প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াল যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥

অবশেষে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াল যুক্তরাষ্ট্র। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর বিবিসির।

এর আগে ইতালির সিসিলি শহরে জি-৭ সম্মেলনে জলবায়ু চুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেননি ট্রাম্প। তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে এক সপ্তাহ সময় নিয়েছিলেন। সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে দেয়া এক বক্তৃতায় প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।

ট্রাম্প মনে করেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের উপর অর্থনৈতিক বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই এ বিষয়ে ন্যায্য চুক্তির জন্য তিনি বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অবশ্য আগে থেকেই ধারণা করা হয়েছিল যে, ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। কারণ গত বছরের নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ই তিনি জলবায়ু চুক্তিকে ‘ধাপ্পাবাজি’ বলে উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রকে এ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

হোয়াইট হাউসে দেয়া বক্তৃতায় ট্রাম্প বলেন, ‘আমি প্যারিসকে নয়, পিটসবুর্গের মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করতে নির্বাচিত হয়েছি। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যে চুক্তিতে আমেরিকার স্বার্থ দেখা হয়নি সেই চুক্তি থেকে আমরা নাম প্রত্যাহার করে নেব। অথবা এটি নিয়ে পুনরায় আলোচনায় বসতে হবে।’

পষরসধঃব

ট্রাম্পের মতে, এটি এমন একটি চুক্তি যার কারণে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কিন্তু লাভবান হবে অন্যসব দেশ। এই চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপিতে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হবে এবং চাকরি হারাবেন প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ।

চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, তিনি এমন একটি চুক্তি চান যা হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরো বেশি ন্যায্য।

ট্রাম্প বলেছেন, প্যারিস চুক্তিতে মার্কিনীদের উপর অতিরিক্ত অর্থনৈতিক বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এই চুক্তি মানলে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে অসুবিধায় পড়বে ও বাধাগ্রস্ত হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। প্যারিস চুক্তি ২০১৫ সালে হওয়ার সময় ওবামা সামনে থেকে এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। এক বিবৃতিতে ইইউয়ের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই দিনটি বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের জন্য ব্যথিত হওয়ার দিন।

প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও ১৮৭টি দেশ মিলে অঙ্গীকার করেছিল যে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা তারা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম রাখবে; এমনকি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু এসব চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াল অর্থনীতিতে শক্তিধর দেশটি।

এদিকে, সিসিলিতে জি-৭ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি কার্যকরের বিষয়ে জোটভুক্ত ছয়টি দেশ একমত হলেও তাদের সঙ্গে ট্রাম্প ঐক্যমত না জানানোয় এই ইস্যুতে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত হচ্ছে চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

পষরসধঃব

অপরদিকে, বুধবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জলবায়ু চুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

নিউ ইয়র্কে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে গুতেরেস বলেন, যদি কোনো সরকারের এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকে তবে এ বিষয়ে সমঝোতার প্রয়োজন রয়েছে। অন্যদের উচিত এ বিষয়ে আরো শক্তিশালী বন্ধন গড়ে তোলা এবং একত্রে থাকা।

তিনি বলেন, এখানে একটাই সহজ বার্তা আর তা হলো ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছে। হয় আপনাকে ট্রেনে উঠতে হবে নয়তো পেছনে পড়ে থাকুন।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ব এখন একটি বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। এই মুহূর্তে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন করা খুবই অপরিহার্য।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করেই এসব কথা বলেছিলেন। জি-৭ সম্মেলনের বাকি ছয়টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আস্থা রাখলেও দেশটি শেষ পর্যন্ত জলবায়ু চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিল।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫