বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
পরকীয়া ফৌজদারি অপরাধ নয় বলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছেন। এসংক্রান্ত প্রায় দেড় শ বছরের পুরনো ইংরেজ শাসনকালে তৈরি একটি আইনকে অসাংবিধানিক বলে বাতিল করে দিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ইংরেজ আমলের ওই আইন স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর। নারীর স্বাতন্ত্র্য খর্ব করে। স্বামী কখনই স্ত্রীর প্রভু বা মালিক হতে পারেন না।
ব্রিটিশ আমলে তৈরি করা ১৮৬০ সালের আইনকে চ্যালেঞ্জ করে একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই গত বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালত এই রায় দেন। রায়ের পর আবেদনকারীর আইনজীবী রাজ কালিশ্বরম বলেন, ‘এই রায় ঐতিহাসিক। আমি খুশি।’
ওই আইনের ৪৯৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করলে এবং ওই নারীর স্বামীর অনুমতি না থাকলে পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল এবং জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে। এই আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন জনৈক যোশেফ শাইন।
৪৯৭ ধারাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রায় দানের সময় প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘এই আইন জোর করে চাপিয়ে দেওয়া এবং স্বেচ্ছাচারিতার সমান। এখন এটা বলার সময় হয়েছে যে কোনো নারীর স্বামী তাঁর প্রভু বা মালিক হতে পারেন না।’ কোনো নারী কখনই স্বামী বা কারো সম্পত্তি হতে পারেন না বলেও পর্যবেক্ষণ সাংবিধানিক বেঞ্চের।
রায়ে আরো বলা হয়েছে, কারো যৌনতার অধিকারকে আইনি পরিসরে বেঁধে দেওয়া ঠিক নয়। কাউকে সমাজের ইচ্ছানুযায়ী ভাবতে এবং কাজ করতে বাধ্য করার অর্থ তাঁর স্বাধীনতা খর্ব করা। এটা নারীর অধিকার রক্ষা এবং সমানাধিকারের পরিপন্থী। প্রধান বিচারপতি বলেন, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ এরই মধ্যে এ ধরনের আইন বাতিল করে দিয়েছে। পরকীয়াকে অপরাধ বিবেচনা করা হলে তা হবে উল্টো পথে হাঁটা এবং অসুখী মানুষকে শাস্তি দেওয়ার সমতুল্য।
আইনজীবী কালিশ্বরমের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠিত হয়। গত পহেলা আগস্ট শুনানি শুরু হয়। সরকারপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল পিঙ্কি আনন্দ। মামলাকারীর পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী রাজ কালিশ্বরম এবং সুবধত এমএস। গত ১ আগস্ট মামলার শুনানি শুরু হয়। শেষ হয় ৮ আগস্ট। সূত্র : এএফপি, এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা।