স্টাফ রিপোর্টার ॥
পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে নির্মম হত্যাকান্ড ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বাবা, মা, তিন ভাইসহ ১৮ জন আপনজনকে হারিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সব হারিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশের ফিরেছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
নির্বাসনে থেকেই আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। স্বজন হারানো গভীর শোক নিয়ে দেশে ফেরার পরই ঘরে- বাইরের নানা ষড়যন্ত্রের তীর শেখ হাসিনার দিকে ছুটে আসে। আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে সহযোগিতার পরিবর্তে দলটির কিছু শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করার চক্রান্তে মেতে উঠেন।
দলটির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করেন। সে সময় দলের বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতাই আব্দুর রাজ্জাকের পক্ষ্যে অবস্থান নেন। ভেঙ্গে যায় আওয়ামী লীগ। আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বাকশাল গঠিত হয়। সরকারবিরোধী আন্দোলনের চেয়ে বাকশালের ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগ শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠে। কেবল কেন্দ্রীয় নেতারাই নন জেলা কমিটিগুলোর অনেক শীর্ষ নেতা বাকশালে যোগ দেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নেতিবাচক বক্তব্য দিয়ে তারা গ্রামগঞ্জ চষে বেড়ান। এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবিচল থাকেন। ঘরে- বাইরের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন শেখ হাসিনা। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে পরাজয়ের পর আবারও আওয়ামী লীগে ভাঙ্গণ দেখা দেয়। প্রভাবশালী নেতা ড. কামালের নেতৃত্বে কিছু নেতা আওয়ামী লীগ ছেড়ে গণফোরাম নামে নতুন দল গঠন করেন। ১৯৯৪ সালে বাকশাল বিলুপ্ত করে আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বাধীন নেতারা আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। দীর্ঘ ২১ বছর সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কিছু নেতা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চক্রান্ত অব্যাহত রাখেন। দলটির প্রভাবশালী নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠিত হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে চরম ভরাডুবি হয় আওয়ামী লীগের। ক্ষমতাসীন চারদলীয় জোট সরকারের নির্যাতনে আবারও বৈরি পরিবেশের মূখে পড়ে আওয়ামী লীগ। হত্যা, অগ্নিসংযোগ, মিথ্যা মামলা, ধরপাকড়ে অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনার ওপর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হন অসংস্য নেতাকর্মী। অল্পের জন্য প্রানে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। তবে তার দু’টি কান মারাত্মক ক্ষতিগ্র¯’ হয়।
এক এগার সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করতে নতুন খেলায় মেতে উঠেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। গ্রেফতার করে কারাবন্দি করা হয় শেখ হাসিনাকে। এই দু:সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীরা শেখ হাসিনার পক্ষ্যে দৃঢ় অবস্থান নেন। শেখ হাসিনাকে ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না তারা এমন জোরালো দাবি জানায় তারা। শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে গণসাক্ষর অভিযানে নামে তৃর্ণমূল কর্মীরা। অবশেষে মুক্তি পান শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিশাল জয় পায় আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। ২০১৪ সালে দশম নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশে বিএনপি- জামায়াতের সহিংস আন্দোলনের সময় আবারও আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীরা রাজপথে প্রতিরোধে নেমে আসে।
পরপর দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেও তৃর্ণমূল কর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। দলের এমপিরা ত্যাগীদের বাদ দিয়ে নবাগতদের অধিক সুবিধা দিচ্ছেন এমন অভিযোগ সারাদেশ জুড়েই। কিছু না পেলেও ত্যাগী কর্মীরা অতীতের ন্যায় আগামীতেও শেখ হাসিনার নির্দেশ পালন করবে। নৌকাকে জয়ী করতে তারা আকারও নিজেদের উজাড় করে দিবে এমন আওয়াজ রয়েছে সাধারণ আওয়ামী লীগ কর্মীদের মূখে।