানার সুযোগ করে দিয়েছে এই বক্তৃতা।

বক্তার সঙ্গে উপস্থিত দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি এবং সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব জেনোসাইড অ্যান্ড জাস্টিসের পরিচালক মফিদুল হক। তিনি বলেন, বার্নার্ড হেনরি লেভি ১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করতে বাংলাদেশে আসেন। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে সাতক্ষীরা সীমান্ত অতিক্রম করেন তিনি এবং পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করেন।

যুদ্ধের পরে বার্নার্ড বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে একজন বিদেশি প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কয়েক মাস কাজ করেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধপরবর্তী কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি লেখেন তাঁর প্রথম বই ‘বাংলাদেশ, ন্যাশনালিজম ইন দ্য রেভল্যুশন’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫