বর্ষায় ঝুঁকি, ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা স্থানান্তর

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥

কক্সবাজার: আসছে বর্ষাকাল। আর ওই মৌসুমে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় আর পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া এক লাখ ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা। সেজন্য নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিতে ৫০০ একর জমিতে ৩২ হাজার শেল্টার তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে ১২৩ একর জমিতে নির্মাণ করা আট হজার শেল্টারে ৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে সরিয়েও নেওয়া হয়েছে।

তবে সবাইকে নিরাপদ স্থানে নিতে জুনের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

জেলা প্রশাসন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বেসরকারি সেবা সংস্থা সূত্র জানায়, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা নতুন ও পুরনো মিলে ১১ লাখেরও বেশি। ২০টি ব্লকে এদের বসবাস। পাহাড় কেটেই এদের জন্য তৈরি করা হয়েছে ঘর।

বর্ষা মৌসুম যতোই ঘনিয়ে আসছে, ততোই বিপদের আশঙ্কা বাড়ছে রোহিঙ্গা পল্লীতে। একদিকে ভূমিধসের শঙ্কা, অন্যদিকে বন্যা, তার সঙ্গে রয়েছে ঘূর্নিঝড়েরও আশঙ্কা। এ কারণে ঝুঁকির সঠিক তথ্য বের করতে দীর্ঘ সময় নিয়ে গবেষণা করেন আমেরিকান ভূতত্ত্ববিদ ম্যারিয়া তাসভা।

তার গবেষণায় উঠে এসেছে এক লাখ ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। যাদের যেকোনো সময় প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তাই উদ্বেগ বাড়ছে তাদের নিয়ে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় এড়াতে না পারলে প্রায় ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বেন। যেখানে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুও চরম ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সব ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের বর্ষা মৌসুমের আগেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। সেই সুপারিশের প্রেক্ষিতেই শুরু হয়েছে তাদের সরানোর কাজ।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিকারুজাম্মান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ফ্ল্যাশ ফ্লাডের জন্য এক ধরনের ঝুঁকি আছে। তারপরে বন্যা, পাহাড় ধস এবং ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিও আছে। এসব মিলিয়ে এক লাখ ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা ঝুঁকির মধ্যে আছেন। তাদের জন্য ৫০০ একর জমিতে ৩২ হাজার শেল্টার তৈরি করার প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে কুতুপালং শিবিরের পাশে ১২৩ একর জমিতে আট হাজার শেল্টারে লোক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকিদের সরিয়ে নিতে জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

সরকারের পক্ষ থেকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, এ পর্যন্ত ঝুঁকিতে থাকা প্রায় ৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে কুতুপালং ক্যাম্পের পশ্চিম পাশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কুতুপালং ই ব্লকের মাঝি (দলনেতা) হাসিনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, পাহাড় ধস, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কথা হচ্ছে। কিন্তু এমন হলে তারা কোথায় যাবে জানা নেই।

এদিকে, রোহিঙ্গাদের বর্ষা ঝুকি সম্পর্কে সচেতন করতে নাটক, উঠান বৈঠক ও সচেতনতা সভা প্রায় প্রতিদিনই অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র মুখপাত্র যোশেফ সূর্য ত্রিপুরা বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গাদের সচেতন করতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে তারা কিভাবে তুলনামূলকভাবে ভালো থাকতে পারবেন, সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার লক্ষ্যেই এসব কাজ করা হচ্ছে। আর এই সচেতনতার কারণে অনেকেই নিজ উদ্যোগে অন্যত্র সরে যাচ্ছেন।

ইন্টারসেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) মুখপাত্র সালমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আসন্ন বর্ষা মোকাবেলায় এখন সরকার ও আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আমরা চরম ঝুঁকিতে থাকা ৫০ হাজার রোহিঙ্গাদের মধ্যে ইতিমধ্যেই ১৮ হাজার ২৪ জনকে সরিয়ে নিয়েছি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সচেতনতা তৈরিসহ নতুন করে শেল্টার নির্মাণ করে বর্ষার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।

বাংলানিউজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫