সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারে আল্টিমেটাম

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলাকালে এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের আগামী শনিবারের (৮ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। অন্যথায় রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ আল্টিমেটাম বেঁধে দেন সাংবাদিক নেতারা। পেশাগত দায়িত্বপালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, তাদের হেনস্তা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও রংপুর সাংবাদিক সমিতি এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে ঘোষণা দেয়া হয়, রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিক নির্যাতন-নিপীড়ন ও হেনস্তা এবং তাদের কর্তব্যে বাধার প্রতিবাদে ও আহত সাংবাদিকদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে ডিইউজে।

ডিইউজের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেনের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য বলেন, আমি এখানে দাঁড়াতে চাইনি। সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদ করেও নির্যাতন বন্ধ হয়নি। এ যাবত যত সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন, কোনোটার বিচার কখনো দৃশ্যমান হয়নি। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় সাংবাদিক নির্যাতনের পরও বিচার পাইনি। আমরা অনশন পালন করেছিলাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু তিনি কথা রাখেননি।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা। সুশাসন, গণতন্ত্র সুরক্ষার জন্য সাংবাদিক সুরক্ষা দরকার। আগামী শনিবারের (৮ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে সাংবাদিক নির্যাতনে জড়িতদের গ্রেফতার করতে হবে। আহত সাংবাদিকদের কল্যাণ তহবিল থেকে চিকিৎসার খরচ দিতে হবে। শনিবারের মধ্যে বিচার না পেলে রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয় বরাবর কালো স্মারকলিপি দেয়া হবে।

ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, নির্যাতিত সাংবাদিকদের অপরাধ তারা সত্য সংবাদ সংগ্রহের কাজ করতে নেমেছিলেন। বাকস্বাধীনতার জন্য, গণতন্ত্র ও মানবতার জন্য সাংবাদিকরা লড়াই করে আসছি। কিন্তু আমরাই মার খাচ্ছি। যে কারণে গণমাধ্যমকর্মী আইন আজও পাস করা হয়নি। ওয়েজবোর্ড পাস করা হলেও তা কার্যকর করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমরা পদে পদে নির্যাতিত হচ্ছি, সব ক্ষেত্রেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিনীত অনুরোধ, কয়েকদিনের মধ্যে সাংবাদিক নির্যাতনকারী, হেনস্তাকারী, হামলাকারীদের গ্রেফতারে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যবস্থা নেবেন।

ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, সরকার যেসব ঘটনা সিরিয়াসলি নিয়েছে, সেসবের বিচার হয়েছে। সম্প্রতি সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যেন জেগে জেগে ঘুমাচ্ছেন। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার করবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতরা গ্রেফতার হবে।

রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, আমরা সাংবাদিকরা নির্যাতিত হচ্ছি। অথচ হামলাকারীরা ঘুরে বেড়াবে এটা হতে পারে না। একজন সাংবাদিককে কোপানো হবে, আবার হাসপাতালে গিয়ে হুমকি দেয়া হবে, এটা পুরো সাংবাদিক সমাজের জন্য লজ্জা। আমি মনে করি বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার সময় এসেছে। (ডিএসসিসি নির্বাচন চলাকালে গেন্ডারিয়ায় তিন সাংবাদিককে হেনস্তার দায়ে) বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতাসহ (শহীদুল ইসলাম খান রিয়াদ) অবিলম্বে জড়িতদের গ্রেফতার করা হোক।

রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাকসুদুর রহমান মাকসুদ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, আজ (ডিএনসিসি নির্বাচন চলাকালে মোহাম্মদপুরে হামলার শিকার) সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান সুমন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাকে যেভাবে কোপানো হয়েছে তা কোনোভাবে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। রাষ্ট্রযন্ত্র আমাদের নিরাপত্তা দিতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে।

ডিইউজের নির্বাহী পরিষদের সদস্য দুলাল খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী নন্দিত সারাবিশ্বে। কিন্তু তিনি আমাদের দিকে কেন তাকাচ্ছেন না? ছাত্রলীগসহ কতিপয় রাজনৈতিক নেতা সাংবাদিকদের সহ্য করতে পারেন না। শত্রু মনে করে পেটানো হয়, কোপানো হয়। মন্ত্রীরা বসে বসে হাসবেন না, সাংবাদিক পেটানো-কোপানোয় জড়িতদের গ্রেফতার করুন, শাস্তি বিধানে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। নইলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

ডিইউজে নেতা জাহাঙ্গীর খান বাবু বলেন, আমিও সেদিন বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়েছি। দয়াগঞ্জের এক কেন্দ্রে আমার মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। ওই কেন্দ্রে আরও পাঁচজন সাংবাদিককে হেনস্তা-অপদস্থ করা হয়েছে। সাংবাদিকরা কারও পক্ষের নন। সাংবাদিকদের পক্ষ একটিই, সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠা। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নেই এমন অবস্থান আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রচারের চেষ্টা হচ্ছে।

ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা রাস্তায় দাঁড়াতে চাই না। তখনই দাঁড়াই যখন আমাদের সহকর্মীরা নির্যাতিত হন। যারা হামলা করছেন, যারা বিচার না করে হাসছেন, তারা ভুল পথে হাঁটছেন। সাংবাদিকরা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছেন। নানাভাবে নির্যাতন-হয়রানি করা হচ্ছে। আজ বলতে চাই, যখনই নির্যাতন তখনই প্রতিবাদ। পুরো বাংলাদেশ আন্দোলনের মাধ্যমে অচল করে দেয়া হবে। সাংবাদিকদের অধিকার সাংবাদিকদেরই আদায় করতে হবে।

গেন্ডারিয়ায় ছাত্রলীগ নেতার হাতে হেনস্থার শিকার সাংবাদিক উজ্জ্বল হোসেন জিসান বলেন, অফিসের ও ইসির ইস্যু করা বৈধ কার্ড নিয়েও হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। শার্টের কলার ধরে টেনে বের করে দিয়েছে, মোবাইল কেড়ে নিয়েছে। এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার শর্তে মোবাইল ফিরিয়ে দিয়েছে। মাথানিচু করে আমাকে ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। এটা সাংবাদিক হিসেবে আমার জন্য লজ্জার। আমি এখনো ট্রমার মধ্যে আছি।

সাব এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি নাছিমা আক্তার সোমা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা রয়েছে। সাংবাদিককে দমন করার চেষ্টা বন্ধ করা না হলে দেশ পিছিয়ে যাবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় কঠোর পদক্ষেপ নেবেন তথ্যমন্ত্রী।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) নির্বাহী সদস্য শেখ মামুনুর রশিদ বলেন, সরকারি দলের ছত্রছায়ায়, আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সাংবাদিক নির্যাতন করা হচ্ছে। নির্মম পরিহাস হলো- একটি চক্র গণমাধ্যমের ওপর হামলা করছে, মদদ দিচ্ছে। সাংবাদিকদের যদি নিরাপত্তা দিতে না পারেন তাহলে মন্ত্রণালয় ছাড়েন, মন্ত্রিত্ব ছাড়েন। সাংবাদিক নির্যাতনকারীরা মঙ্গল গ্রহ থেকে আসেনি, তাদের গ্রেফতার করুন।

ডিআরইউ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুক্কুর আলী শুভ বলেন, সাংবাদিকরা নিউজ কাভার করতে গিয়ে কারও প্রতিপক্ষ হতে চান না। সত্যটিই তুলে ধরেন। সাংবাদিক নির্যাতনে জড়িতদের গ্রেফতারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আগামীতে যেন সাংবাদিকরা পেশাগত কাজ নিরাপত্তার সাথে কাজ করতে পারেন।

ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ উম্মুল ওয়ারা সুইটি বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সাগর-রুনি হত্যার বিচার আমরা পাইনি। আজ সুমনের রক্তাক্ত মুখ যতবার দেখেছি ততবার মনে হয়েছে নিজে রক্তাক্ত হয়েছি।

বিএফইউজের সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব অমিয় পুলক ঘটক বলেন, রিয়াদ নামে ছাত্রলীগ নেতা তিন সাংবাদিককে অবরুদ্ধ করেন, মোবাইল ফোন কেড়ে নেন, এটা কিন্তু অতীতের ঘটনার চেয়ে একটু ভিন্ন আঙ্গিকের। খবর প্রচার করা যাবে না, ভেতরে কী হচ্ছে তা বাইরে প্রচার যেন না হয় সেজন্য সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া যাবে না! পুলিশের উচিত ছিল অস্ত্রধারী রিয়াদকে গ্রেফতার করা, কিন্তু তারা তা করেননি।

ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি আবুল খায়ের বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা করাটা যেন সহজ হয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর থেকে যত সাংবাদিককে নির্যাতন, হেনস্তা, হত্যা করা হয়েছে কোনোটার বিচার হয়নি। আমরা চাই বিচার হোক। আশা করছি দ্রুত আসামিরা গ্রেফতার হবে।

বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়ে অন্যদের মধ্যে ডিইউজের সাবেক জনকল্যাণ সম্পাদক মেহেদি হাসান, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ, বিএফইউজের যুগ্ম-মহাসচিব আব্দুল মজিদ, সাব এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ কে এম ওবায়দুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
29  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫