ঢাকাকে থামাল রাজশাহী

স্পোর্টস ডেস্ক ॥
অদ্ভুত ব্যাপারই বলতে হয়!

এই ম্যাচে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ৪৩৯টি ম্যাচ খেলা কিয়েরন পোলার্ড ছিলেন। ছিলেন দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ উপযোগী ব্যাটসম্যান বলে এই ফরম্যাট থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া নাম মার্শাল আইয়ুবও। ছয় বছর পর কাল তাঁকে বিপিএলের ম্যাচ খেলার সুযোগ দিল রাজশাহী কিংস। বিপিএলের গত আসরে মাত্র তিনটি ম্যাচ পাওয়া বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি অবশ্য একই দলের হয়ে এবার নিয়মিতই খেলছেন। দিনের শেষে ম্যাচভাগ্য গড়ে দেওয়া নামও পরের দুজনেরই, টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ প্রথমজন নন!

অথচ আগের চার ম্যাচেই আগে ব্যাটিং করে স্কোরবোর্ডে বিশাল সব পুঁজি (১৮৯, ১৯২, ১৮৩ ও ১৭৩) জমা করা পোলার্ডের দল ঢাকা ডায়নামাইটসের জন্য এই প্রথমবার রান তাড়ায় লক্ষ্যটা একরকম মামুলিই ছিল। তাদের লম্বা ব্যাটিং লাইনের জন্য তো ১৩৬ রান এমন কিছুই নয়। দুর্দান্ত বোলিং দিয়ে ঢাকার রান তাড়ার শুরুর আগের এ ধারণা ভুলই প্রমাণ করে শুধু ছাড়ল না রাজশাহী কিংস, ২০১৬-র চ্যাম্পিয়নদের এবার পাঁচ ম্যাচের মধ্যে দিল প্রথম হারের স্বাদও। মার্শালের ব্যাটে পাওয়া স্বল্প পুঁজিকেও পরে যথেষ্ট বলে মনে করানোয় বল হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেনও সানিও।

তাতেই আবার জয়ে ফিরল রাজশাহী কিংসও। ঢাকার দর্প চূর্ণ করে ২০ রানের জয় তাদের। ছয় ম্যাচ খেলে পাওয়া তাদের তৃতীয় জয়টি আবার জয়ের চেয়েও বড় কিছু। কারণ এই ম্যাচে রাজশাহীর খেলোয়াড়দের জার্সিতে নামাঙ্কিত ছিল তাঁদের মায়েদের নাম। ঢাকার বিপক্ষে তাই বিশেষ কিছু করার তাড়নাও ছিল মেহেদী হাসান মিরাজদের, ছিল পরাক্রমশালী ঢাকাকে হারিয়ে জয়টি মায়েদের উৎসর্গ করার প্রবল আকাঙ্ক্ষাও। উজ্জীবিত রাজশাহী কিংসের পারফরম্যান্সে থাকল সেটিরই প্রতিফলন।

এর আগে তারা একাদশেও অদল-বদল আনল অনেক। বিশেষ করে মমিনুল হক ও সৌম্য সরকারকে একাদশের বাইরে রেখে তারা ঢাকার বিপক্ষে নামল ২০১৩ সালে চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে নিজের সবশেষ বিপিএল ম্যাচ খেলা মার্শাল আইয়ুব ও শাহরিয়ার নাফীসকে নিয়ে। পরেরজনের জন্য এটি ছিল চলতি আসরের প্রথম ম্যাচও। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে তাঁদের অন্তর্ভুক্তিতে ঝুঁকি ছিলই। অথচ এই দুজনের ব্যাটেই কিনা এলো ম্যাচ সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ। এবং কিংদের স্বল্প পুঁজির ভিতও তাঁরা দুজনই।

নাফীসকে নিয়ে ওপেন করতে নামা অধিনায়ক মিরাজ (১) ফিরে যান শুরুতেই, আন্দ্রে রাসেলের ফুল টসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে। এর পরই নামা মার্শাল দারুণ সব শটে মাত করে দিতে থাকেন। নাফীস তেমন স্বচ্ছন্দ না হলেও ২০১৩-র ডিসেম্বরে সবশেষ টি-টোয়েন্টি খেলা মার্শালের ব্যাটে রাজশাহীর রানের চাকা গতিশীলই ছিল। হুক করে ছক্কা মারা আন্দ্রে রাসেলের একই ওভারে মারেন দুটি বাউন্ডারিও। যখন ফিফটিতে পৌঁছার অপেক্ষা, তখনই সুনীল নারিনের স্পিনে ফিরে যান ৩১ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৪৫ রান করা মার্শাল। একই ওভারে এক বল আগে নাফীসকেও (২৭ বলে ২৫) তুলে নেওয়া নারিন ওই ওভারেই তুলে নিতে পারতেন রায়ান টেন ডেসকাটকেও।

কিন্তু টিভি আম্পায়ার রিভিউতে ভুল সিদ্ধান্ত দেওয়ায় বেঁচে যাওয়া এই ডাচ ব্যাটসম্যান (১৬) সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি। এরপর বেশি দূর যেতে পারেনি রাজশাহীও। যত দূর গিয়েছিল, ঢাকাকে তত দূরও যেতে না দেওয়ার পণও পরে প্রতিফলিত তাদের বোলিংয়ে। ৩.১ ওভারেই ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ঢাকাকে চেপে ধরে তারা। ম্যাচে নিজের প্রথম বলেই সুনীল নারিনকে (১) থামান মিরাজ। ঝড় তোলার আগেই হজরতউল্লাহ জাজাইকে (৬) ইয়র্কারে বোল্ড করেন শ্রীলঙ্কান পেসার ইসুরু উদানা। নেমেই একটি করে ছক্কা ও বাউন্ডারি মারা আন্দ্রে রাসেলকেও (৮ বলে ১১) বাড়তে দেননি সানি। ২৩ রানেই ৩ উইকেট নেই ঢাকার।

সেখান থেকে বিপর্যয় সামলে নিতে থাকা সাকিব আল হাসান (১৮ বলে ১৩) ও রনি তালুকদারকে (২৬ বলে ১৪) পর পর দুই ওভারে তুলে নিয়ে জয়ের সম্ভাবনাও আরো জাগিয়ে তোলেন ম্যাচসেরা সানিই। ঢাকার জয়ের লড়াইয়ে ফেরার আশাও বিলীন হয়ে যায় বাউন্ডারি লাইনে ক্রিশ্চিয়ান জঙ্কার ও বদলি ফিল্ডার সৌম্য সরকারের যুগলবন্দিতে দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হওয়া পোলার্ডের (১৯ বলে ১৩) বিদায়ে।

পরিস্থিতি সামাল দেওয়ায় সবচেয়ে অভিজ্ঞ টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়ের ব্যর্থতার দিনে উজ্জ্বলতম ব্যাটসম্যান কিনা এই ফরম্যাটের অনুপযোগী বলে বিবেচিত হওয়া মার্শাল আইয়ুব! অদ্ভুত, অদ্ভুত!

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫