সাফাতের বন্ধুদের নাম শুনেই হতবাক গোয়েন্দারা

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
বিত্তশালী পিতার সন্তান সাফাত আহমেদ। টাকা খরচ করেন দু’হাতে। চড়েন নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়িতে। সার্বক্ষণিক সশস্ত্র দেহরক্ষীবেষ্টিত সাফাত যখন যা চেয়েছেন তাই পেয়েছেন। ভালো লাগার অনেককেই তিনি বাহুবন্দি করেছেন। এ তালিকায় হাইপ্রোফাইল বান্ধবীদের কেউ বাদ যাননি। ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে প্রায় প্রতি রাতেই তিনি রুমপার্টিতে মেতে থাকতেন। সাফাতের বন্ধুদের তালিকায় দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, রাজনৈতিক নেতা, সংসদ সদস্য এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার সন্তানও রয়েছেন।

বনানীর হোটেল রেইনট্রিতে দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় রিমান্ডে থাকা সাফাত আহমেদ এভাবে মুখ খুলছেন। তবে তার বন্ধুদের নাম শুনে হতবাক গোয়েন্দারা। এমনকি কয়েকজনের নাম শুনে কিছুটা বিব্রতবোধ করছেন তারা।

এছাড়া গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে তার বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের সোনা চোরাচালানের নানা চাঞ্চল্যকর তথ্যও দিচ্ছেন তিনি।

তবে সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফের কাছ থেকে যেসব তথ্য মিলছে তা নিয়ে শেষ পর্যন্ত কতদূর এগোতে পারবেন সেটি নিয়েও সংশয়ে আছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কেউ কেউ।

এদিকে সূত্র বলছে, ধর্ষণের মামলায় প্রাথমিকভাবে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে রেইনট্রি হোটেলের মালিকপক্ষও দায় এড়াতে পারছে না। এই অপরাধের সহযোগী হিসেবে তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

বিষয়টি আঁচ করতে পেরে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছেন বনানীর রেইনট্রি হোটেলের মালিক ঝালকাঠি-১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য বিএইচ হারুনের চার ছেলে। শনিবার থেকে তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।

দুই তরুণী ধর্ষণ মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা রোববার  বলেন, রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে জিজ্ঞাসাবাদে সাফাত আহমেদ চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য দিয়েছেন।

তিনি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানান, এ ধরনের পার্টি তাদের প্রথম নয়। আর এসব পার্টিতে কী হয় তা জেনেশুনেই তাদের বান্ধবীরা উপস্থিত থাকতেন।

কিন্তু রেইনট্রি হোটেলের ঘটনায় কেন তারা (দুই তরুণী) অভিযোগ করল সে বিষয়টি তিনি নাকি বুঝতে পারছেন না (!) তবে এ ঘটনার জন্য নাঈম আশরাফের (আবদুল হালিম) বাড়াবাড়িকে বেশি দায়ী করেন সাফাত।

এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার রাতে দুই তরুণীর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টি সাফাত অনেকটা স্বাভাবিক বিষয়ের মতো স্বীকার করেন। বরং সেটিকে কেন ধর্ষণ বলা হচ্ছে তা নিয়ে রীতিমতো তিনি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পাল্টা প্রশ্ন করছেন।

জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ঘটনার সরল স্বীকারোক্তি দিতে গিয়ে সাফাত আহমেদ বলেন, গুলশান-বনানী ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন তারকা হোটেল কিংবা অভিজাত গেস্ট হাউসগুলোর কোনো না কোনোটিতে তারা রাত কাটিয়ে থাকেন।

নির্ধারিত হোটেলগুলোতে তাদের জন্য বিশেষ রুম কিংবা ভিআইপি স্যুট বুক করা থাকে। জন্মদিন ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কথা বলে তারা রুমপার্টির আয়োজন করেন।

নামিদামি ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ ছাড়াও ইয়াবা ও সিসার ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকে তাদের এসব নিশুতি পার্টি। এছাড়া এসব পার্টিতে তারা প্রকাশ্যে পছন্দের বান্ধবীদের বেছে নেন।

সাফাত গোয়েন্দাদের জানান, মূলত নাঈম আশরাফের মাধ্যমেই তিনি মডেলসহ সুন্দরী তরুণীদের সংগ্রহ করতেন। পার্টি চলত গভীর রাত পর্যন্ত। কখনও কখনও ভোরের আলোয় ভাঙত তাদের মিলনমেলা।

প্রথম সারির সুন্দরী মডেল-আইটেম গার্লরা ছাড়াও মাঝে মধ্যে এ সারির বিদেশি অতিথিদের আনা হয় এসব জলসায়।

গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে সাফাত বলেন, ২০১৫ সালে একটি অনুষ্ঠানে নাঈম আশারেফর সঙ্গে তার পরিচয় হলেও ২০১৬ সালের মার্চ মাস থেকে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। এক পর্যায়ে নাঈম আশারফ (আবদুল হালিম) তার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে যায়। এমনকি তার বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদও তাকে (নাঈম আশরাফ) খুব পছন্দ করতেন। গুলশান ও বনানীর কয়েকটি রেস্টুরেন্টে ছিল তাদের নিয়মিত আড্ডা।

বনানীর সেরিনা, সুইট ড্রিমসহ ১১ নম্বর সড়কের একটি রেস্টুরেন্টে সন্ধ্যার পর বসত তাদের নিয়মিত গাঁজা ও ইয়াবার আড্ডা। এসব রেস্টুরেন্টে মদের বার না থাকলেও সবই থাকত সেখানে।

প্রসঙ্গত, ২৮ মার্চ বন্ধুর সঙ্গে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই তরুণী।

এ ঘটনায় ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ, ছেলের বন্ধু নাঈম আশরাফ (সিরাজগঞ্জের আবদুল হালিম) ও সাদমান সাকিফসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুই ভিকটিম।

মামলার অপর আসামি পলাতক মোহাম্মদ হালিম ওরফে নাঈম আশরাফ, ড্রাইভার বেলাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এছাড়া এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রেইনট্রি হোটেলের অপারেশন ইন্টারন্যাল এক্সিকিউটিভ ফারজান আরা রিমিসহ চার কর্মচারীকে তাদের হেফাজতে নিয়েছেন।   যুগান্তর

শেয়ার করুন

Related News

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫