বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য থাকছে প্রণোদনা

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥

ঢাকা: নির্বাচনী বছরে প্রণোদনা থাকছে দেশের পুঁজিবাজারের জন্য। বিনিয়োগকারী ও দেশের অর্থনীতির কথা চিন্তা করে আসছে বাজেটে কমানো হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের সুদ হার, করপোরেট ট্যাক্স ও লেনদেনের ওপর উৎসে কর। বাড়ানো হচ্ছে- লভ্যাংশের ওপর করমুক্ত সুবিধা এবং বন্ড খাতকে চাঙ্গা করতে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব র্বোড (এনবিআর) ও অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

শুধু তাই নয়, বাজেটের পর পুঁজিবাজারের কিভাবে স্থিতিশীল রাখা যায় সেই বিষয়ে প্লেয়ারদের (বাজারের উত্থান-পতনে যারা ভূমিকা রাখে) সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এ ছাড়াও পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এডি রেশিও (ঋণ-আমানত অনুপাত) না কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এছাড়াও সিআরআর সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব কয়টি উদ্যোগ পুঁজিবাজরের জন্য ইতিবাচক। এগুলোর দেওয়া হলে পুঁজিবাজারেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই মুহূর্তে বাজারে নতুন বিনিয়োগ দরকার। ফলে এমন প্রণোদনা দিতে হবে যা সরাসরি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। না হলে বিনিয়োগকারীরা এর সুফল পাবে না।

প্রণোদনার বিষয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স কমানোসহ পুঁজিবাজারের জন্য কিছু প্রণোদনা থাকছে। আর বাজেটের পর বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসা হবে। কিভাবে বাজারটাকে স্থিতিশীল রাখা যায়। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির বিনিয়োগের বড় উৎস হিসেবে কাজ করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা হবে। অর্থমন্ত্রীর কথা সঙ্গে একমত পোষণ করে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াও বলেন, ‘এবারের বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স কমানো হবে।’

এদিকে ২০১৮-১৯ সালের বাজেটে বিশেষ সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে রোববার (২৭ মে) দুপুরে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রতিনিধিরা।

তারা পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখা ও বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আরো বেশি আকৃষ্ট করতে আসছে বাজেটে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশের ওপর করমুক্ত সুবিধা দেওয়া, স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেকহোল্ডার কর্তৃক সিকিউরিটিজ লেনদেনের ওপর আরোপিত উৎসে কর কমিয়ে শূন্য দশমিক ০১৫ শতাংশ করা এবং ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী
স্টক এক্সচেঞ্জকে ৫ (পাঁচ) বছরের জন্য শতভাগ কর অবকাশ দেওয়ার সুপারিশ করা হবে।

এছাড়াও ডিএসইর শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশের ওপর কর মওকুফের দাবি জানাবে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন ডিবিএ প্রেসিডেন্ট মোস্তাক আহমেদ সাদেক।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পুঁজিবাজারে এখন আস্থা ও তারল্য সংকট চলছে। এর মধ্যে মূল সমস্যা আস্থা সংকট। এই সংকট কাটাতে এমন প্রণোদনা দিতে হবে, যার সুবিধা সরাসরি বিনিয়োগকারীরা পায়।

তিনি বলেন, লভ্যাংশের উপর কর কমানো উচিত। কারণ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো প্রতিবছর যে টাকা মুনাফা করে, তার উপর তারা ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত করপোরেট কর দেয়। আবার কর পরিশোধের পরই বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়। ফলে একই আয়ের উপর দুইবার কর নেয়া উচিত নয়। তারমতে, করপোরেট কর কিছুটা কমানো উচিত। তিনি বলেন, আগে যে সব প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, তার কতটা সরাসরি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত তা বিবেচনা করতে হবে।

বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য যত প্রণোদনা: স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর ৫ বছর কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করের হার ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে তালিকাভুক্ত অন্যান্যখাতের কোম্পানির করহার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ করমুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হতে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ পেলে তার জন্য কোনো কর দিতে হয় না। এছাড়া কোনো কোম্পানি বা অংশীদারী ফার্ম পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ হতে যে টাকা মুনাফা করে, তার ওপর থেকে কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে মুনাফা করলে উৎসে কর দিতে হবে না।

তবে এসব প্রণোদনার পর বাজারে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। গত তিন বছরে বাজার আর ঘুরে দাড়াঁতে পারেনি। প্রতিদিনই কমছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। ফলে তলানিতে চলেছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি। ফলে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ ধরনের আস্থা সংকট তৈরি হয়েছে।

বাংলানিউজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫