স্টাফ রিপোর্টার ॥
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান শিগগিরই হচ্ছে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্র্যাকের সিনিয়র পরিচালক আসিফ সালেহ্। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে কূটনৈতিক সমাধানে আরও সময় লাগবে। অন্তত এক বছরের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে আসিফ সালেহ্ এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন। নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে যেসব দেশি-বিদেশি ত্রাণ সংস্থা কাজ করছে ব্র্যাক তাদের মধ্যে অন্যতম। এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে যদি আরো র্দীঘমেয়াদে বাংলাদেশে রাখা হয় তবে ত্রাণ সংস্থাগুলো কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পরবে?
এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ সালেহ্ বলেন, যখন রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে স্থায়ী জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে তখন আরও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। তৃতীয় মেয়াদে যে জিনিসগুলো প্রধান হয়ে দেখা দেবে তার মধ্যে অন্যতম হলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রোহিঙ্গারা যেখানে বসবাস করছে সেখানে এখন কোনো আইন-কানুন নেই। সেখানে নারীরা রয়েছে, তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। তাদের নিরাপত্তার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। এ পর্যন্ত বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাহায্যর অঙ্গিকার করেছেন। ফেব্রুয়ারির পরে কী হবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যেসব ত্রাণ সংস্থা ক্যাম্পগুলোতে কাজ করছে তারা কী রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ সময় রাখতে ও সুযোগ-সুবিধা দিতে প্রস্তুত?
জবাবে তিনি বলেন, সংস্থাগুলো সেভাবে তৈরি না। কিন্তু অপশন বি হিসেবে তারা চিন্তা ভাবনা করছে। এই বিষয়ে তাদের তৈরি থাকতে হবে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করতে যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তার সংস্থান কীভাবে হচ্ছে?
আসিফ সালেহ্ বলেন, আমরা প্রথমে নিজেদের অর্থায়নে কাজ শুরু করেছি। আমাদের বার্ষিক বাজেটের মধ্যে ৭০ শতাংশ নিজেদের তহবিল অর্থায়ন করি। মানবিক কারণে আমরা নিজেদের অর্থায়ন থেকে শুরু করেছি। তারপর আমরা বাইরে থেকে তহবিল আনার চেষ্টা করেছি। আমাদের ৬ মাসের বাজেট ছিল ১৯ মিলিয়ন ডলার, আমরা সেখান থেকে ১১ মিলিয়ন ডলারের একটা কমিটমেন্ট পেয়েছি। আশা করছি আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পারবো এবং এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি পুরো তহবিল উদ্ধার করার।
বিভিন্ন দেশে যখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার সাখে মানবিকভাবে বিপর্যস্ত শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করার চ্যালেঞ্জ কতোটা কঠিন?
জবাবে তিনি বলেন, যেসব বিশেষজ্ঞরা সিরিয়া, নাইজেরিয়ার বিপর্যয়ে কাজ করেছেন তারা রোহিঙ্গা বিপর্যয় দেখে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় বলে বর্ণনা করেছেন। কারণ, এতো দ্রুত এতো বেশি জনগোষ্ঠী এতো ছোট জায়গায় আসে নি। সেক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করার চ্যালেঞ্জ বেশ সাংঘাতিক। এখানে যারা স্থানীয় জনগণ, তাদের সংখ্যা ছিল সাড়ে তিন লাখ, কিন্তু এখন সাড়ে ছয় লাখ নতুন মানুষ এসেছে। স্থানীয় জনসংখ্যার তুলনায় শরণার্থীরাই বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় জনগণ সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। স্থানীয় জনগণ যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো তা ধীরে ধীরে কমে গেছে। কারণ, তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রীর দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। তাই, এখন আমরা পরিকল্পনা করছি স্থানীয় লোকদের নিয়ে কাজ করার।
এ অবস্থায় স্থানীয়দের সাথে রোহিঙ্গাদের সর্ম্পকের অবনতি ঘটতে পারে?
প্রশ্নের জবাবে আসিফ সালেহ্ বলেন, আশঙ্কা রয়েছে। এই কারণেই স্থানীয় জনগণ নিয়ে কাজ করা খুবই জরুরি। স্থানীয় জনগণ রোহিঙ্গাদের এত কাছাকাছি থাকার কারণে তারা স্বাস্থ্য বিপর্যয় নিয়ে চিন্তিত। পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়ও হচ্ছে।