হয় ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব, নয়তো চীনের অধীনতা: ভারতীয় গণমাধ্যমের পরামর্শ প্রতিবেদন

বাংলাভূমি ডেস্ক ॥
ভারতের গণমাধ্যম র‌্যাডিফ.কম এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে ‘পরামর্শ’ দিয়ে বলা হয়েছে, একটি ছোট দেশ  হিসেবে কৌশলগত স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশের ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক কার্যকরী। যদিও বাংলাদেশ সহজেই চীনের সহযোগিতা পাবে ও ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু তখন দেশটি ঋণের বোঝায় জর্জরিত এবং চীনের অধীন একটি দেশে (স্যাটেলাইট স্টেট) পরিণত হবে।

এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ইতোমধ্যে পতনের কিছুটা দৃশ্যমান হচ্ছে, কারণ দেশটির ৮০ ভাগ সামরিক সরঞ্জামই চীন থেকে ইতোমধ্যে আমদানি করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, ৭ই এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রটোকল ভেঙ্গে তাকে স্বাগত জানান। শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ এর যোগ্য নন।

কোনো দেশে সফরের সময় ওই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান চাপের মধ্যে থাকেন। ভৌগিলিক রাজনীতিতে অনেক চাওয়া-পাওয়া থাকে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময়ও এর ব্যতিক্রম হয় নি। ভারতের সঙ্গে হাসিনার সম্পর্ক বাংলাদেশের মানুষ ও দেশটির বিরোধি দল বেগম খালেদা জিয়ার কাছে একটি বড় ইস্যু। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে চাপে আছেন। খালেদা জিয়া তিস্তা ইস্যুকে শেখ হাসিনার অপারগতা বলে সুযোগ নিবেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার জয়ের জন্য ভারতের তাকে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করে সমর্থন দিতে হবে।

সফরে অবকাঠামো ও বিদ্যুত খাতে ১৭টি প্রকল্পে দুই দেশের মধ্যে ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রতিরক্ষা সরজ্ঞাম বিষয়ক ঋণ চুক্তি হয়েছে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের। ৯ মিলিয়ন ডলারের ১৩টি ব্যবসায়িক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় দুই দেশ ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। সহযোগিতামূলক সম্পর্ক থেকে দুই দেশের সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কে রুপান্তরিত হয়।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ভারত-বাংলাদেশের জন্য একটি সাধারণ বিষয় হল চীনের ছায়া ও প্রভাব। বাংলাদেশ চীনকে না রাগিয়ে ভারতের প্রতি উষ্ণ সম্পর্কের হাত বাড়াতে চায়। অন্যদিকে চীন ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক সহযোগি। বার্ষিকভাবে ১২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক লেনদেন হয়, তাই ভারত কখনো চীনকে বাণিজ্যিকভাবে না বলতে পারবে না। তবে ভূ- কৌশলগত রাজনীতিক অঞ্চল বাংলাদেশের উপকূলকে ভারত চীনের প্রভাব মুক্ত রাখতে চায়।

অন্যদিকে উত্তর পূর্বাঞ্চলিয় রাজ্যগুলো নিয়ন্ত্রণ ও সেগুলোতে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য ভারতের বাংলাদেশকে প্রয়োজন। এটি মোদির কাছে এটি বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক চুক্তিকে পুরো ভারত স্বাগত জানিয়েছে। এর মাধ্যমে পাশ্ববর্তী ভৌগোলিক অঞ্চলগুলোতে ভারত বাজার সম্প্রসারিত হল। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ভারত নজর রাখতে পারবে।

ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৩-১৪ সালে ৬.৬ বিলিয়নের বাণিজ্য সম্পন্ন হয়। তবে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি প্রবল। ভারত বাংলাদেশে রপ্তানি করে ৬.১ বিলিয়ন এবং বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে মাত্র ৪৬২ মিলিয়ন। ভারতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে এই অসমতা দূর করার আহ্বান জানান।

সামরিক চুক্তি ছাড়াও দুই দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। সাইবার নিরাপত্তা, তথ্য প্রযুক্তি, সীমান্ত সহযোগিতা, যোগাযোগ, সন্ত্রাসবাদরোধ, বিদ্যুত প্রকল্প, গণমাধ্যম ও বিচারিক কার্যক্রম বিষয়ক ১১টি চুক্তি ও ২৪টি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। দুই দেশ সীমান্ত সন্ত্রাসবাদ রোধে ঐক্যমতে পৌছে এবং অবৈধ অভিবাসন সমস্যা নিরসনে কাজে অঙ্গীকার করে। তবে আলোচনার সব বিষয়বস্তু জনসমক্ষে প্রকাশিত হয় নি। এই সফর সত্যিকার অর্থেই দুই দেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছে। বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ এখন সীমার মধ্যে আছে।

শেয়ার করুন

Related News

সাম্প্রতিক সংবাদ

আর্কাইব

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

প্রধান সম্পাদক : সাঈদুর রহমান রিমন
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ নজরুল ইসলাম আজহার

সার্বিক যোগাযোগ : চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩॥

গাজীপুর অফিস : এ/১৩১ (ইকবাল কুটির) হাবিব উল্লাহ স্মরণী, জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০০॥

হটলাইন: ০১৭৫৭৫৫১১৪৪ ॥ সেলফোন : ০১৭১৬-৩৩৩০৯৬ ॥ E-mail: banglabhumibd@gmail.com

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত বাংলাভূমি ২০০৯-২০২৫