স্টাফ রিপোর্টার ॥
গাজীপুর: বাবার মত শিক্ষক হবে এমন আশা নিয়ে ছেলের সব স্বপ্ন পূরণের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছিলেন বাবা। সে স্বপ্নের পথে ভাল করে পড়াশোনা চালিয়ে জেএসসি, এসএসসি ও এইসএসসিতে ভালো রেজাল্ট ছিল পুত্রের। উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকার ডেফোডিল ইউনিভার্সিটিতে। পুত্র যেন খারাপ বন্ধুদের সঙ্গে না মিশতে পারে সেজন্যে নিয়মিত খেয়ালও রাখতেন বাবা। অতিরিক্ত টাকা পেলে নেশায় আসক্ত হবে তা ভেবেই পরিমাণের বেশী টাকা দিতেন না একটি স্কুলের সহকারী শিক্ষক ওয়াদুদ ওরফে বাবুল মাস্টার। অতিরিক্ত টাকা না দেয়ায় রট দিয়ে পিটিয়ে বাবাকে মেরে ৯৯৯ কল দিয়ে পুলিশকে জানায় ছেলে রাতুল। এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুরে।
মঙ্গলবার গভীর রাতে উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ওই শিক্ষকের নাম আব্দুল ওয়াদুদ ওরফে বাবুল মাস্টার (৫৫)। তিনি একই গ্রামের মৃত আব্দুল রশিদ মাস্টারের পুত্র এবং পার্শ্ববর্তী কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও কোহিনুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। বাবুল মাস্টার ডান পায়ে কৃত্রিম পা লাগিয়ে চলাচল করতেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি লতিফপুর এলাকার তোতা মার্কেটে ফার্মেসীর ব্যবসা করতেন তিনি।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত তার পুত্র ইমরান হাশমি রাতুলকে (২৫) আটক করেছে পুলিশ। তিনি রাজধানীর উত্তরার ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
গোসিংগা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য খোরশেদ আলম (রফিক প্রধান) জানান, রাতুল অত্যন্ত ভদ্র ও মেধাবী একজন পুত্র। পড়ালেখার প্রতি তার গভীর মনোযোগ ছিল। অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপে মাঝে মধ্যে মানসিক সমস্যায় ভোগতো সে। মাথা খারাপ হলে রাগান্বিত ও অনেক সময় ঝিম ধরা বসে থাকতো। গতরাতে কি সমস্যার কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলেও ধারণা করেন তিনি।
স্বজনদের বরাত দিয়ে শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান জানান, কলেজের জন্য টাকা চাওয়া নিয়ে বাবা ছেলের মধ্যে গতরাতে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ঘরে থাকা লোহার রট দিয়ে বাবার মাথায় আঘাত করে ছেলে। এতে বাবা গুরুতর আহত হয়। পরে ছেলে ৯৯৯ কল দিয়ে এ সংবাদ পুলিশকে দিলে তাকে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ জয়নব জানান, রোগীর মাথায় আঘাত লাগায় অধিক পরিমাণে রক্তক্ষরণে মারা যান তিনি।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, বাবা নিহত ঘটনায় ছেলে রাতুলকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।