এখনও ক্ষতিপূরণ বঞ্চিত তাজরীনের ১২০ শ্রমিক

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
রাজধানীর অদূরে সাভারের নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশন্স গার্মেন্টস অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ বছর হলো শুক্রবার। পাঁচ বছর পরও আহত ১২০ শ্রমিক এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি বলে দাবি শ্রমিক অধিকার সংগঠনগুলোর। এছাড়া নিহত কিছু শ্রমিকের পরিবারও এখনও ক্ষতিপূরণের বাইরে রয়ে গেছেন। অন্যদিকে পাঁচ বছর শেষ হলেও এ ঘটনায় দায়ী কারখানার মালিকসহ অন্যদের বিচার কার্যক্রমও শেষ হয়নি এখনও।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তোবা গ্রুপের ওই কারখানায় আগুনে নিহত হন ১১২ জন। আহত হন ১০৪ জন শ্রমিক। যদিও শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারখানাটিতে ১১শ’র বেশি শ্রমিক কাজ করতেন।

তাজরীন গার্মেন্টসের তিন তলায় কাজ করতেন মমতাজ নামে এক শ্রমিক। আগুন লাগার পর তিন তলার জানালা দিয়ে নিচে লাফ দিয়ে প্রাণে বেঁচে যান। তবে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান। পরদিনই তার ভাইয়ের সহযোগিতায় বাগেরহাটে নিজ গ্রামে চলে যান। এর পর সাভারে এলেও কোন ক্ষতিপূরণ পাননি। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, কারখানায় চাকরি নিলেও বেশিদিন কাজ করতে পারিনা। কিছুক্ষণ কাজ করার পর মাথা ঝিম ঝিম করে। পা ব্যথা করে। কিছু খেয়াল রাখতে পারিনা। গত মাসেও একটি কারখানায় চাকরি নিয়ে ২০ দিন পর ছেড়ে দিয়েছি। বিভিন্ন সময় চেষ্টা করলেও কোন ক্ষতিপূরণ পাইনি। একটি মেয়ে নিয়ে এখন সাভারে অবস্থান করা এই মমতাজ বলেন, আহত হওয়ার পর স্বামীও আরেকটি বিয়ে করেছে। মেয়েকে নিয়ে কষ্ট করে চলতে হচ্ছে।

শাহনাজ নামেও এক শ্রমিক ক্ষতিপূরণ পাননি বলে জানিয়েছেন। তার আইডি কার্ডটি এখনও আছে। শ্রমিক নেতা ও জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ক্ষতিপূরণ না পাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা ১২০। এ তালিকা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে। অনেক শ্রমিক আহত হয়ে বাড়ি চলে যাওয়ায় তারা ক্ষতিপূরণের অর্থ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশুও জানান, তাদের হিসেবে এখনও শতাধিক শ্রমিক ক্ষতিপূরণ পাননি। শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও কারখানা মালিকসহ দায়ীদের শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেছে তার নেতৃত্বাধীন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম। সংবাদ সম্মেলনে তাজরীনের মালিককে গ্রেফতার ও বিচার করা, নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে ৪৮ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, আহতদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া, নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও সব কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি তোলা হয়।

বিচার হয়নি পাঁচ বছরেও: অগ্নিকাণ্ডের পর মামলা হলেও বিচারকাজ এখনও শেষ হয়নি। প্রধান আসামি করা হয় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেনকে। ওই মামলায় ৬ মাস জেল খেটে এখন জামিনে রয়েছেন তিনি। তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতাও জেল খেটে এখন জামিনে। অন্য আসামিরা হলেন- শামীম, স্টোর ইনচার্জ আল আমিন, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু ও এ্যাডমিন অফিসার দুলাল এবং সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান।

এ মামলায় ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ৭জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ১০ জানুয়ারি পরবর্তী স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী ও তাজরীনের চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার মিতাসহ ১৩ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

শ্রমিক সংগঠনের নানা কর্মসূচি: তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়া উপলক্ষ্যে শ্রমিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। সাভারের নিশ্চিন্তপুরে শ্রমিক সমাবেশ ছাড়াও রাজধানীর প্রেসক্লাসে সমাবেশ, মানববন্ধন ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া জুরাইন কবরস্থানেও নিহত শ্রমিকদের স্মরণে অনুষ্ঠান করা হবে। এ তালিকায় রয়েছে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, কনফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন। এছাড়া সাভারে আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন করবে জাতীয় গামেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগ।সূত্র : অনলাইন ইত্তেফাক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫