লিটনের ক্রিকেট বুদ্ধি ও কর্তব্য জ্ঞান কম : সালাউদ্দীন

স্পোর্টস ডেস্ক ॥

লিটন দাস কেমন ব্যাটসম্যান? ঢাকা তথা দেশের ক্রিকেট নিয়মিত দেখেন, অনুসরণ করেন, খুঁটিনাটি খোঁজখবর যাদের নখোদর্পনে; তারা এর জবাব দিতে গিয়ে খানিক থমকে দাঁড়াবেন। মাঠের সাথে যাদের আত্মিক সংযোগ, শুধু জাতীয় দলের খেলা হলেই স্টেডিয়ামে ছুটে যান, তারা এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে খানিক ধাঁধায় পড়ে যাবেন। লিটন ভালো না খারাপ ব্যাটসম্যান? তা বলতে গিয়ে দ্বিধা-সংশয় জাগবে।

তবে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট, জাতীয় লিগ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল) দেখতে যারা নিয়মিত মাঠে যান, লিটন দাসের ব্যাটিং দেখেন-তারা সবাই একবাক্যে বলবেন, দারুণ ব্যাটসম্যান। ক্রিকেটের পরিভাষায় ‘ড্যাশিং।’ ক্রিকেট ব্যাকরণের প্রায় শটই আছে তার হাতে। উইকেটের সামনে ও দু’দিকে সমান স্বচ্ছন্দে খেলার পর্যাপ্ত সামর্থও আছে।

তার যে এই গুণগুলো আছে, তার প্রামাণ্য দলিলও বিদ্যমান। বাংলাদেশ জাতীয় যুব (অনূর্ধ-১৯) দলের হয়ে দু’দুটি যুব বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লিটন দাস দেশের ক্রিকেটে নিকট অতীত ও সাম্প্রতিক সময়ের হিরো। গত কয়েক বছর ধরেই তার ব্যাটে চার ও ছক্কার ফল্গুধারা। রানের নহর।

২০১৪-২০১৫ মৌসুমে দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মূল আসর জাতীয় লিগে রংপুরের হয়ে অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুন্য দেখিয়ে হাজার রান (১০২৪) করে বসেন লিটন। এ বছর জানুয়ারিতে বিসিএলে পূর্বাঞ্চলের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ক্যারিয়ারে প্রথম ডাবল সেঞ্চুুরিও হাঁকান। সেটাই শেষ নয়। এক জোড়া সেঞ্চুরি সহ ২০১৬-২০১৭ ‘র ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও সর্বাধিক (১৪ খেলায় ৭২৪ রান) রান লিটনের।

কিন্তু কেন যেন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপলে সে লিটন অন্য লিটন বনে যান। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের নির্ভীক-সাহসী, আত্মবিশ্বাসী, আত্ম-প্রত্যয়ী সেই লিটন যেন কোথায় হারিয়ে যান। কেমন যেন নিষ্প্রভ মনে হয়।

তার প্রমাণ ,১২ ওয়ানডেতে রান মোটে ১৬৫। সর্বোচ্চ ৩৬। গড় ১৫.০০। স্ট্রাইকরেট ৭৬.৭৫। টি-টোয়েন্টিতে তো আরও খারাপ অবস্থা। চার খেলায় রান ৫৮। সর্বোচ্চ ২২। গড় ১৪.৫০ । স্ট্রাইকরেট ১১১.৫৩।

ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে যার ব্যাট খোলা তরবারি, সেই লিটন শুধু জাতীয় দলের পক্ষেই নয় , দেশের মাটিতে হওয়া টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজির সবচেয়ে জাকজমকপূর্ণ আসর বিপিএলেও এখন পর্যন্ত সুপার ফ্লপ।

আগের বার (২০১৬ আসরে) ১১ খেলায় করেছিলেন সাকুল্যে ৬৪। সর্বোচ্চ ২৪*। গড় ১০.৬৬। স্ট্রাইকরেট ১০৪.৯১। এবারের অবস্থা গতবারের মত অত খারাপ না। আবার ভালোও না। শুরু করছেন ভালো। কিন্তু যখনই মনে হচ্ছে সেট হয়ে গেছেন, ঠিক তখনই কোন না ভুল করে আউট হয়ে ফিরে আসছেন । পাঁচ খেলায়ই (২১+২৩+২৩+২১+১১ = ৯৯ রান) স্টার্ট পেয়েছেন। কিন্তু তারপরই তালগোল পাকিয়ে ফেলা।

ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট ও জাতীয় লিগে যিনি সাহসী যোদ্ধা। বিসিএলে যার ব্যাট খোলা তরবারি। যার ব্যাট মাঠে আলো ছড়ায়, প্রতিপক্ষ বোলারদের শাসন করে। সেই লিটন জাতীয় দল কিংবা বিপিএলের মত আন্তর্জাতিক আসরে কেমন যেন আড়ষ্ট। শ্রী-হীন ব্যাটিং। হতচ্ছিরি অবস্থা!

কেন এমন হয়? কি কারণে লিটন দাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে বার বার ব্যর্থ? তা নিয়ে ভক্ত ও সাধারণ অনুরাগিদের মনেও নানা প্রশ্ন। জল্পনা-কল্পনা। দেশের কোচদের প্রায় সবাই লিটন দাসকে ভালো ব্যাটসম্যান বলে জানেন। মানেনও। তার প্রতিভা ও ব্যাটিং সামর্থ নিয়ে এখন পর্যন্ত অতি বড় সমালোচক ও বিশ্লেষকও প্রশ্ন তোলেননি।

তবে এবার বিপিএলে লিটন যার কোচিংয়ে খেলছেন, সেই মোহাম্মদ সালাউদ্দীন জাতীয় দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে লিটনের ব্যাটিং শৈলির একটা ত্রুটি বের করেছিলেন। জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে একটা টেকনিক্যাল পয়েন্ট নির্দেশ করে সালাউদ্দীন বলেছিলেন, লিটন উইকেটসোজা ডেলিভারি, বিশেষ করে লেগ-মিডল স্টাম্পের ওপরে থাকা বলগুলোকে একটু বেশী ফাইনারে (সূক্ষ্ণ কোণে) খেলার চেষ্টা করে।

স্কোয়ার লেগ ও মিড উইকেটের বদলে তার চিন্তা ও চেষ্টা থাকে যতটা সম্ভব ফাইন লেগে বল পাঠাতে। তাতে কব্জি বেশী ঘোরে। পা একটু বেশী সরে যায়। এ কারণেই লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে বেশী জড়িয়ে পড়েন তিনি।

সত্যিই তাই। লিটন ভিতরে আসা লেগ-মিডল স্টাম্প সোজা বল পেলেই তাকে কব্জির মোচরে ফাইন লেগে ঘোরানোর চেষ্টা করেন। বেশী ভিডিও ক্লিপ্স দেখে সব নামী ও প্রতিষ্ঠিত বোলাররা তার ঐ দূর্বলতা চিহ্নিত করে তাকে চট জলদি সাজঘরে ফেরত পাঠাচ্ছেন। সে কারণেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লিটন বেশীর ভাগ এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়েছেন।

এবার সেই লিটনকে বিপিএলে নিজ দলে চোখের সামনে নেটে, প্র্যাকটিসে আর মাঠে দেখে ধারণা আরও পরিষ্কার হয়েছে সালাউদ্দীনের। জাগো নিউজের সাথে আলাপে লিটনকে নিয়ে এবার খোলামেলা মন্তব্য করেছেন সালাউদ্দীন। তার চোখে, লিটন দাস খুবই মেধাবি ক্রিকেটার। হাতে অনেক মার আছে। ক্রিকেট ব্যাকরণের প্রায় শট খেলার সামর্থও আছে।

কিন্তু সালাউদ্দীনের মনে হয়, লিটনের এপ্লিকেশনে সমস্যা আছে। ক্রিকেট বোধ-বুদ্ধি কম। বিশেষ করে টিম ও গেম প্ল্যান মাথায় রেখে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। তাই জায়গামত সমস্যা হচ্ছে। তারপরও এ টপ অর্ডারের ওপর আস্থা হারাননি কুমিল্লা কোচ।

তাইতো মুখে এমন কথা, ‘এখনো লিটনের ওপর আমার অনেক আস্থা আছে। বিশ্বাস আছে। ভরসা আছে। লিটন ট্যালেন্টেড ক্রিকেটার। তার ব্যাটিং সামর্থ নিয়ে কোনই প্রশ্ন নেই আমার। তবে এখনো সে বুঝতে পারে না, ব্যাটিংটা আসলে কিভাবে করতে হয়। এতদিন ধরে জাতীয় দলে খেলার পর এ সেন্সটা প্রবল হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু হয়নি। কেন হয়নি, সেটাই প্রশ্ন আমার।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘কোন পরিবেশে, কার সাথে, কোন উইকেটে কিভাবে খেলতে হয়, তার রোলটা কি; আমার মনে হয় এসব বোঝায়ও তার কিছুটা সমস্যা আছে। তার হাতে প্রচন্ড স্ট্রোক আছে। উইকেটের চারিদিকে শটস খেলতে পারে। কিন্তু জায়গামত সে সামর্থের যথাযথ প্রয়োগটা কবে ঘটাতে শিখবে বা পারবে; সেটাই দেখার।’

কুমিল্লা কোচের ধারণা, সেটা লিটনের ওপরই নির্ভর করবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কোচরা টেকনিক দেখিয়ে দিতে পারে, কিন্তু রান কিভাবে করতে হয় সেটা নিজের ওপর। তবে আমার বিশ্বাস সে খুব তাড়াতাড়িই বুঝতে পারবে। তাকে এসব শিখতে হবেই। যত শীঘ্রই শিখবে, তত তার নিজের জন্যই মঙ্গল।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫