তলিয়েছে ফসল, দিশেহারা পদ্মাচরের কৃষক

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ॥

সন্তানের মতো যতœ করে ফলানো ধান আর কদিন পরেই কাটা হবে। ঘরে ঘরে চলছে পাকা ধান তোলার প্রস্তুতি। ঠিক সেই মুহূর্তে চোখের সামনে পাকা ও আধা পাকা ধান পানিতে তলিয়ে যেতে দেখে দিশেহারা পদ্মাচরের কৃষকরা।

অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং ভাটির পানি প্রবেশ করায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে কুষ্টিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় পদ্মা চরের কয়েকশ একর জমির ধান তলিয়ে গেছে।

রোববার সকালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের পুরাতন কুষ্টিয়ার পদ্মানদীর পাড়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাটি এলাকার পানিতে পদ্মার চরের কৃষকের স্বপ্ন মাটিতে মিশে যেতে বসেছে। গত তিন দিনে দূর্গত এলাকায় কেউ কোনো খোঁজ খবর নিতে যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। তবে শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুষ্টিয়া কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

স্থানীয়রা জানান, গত সপ্তাহ থেকে কাল বৈশাখী ঝড় এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত শুরু হয়। নদীতে সামান্য পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করলেও কৃষকেরা তা নিয়ে বিশেষ কিছু ভাবেনি। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং ভাটি থেকে (যমুনা নদীর) পদ্মা নদীতে পানি প্রবেশের ফলে অসময়ে নদীর চরগুলোতে অতিরিক্ত পানি প্রবেশে চরের ধান তলিয়ে যেতে শুরু করে।

কৃষকেরা কিছু পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে পারলেও অধিকাংশ ধানই নদীতে তলিয়ে যায়। বর্তমানে যে ধানগুলো দেখা যাচ্ছে তার অধিকাংশই নুয়ে পড়েছে। আর বাকিগুলো কাটতে ব্যস্ত এলাকার কৃষকেরা। চরের তিন পার্শ্বে পানি শুকনা স্থানগুলো দিয়ে পায়ে হেটে অথবা নৌকায় করে বুক সমান পানিতে ধান কাটছে কৃষকেরা।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, ঘরে ধান তোলার অপেক্ষায় ছিলাম। এভাবে নদীর পানিতে ধান তলিয়ে যাবে তা ভাবেনি। আমরা কৃষক, আমাদের অভাব এবার যাবে না। চরের এক মাত্র ফসল ঘরে তুলতে না পারায় অনেক কৃষককেই সর্বশান্ত হয়ে পড়তে হবে। কেননা দাদনের টাকা নিয়ে বীজ, সার এবং দিন মজুরের খরচ ব্যয় করতে হয়েছে। এখন ধান না পাওয়ায় কৃষকেরা কী করবে তা ভেবে কূল পাচ্ছে না।

শঁংযঃরধ

কৃষক সাত্তার শেখ জানান, পদ্মার চরে হাজার হাজার একর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছিল। এখানকার চাষিরা ধানের উপযুক্ত পরিচর্যা করে আসছিল। অধিকাংশ, ধানই পাকা শুরু করেছিল আবার কিছু ধান পাকার উপক্রম হয়েছিল। এবার ধানের বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেধে চাষিরা ধান ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আকস্মিক পানি আসায় সব ধান তলিয়ে গেছে। আবার যাওবা আছে তা কাটার জন্য দিনমজুর পাওয়া দুষ্কর।

কৃষক মুক্তার হোসেন জানান, যতটুকু পারা যায় উদ্ধার করার চেষ্টা করেছি। আর সম্ভব হচ্ছে না, সবই ডুবে গেল। আমাদের পাকা ধান চোখের সামনে নদীতে চলে গেল। আমরা সর্বশান্ত হয়ে গেছি।

এদিকে ঘটনার এক সপ্তাহ পর সংবাদ কর্মীদের কাছে শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুষ্টিয়া কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এম সাহাবউদ্দীন, অতিরিক্ত উপ পরিচালক (শষ্য) ড. হায়াত মাহামুদ ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিম হোসেন।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. এম সাহাবউদ্দীন বলেন, কয়েক দিনের অতি বর্ষণে যমুনা নদীর পানি বেড়ে গেছে। যার কারণ পদ্মা নদীর পানি যমুনার দিকে ধাবিত হতে পারছে না। পদ্মানদীর পানি যেতে না পারায় আকস্মিকভাবে নদীর পানি বেড়ে গেছে। যার কারণে নদীর চরে কিছু পাকা ও অর্ধপাকা ধান তলিয়ে গেছে।

শুধু কুষ্টিয়া সদর নয় জেলার খোকসা, কুমারখালী, মিরপুর ও ভেড়ামারা এলাকার বিস্তৃর্ণ পদ্মার চর এবং পদ্মার কূলবর্তী এলাকার হাজার হাজার একর জমিতে প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে ধান উৎপাদন হয়। নদীর কূলবর্তী এলাকার কৃষকেরা বছরের এসময়টি এই ধান নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন এবং ওই ধান ঘরে তুলে তা বাস্তবায়ন করে কিন্তু এবার কী করবে তা ভেবে দিশেহারা কৃষকেরা।

শেয়ার করুন

Related News

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫