একটি সাক্ষাৎকার থেকেই ফাঁস মর্গান ফ্রিম্যানের কুৎসিত রূপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
হলিউডের ছবি দেখেন আর মর্গান ফ্রিম্যানকে চেনেন না এমন মানুষ পাওয়াই ভার। অবিশ্বাস্য কিছু ছবিতে অনবদ্য অভিনয়শৈলীর বদৌলতে তার পরিচিতি জন্মেছে আমেরিকার প্রতিটি ঘরে। তার ভরাট গলার স্বর মুহূর্তেই চিনে যায় কোটি মানুষ। অথচ, এতগুলো বছর পর ফাঁস হলো এই প্রবীণ তারকার এক কুৎসিত রূপ। তার বিরুদ্ধে অন্তত ৮ জন নারী পৃথকভাবে যৌন হয়রানি ও হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করেছে সিএনএন।
আমেরিকায় বিনোদন, রাজনীতি ও পেশাজীবী জগতে ‘মি টু’ আন্দোলনের যে ঢেউ এসেছে, তাতে এখন পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন খাতের বহু প্রভাবশালী মানুষ ভেসে গেছেন। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন সদ্য ৮০ বছর বয়সে পা রাখা মর্গান ফ্রিম্যানও। ইতিমধ্যে তার সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তবে তার এই ভিন্ন রূপ উন্মোচনের গল্পটা বেশ চমকপ্রদ। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, সিএনএন’র একজন বিনোদন সাংবাদিক গত বছর মর্গান ফ্রিম্যানের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে ওই সাংবাদিক ফ্রিম্যানের ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ দেখে এতটাই অস্বস্তি বোধ করেন যে, তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছেই বিষয়টি জানিয়ে আসেন। সে-ই শুরু এক যাত্রার। যেই যাত্রা সাঙ্গ হলো এক জঘন্য পরিণতিতে। খবরে বলা হয়, সিএনএন’র রিপোর্টার কোল মেলাস বৃহস্পতিবার এই রিপোর্ট প্রকাশ করেন। প্রায় ৬ মাস ধরে তিনি তদন্ত চালিয়ে গিয়েছিলেন। তদন্ত শেষে তিনি রিপোর্ট করলেন, তিনি বেশ কয়েকজন নারীর সন্ধান পেয়েছেন, যারা বিভিন্ন সূত্রে ফ্রিম্যানের সঙ্গে কাজ করেছেন। কাজ করতে গিয়ে ফ্রিম্যানের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনভিপ্রেত স্পর্শ থেকে শুরু করে অস্বস্তিদায়ক ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য- সবই করেছেন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। এই রিপোর্টের শুরুটা কোনো ফোন কল, ইমেইল বা চিঠির মাধ্যমে হয়নি। কেউ গোপনে সাংবাদিককে জানিয়ে দিয়ে যায় নি ফ্রিম্যানের এই ভিন্ন রূপের কথা। বরং সাংবাদিক মেলাস রিপোর্টের সূত্র পান খোদ নিজের কাছ থেকেই। গত বছর ‘গোয়িং ইন স্টাইল’ নামে ফ্রিম্যান অভিনীত একটি ছবির প্রচারণা অনুষ্ঠান কাভার করতে পাঠানো হয়েছিল কোল মেলাসকে। ওই সময় মেলাস ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। সেদিন ফ্রিম্যান তার শরীরের উপর থেকে নীচে তাকিয়ে বেশ কয়েকটি মন্তব্য করেন। একটি মন্তব্য এমন ছিল যে, ‘ইশ, আমি যদি ওখানে থাকতে পারতাম!’ এই মন্তব্য ভিডিওতেও ধারণ হয়ে যায়। এই ঘটনা মেলাসের কাছে এতটাই অস্বস্তিকর ছিল যে তিনি নিজের কর্মক্ষেত্র সিএনএন’কে বিষয়টি অবহিত করেন। সিএনএন বিষয়টি জানায় ওই ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্নার্স ব্রাদার্সকে। এখানে বলে রাখা ভালো, ওয়ার্নার ব্রাদার্সের মূল প্রতিষ্ঠান হলো টাইম ওয়ার্নার গ্রুপ। এই টাইম ওয়ার্নার গ্রুপেরই আরেক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হলো সিএনএন। ফলে সিএনএন থেকে যখন সহ-প্রতিষ্ঠান ওয়ার্নার্স ব্রাদার্সের কাছে বিষয়টি জানানো হলো, তখন তারা ফিরতি বার্তায় জানায়, এই অভিযোগের সত্যতা তারা নিশ্চিত করতে পারবে না। কারণ, ভিডিও ফুটেজে শুধু একটি মন্তব্যই রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া উপস্থিত অন্য কর্মীরা বলেছেন, তারা এমন কিছু দেখেন নি। পরবর্তীতে নিজের মাতৃত্বকালীন ছুটিতে চলে যান কোল মেলাস। নিজের ক্যারিয়ারে এই ৩১ বছর বয়সী নারী বেশ অনেক বছর ধরে বিনোদন জগত কাভার করেছেন। ফলে অন্য নারীদের সঙ্গে ফ্রিম্যানের এ ধরণের আচরণের কিছু কথা তার কানেও আগে এসেছিল। এবার তিনি নিজেই যখন এই পরিস্থিতির শিকার হলেন, মেলাস তাই সিদ্ধান্ত নিলেন ঘটনা তদন্ত করা দরকার। ছুটি কাটিয়ে অফিসে ফিরেই তিনি এই ইস্যুতে কাজ করা শুরু করলেন। বিভিন্ন সূত্র পাওয়ার চেষ্টা করলেন। ঠিক ওই সময়ই কর্মস্থলে নারীদের যৌন হয়রানির শিকার হওয়া নিয়ে ‘মি টু’ আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে শুরু করে। এই সব মিলিয়ে আরও জোরালোভাবে কাজ করতে শুরু করেন মেলাস। এভাবেই ধীরে ধীরে মোট ৮ জন নারীর সন্ধান পান তিনি। এই নারীরা বিভিন্ন চলচ্চিত্রের কাজে বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে মর্গান ফ্রিম্যানের সঙ্গে কাজ করার পরিস্থিতিতে ছিলেন। তখনই তাদের সঙ্গে ওই তিক্ত অভিজ্ঞতা ঘটে। কোনো রিপোর্টারের জন্য নিজের করা সংবাদে নিজেই একটা অংশ হওয়ার ঘটনা বেশ বিরল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই ধরণের ইস্যুতে মেলাসের করা রিপোর্টই এর একমাত্র উদাহরণ নয়। গত বছরের নভেম্বরে মার্কিন সংবাদ-ভিত্তিক ওয়েবসাইট ভক্সের সম্পাদক লরা ম্যাকগ্যান একটি নিবন্ধ লিখেন, যেখানে নিউ ইয়র্ক টাইমসের তারকা রিপোর্টার গ্লেন থ্রাসের সঙ্গে নিজের অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার বিবরণ দেন তিনি। নিজের পাশাপাশি আরও তিন নারীর বক্তব্য নিয়ে ওই নিবন্ধ প্রকাশ করেন তিনি। ওই ঘটনা নিউ ইয়র্ক টাইমস তদন্ত করে। পরবর্তীতে অশোভন আচরণের দায়ে থ্রাসকে দুই মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়। মর্গান ফ্রিম্যানের কাহিনী অবশ্য কোল মেলাস একাই লিখেন নি। তার সঙ্গে ছিলেন সিএনএন’র একজন সম্পাদক আন ফুং। পয়নার ইন্সটিটিউটের জার্নালিজম এথিক্স বিভাগের চেয়ারম্যান ইন্দিরা লক্ষ্মানন বলেন, মর্গান ফ্রিম্যানকে নিয়ে মেলাসের ওই প্রতিবেদনে নৈতিকতার সীমা লঙ্ঘিত হয় নি। নিজের প্রতিবেদনে তিনি সম্পূর্ণভাবে একজন ভিকটিম হিসেবে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি মনে করেন, ওই প্রতিবেদনের শুরুতে ছোট একটি সম্পাদকীয় নোট থাকলে আরও ভালো হতো। সূত্র: মানবজমিন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫