‘এমপি বদিই বাংলাদেশে ইয়াবা এনেছে’

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
মাদক নির্মূল অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রতি রাতেই ৮-১০ জন মারা যাচ্ছেন। অথচ যাকে নিয়ে শুরু থেকে আলোচনা, সেই আব্দুর রহমান বদির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। বদি কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়া এলাকার এমপি।

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, আমরা কী বলব, আপনি টেকনাফ থানার ওসি আর বিজিবির এই ব্যাটেলিয়নের কমান্ডারের সঙ্গে কথা বলেন, তারাই বলে দেবে বাংলাদেশে ইয়াবা কে এনেছে। ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এমপি আছেন বদি সাহেব। আমরা দেখি যারা ইয়াবা আমদানির মূল কারিগর, তারা সবাই এমপি সাহেবের আশেপাশে থাকে। আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকে। এমপি তাদের শেল্টার দেন। তাহলে মানুষ কী বুঝবে? আপনি টেকনাফে এসে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। শতকরা ৯৫ জনই বলবেন এমপি বদির মাধ্যমেই ইয়াবা এসেছে বাংলাদেশে৷ মূল হোতাদের এখন এলাকায় দেখছিই না।

মাদকবিরোধী অভিযানের আগে পাঁচটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার সমন্বয়ে মাদক ব্যবসায়ী ও পৃষ্ঠপোষকদের একটি তালিকা তৈরি করে সরকার। সেই তালিকায় মাদকের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছে আব্দুর রহমান বদির নাম। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকায় এক নম্বরে আছে বদির নাম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা টেকনাফের শীর্ষ মানব পাচারকারীর তালিকাতেও তার নাম ছিল। দেশে মাদক ইয়াবার গডফাদার ও ব্যবসায়ীর তালিকায় টানা ১০ বছর ধরে ছিল বদির নাম। কিন্তু গত মার্চ মাসে একটি সংস্থার তালিকা থেকে সেই নাম বাদ দেওয়া হয়। তবে সেই তালিকায় বদির পাঁচ ভাই, এক ফুপাতো ভাই, দুই বেয়াই ও এক ভাগ্নের নাম আছে। তালিকায় সব মিলিয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে কক্সবাজারের ৮ উপজেলার ১ হাজার ১৫১ জনের নাম আছে৷ এদের অনেকেই এখন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বদির বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী আমরা পাইনি। শুধু নাম থাকলে তো চলবে না। প্রমাণ করতে হবে যে তিনি অপরাধী। আমরা তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাইনি। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেব৷।

মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গত ছ’দিনে অন্তত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ সব ‘বন্দুকযুদ্ধের’ যে বিবরণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে আসছে, তা মোটামুটি একই রকম। তাদের দাবি, অভিযানের সময় মাদক চক্রের সদস্যরা গুলি চালালে পালটা গুলিবর্ষণ হয়। আর তাতেই এদের মৃত্যু ঘটে। তবে বিভিন্ন সময়ে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ এসেছে যে, তাদের স্বজনদের ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো অবশ্য প্রথম থেকেই এ সব বন্দুকযুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে।

বদি বলছেন, কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে আমি কোনো ইয়াবা ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছি, তাহলে আমি পদত্যাগ করব। বরং আমিই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সারাক্ষণ যোগাযোগ করি মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে কী করা যায়, সে বিষয়ে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বলেন, যেখানে তালিকার এক নম্বর থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, সেখানে নির্বিচারে বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবর্হিভূত হত্যা মানুষের কাছে সন্দেহের সৃষ্টি করে। এভাবে চললে মূল উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। এই মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন। তাই মাদকের বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে তা দমন করছে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন মানবাধিকার কর্মীরা। সূত্র: আমাদেরসময়, ডয়চে ভেলে

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫