বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এ রুটে প্রায় ২৪ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। মাগুরা জেলাকে বাস্তবায়নাধীন পদ্মাসেতুর মাধ্যমে ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য স্থানের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যই এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানা গেছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২০২ কোটি টাকা। অনুমোদনের পর মে ২০১৮ থেকে ২০২২ সালে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, ৪৬ বছর আগে ফরিদপুর মধুখালী থেকে কামারখালী পর্যন্ত রেলপথ ছিল। কিন্তু এটা এখন আর ব্যবহার হয় না। তবে কামারখালী থেকে মাগুরা পর্যন্ত কোনো রেলপথ নেই। প্রকল্পের আওতায় মধুখালী থেকে কামারখালী পর্যন্ত বিদ্যমান রেলপথটি সংস্কার করে ডুয়েলগেজ এবং কামারখালী থেকে মাগুরা পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মিত হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জেল হোসেন বলেছেন, আমরা জেনেছি প্রকল্পটি একনেকের টেবিলে উপস্থাপন করা হবে। অনেক আগে থেকে কামারখালী পর্যন্ত রেলপথটি সচল ছিল। কিন্তু পরে বন্ধ হয়ে যায়। এখন আমরা মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ করবো। আমরা রেলপথটি নির্মাণের জন্য বৈদেশিক অর্থায়ন পাওয়ার চেষ্টা করছি। যদি না পাই তবে দেশীয় অর্থায়নেই তা বাস্তবায়ন করবো। এই রেলপথটুকু নির্মাণ করতে পারলে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকা ও মাগুরার মধ্যে রেল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। এই অঞ্চলের অধিক সংখ্যক প্রান্তিক মানুষ সরাসরি সুফল ভোগ করবেন।
রেলমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হচ্ছে। ১৮৬২ সালে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে রেলপথের যাত্রা শুরু। এরপর ১৮৭০ সালে গড়াই সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে ১৮৭১ সালের ০১ জানুয়ারি তা গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের বাঁশ, বেত, পাট বহনের গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৩২ সালের ০১ জানুয়ারি রাজবাড়ীর কালুখালী ঘাট পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন করা হয়। একই সময়ে আরও একটি শাখা লাইন মধুখালী থেকে কামারখালী পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়। এ সময় লাইনটি এলাকার আদিবাসীদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রায় ১০০ বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে রেলপথের মাধ্যমে এলাকাবাসী উপকৃত হতেন। কিন্তু ৪৬ বছর আগে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধ চলাকালীন এই শাখা লাইনটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার দেশের প্রতিটি জেলাকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেই আলোকে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। যাতে করে পদ্মাসেতু হয়ে মাগুরার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়।